রবিবার রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছিল প্রান্তিক স্টেশন থেকে সন্ধে সাতটায় লাস্ট লোকাল ট্রেন ছেড়ে যাবে পঞ্চাশ শতাংশ যাত্রী নিয়ে। এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সোমবার থেকেই নানান বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
হাওড়া শাখায় একাধিক স্টেশনে শুরু হয়ে যায় যাত্রী বিক্ষোভ। পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং যাত্রী স্বাচ্ছন্দের কথা মাথায় রেখে শেষ পর্যন্ত লোকাল ট্রেনের বিধি শিথিল করল নবান্ন।
শেষ পর্যন্ত সোমবার সাতটার আগেই নবান্ন নতুন একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তা থেকে জানা যায় সোমবার থেকেই রাত ১০টা পর্যন্ত প্রান্তিক স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেন পাবেন যাত্রীরা।
রবিবার ঘোষণা করা হয়েছিল, সন্ধে ৭ টার পর আর মিলবে না লোকাল ট্রেন। এদিকে সোমবার থেকেই লোকাল ট্রেন বিধি চালু হতেই সন্ধের পর স্টেশনে বাড়তে থাকে নিত্যযাত্রীর ভিড়।
করোনা বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ৭ টার আগে ট্রেন ধরে বাড়ি ফেরার একটা তোড়জোড় দেখা যায় যাত্রীদের মধ্যে। বিভিন্ন সূত্র মারফৎ সেই খবর পৌঁছয় নবান্নে। তারপরেই ট্রেন বিধিতে শিথিলতা আনতে তৎপর হয় রাজ্য সরকার।
সরকারপক্ষের যুক্তি ছিল, রবিবারের ঘোষণা অনুযায়ী রাত দশটা থেকে নাইট কারফিউ চালু করতে হলে রেল সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত লোকজন বাড়ি ফিরতে পারবে না রাত দশটার মধ্যে।
এই কারণেই রবিবার ঘোষণা করা হয়েছিল, সোমবার থেকে সন্ধে সাতটার পরে আর চলবে না লোকাল ট্রেন। আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর এই বিধি।
রবিবার বিকেলে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী ঘোষণা করেন, সন্ধে সাতটায় ছাড়াবে লাস্ট লোকাল। তারপর থেকেই নানা প্রশ্ন উঠছে। অনেকেই জিজ্ঞেস করতে থাকেন, প্রান্তিক স্টেশন নাকি বাড়ির সামনের স্টেশন।
এই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। এমনকী এই নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় নানারকম মিম বানানো হতে থাকে। হতে থাকে নানান ঠাট্টা তামাসা।
অন্যদিকে সোমবার বিকেল হতে না হতেই হাওড়া এবং শিয়ালদহের বিভিন্ন শাখায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। ট্রেন না পাওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এমনকী ছোটখাট দুর্ঘটনারও খবর আসতে থাকে।
শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার বারুইপুর এবং মেইন শাখায় ব্যারাকপুরে ট্রেন থেকে পড়ে আহত হয়েছেন যাত্রীরা। একই ঘটনা ঘটেছে দমদম ও বনগাঁ শাখাতেও। রবিবারের ঘোষিত বিজ্ঞপ্তির জেরে রেল দফতরকেও নানার প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়।
সোমবার দুপুরে রেল দফতর জানায়, রবিবার যে টাইম টেবিল অনুযায়ী ট্রেন চলছে, সোমবার থেকেই একই টাইম টেবিলেই ট্রেন চলবে। শুধু সন্ধে সাতটার পর ছাড়বে না আর কোনও লোকাল ট্রেন।
তবে যে ট্রেন সন্ধে ৬-৫৫তে শিয়ালদহ ছেড়ে বেরোবে, সেই ট্রেন যত সময়ই লাগুক না কেন তার গন্তব্যে পৌঁছবে। যদি দেখা যায় হাওড়া থেকে সন্ধে সাতটায় কোনও বর্ধমান লোকাল রয়েছে, তা ওই সময়েই ছাড়বে এবং বর্ধমানে পৌঁছবে। ।
বর্ধমান থেকে হাওড়াগামী লোকাল ট্রেনের ক্ষেত্রে একই ব্যাপার হবে। হাওড়া এবং শিয়ালদহ সমস্ত শাখাতেই লাস্ট লোকালের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটবে।
এদিকে সোমবার বিকেলেই জনমতের চাপের বাধ্য হয়ে নবান্ন নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে লোকাল ট্রেন সম্পর্কে। সেখানে বলা হয়েছে, সাতটার পরিবর্তে প্রান্তিক স্টেশন থেকে লাস্ট লোকাল ট্রেন ছাড়বে।
তবে যাত্রীর সংখ্যা ধারণক্ষমতার পঞ্চাশ শতাংশ হতে হবে। সোমবার পূর্ব রেলের আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী জানান, আমাদের হাতে ট্রেন রয়েছে, স্টাফ রয়েছে।
নবান্ন থেকে নির্দেশ আসার পরই রাত দশটা পর্যন্ত ট্রেন চালানোর বন্দোবস্ত করা হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত রাত দশটা পর্যন্ত যেরকম টাইম টেবিলে লোকাল ট্রেন চলে, সেভাবেই চলবে।