• facebook
  • twitter
Thursday, 21 November, 2024

অবিবাহিত অবস্থায় পরীক্ষা, ৯ বছর পর ছেলেকে কোলে নিয়ে নিয়োগপত্র নিলেন ঋতুপর্ণা

সোমবার সকাল ১১টায় এসএসসি অফিসে কাউন্সেলিং শুরু হয়। ফলে, প্রার্থীদের ভিড়ে এসএসসি অফিসকে এদিন সরগরম থাকতে দেখা গিয়েছে। এসএসসির আধিকারিকদের কর্মতৎপরতা, চাকরিপ্রার্থীদের চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আনন্দের মধ্যে দিয়ে এদিন এসএসসি অফিস কার্যত উজ্জ্বল ছিল।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। ৯ বছর পর অবশেষে স্কুলের চাকরি পেলেন উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা। যে বছরের পরীক্ষা দিয়েছিলেন, তখন অবিবাহিত ছিলেন ঋতুপর্ণা সাহা। এখন ছেলেকে কোলে নিয়ে চাকরির নিয়োগপত্র নিলেন তিনি।

নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে, খুশির হওয়া বয়ে গিয়েছে ঋতুপর্ণার পরিবারে। তিনি জানিয়েছেন, শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হল তাঁর।  সোমবার ঋতুপর্ণাদেবী ছেলেকে কোলে নিয়ে বিধাননগরের এসএসসি’র দপ্তরে আসেন। সেখানেই স্কুলের নিয়োগপত্র হাতে পান তিনি।

নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে ঋতুপর্ণা জানিয়েছেন, ‘পরীক্ষা ভালো দিয়েছিলাম, তাই আশা ছিল চাকরি পাবই। অবশেষে  সেই চাকরি পেলাম। তবে অনেকটা দেরি হয়ে গেল। যখন আমি পরীক্ষা দিয়েছিলাম, তখন অবিবাহিত ছিলাম। নিয়োগপত্র হাতে পেলাম ছেলেকে কোলে নিয়ে।’

ঋতুপর্ণা সাহার মতো একই রকম খুশি অন্তরা সোম, শিপ্রা বিশ্বাস-সহ উচ্চ প্রাথমিকের বহু হবু চাকরি প্রার্থী। দীর্ঘ আইনি জটে থমকে ছিল উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া। জট ছাড়তেই স্কুলে যোগ দিলেন রাখী চট্টোপাধ‌্যায়। বাংলা বিভাগের হবু শিক্ষক অন্তরা সোম জানালেন, ‘এই নিয়োগের জন্য প্রশাসনের প্রধান, স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান, শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিক, সকলকেই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে নমস্কার জানাই। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসানের পর এদিন নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে মনের যন্ত্রণা নিমেষে উবে গিয়েছে। খুব ভালো লাগছে, পরিবারের সকলে খুশি। এমনকী, বন্ধুবান্ধবরাও শুনে খুব খুশি হয়েছে।’

ওদিকে নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে অনেকে যেমন খুশি, তেমনি অনেকেই এই শিক্ষকের চাকরি প্রত্যাখ‌্যান করেছেন বা নিয়োগ কাউন্সেলিংয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। বাংলা বিষয়ের মোট ৩৫০ জন প্রার্থীকে এদিন কাউন্সেলিংয়ে ডাকা হয়েছিল। এর মধ্যে ৬৮ জন অনুপস্থিত ছিলেন বা চাকরি প্রত্যাখ‌্যান করেছেন। ইংরেজি বিভাগের জন্য এদিন ৩৫৭ জন প্রার্থীকে কাউন্সেলিংয়ে ডাকা হয়েছিল। এর মধ্যে ৭৬ জন অনুপস্থিত ছিলেন। অর্থাৎ এদিন বাংলা ও ইংরেজি বিভাগের জন্য মোট ৭০৭ জনকে কাউন্সেলিংয়ে ডাকা হয়েছিল। দু’টি বিভাগের ১৪৪ জন শিক্ষকের চাকরি প্রত্যাখ‌্যান করেছেন বা অনুপস্থিত ছিলেন। আসলে, দীর্ঘ সময় নিয়োগ আটকে থাকায়, অনেকেই ভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হয়েছেন। কেউ সরকারি, কেউ-বা কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তরে চাকরি পেয়ে গিয়েছেন।

উল্লেখ্য, সোমবার সকাল ১১টায় এসএসসি অফিসে কাউন্সেলিং শুরু হয়। ফলে, প্রার্থীদের ভিড়ে এসএসসি অফিসকে এদিন সরগরম থাকতে দেখা গিয়েছে। এসএসসির আধিকারিকদের কর্মতৎপরতা, চাকরিপ্রার্থীদের চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আনন্দের মধ্যে দিয়ে এদিন এসএসসি অফিস কার্যত উজ্জ্বল ছিল। এর আগে এই চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন, নিয়োগের জন্য স্মারকলিপি দেওয়ার যে পরিবেশ এসএসসি অফিসকে অনেকটা ম্রিয়মান করেছিল, তা নিমেষে উবে গিয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের হাতে নিয়োগপত্র দিতে পেরে। চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে পরিবারের লোকজনদের এদিন এসএসসি অফিসের সামনে দেখা গিয়েছে।

প্রসঙ্গত, আইনি জটিলতার কারণে ৯ বছর ধরে উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ থমকে ছিল। আইনি জট কাটতেই রাজ্য সরকার উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। পুজোর আগেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। নিয়োগের কাউন্সেলিং শুরু হতেই দেখা যায় যে, অনেকেই এই শিক্ষক পদের চাকরি নিতে চাইছেন না।