আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রমরমিয়ে চলত ড্রাগের চোরা কারবার। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে উঠে এসেছে এমনই বিস্ফোরক তথ্য। অপরাধের নানা শাখা-প্রশাখা যে কতদূর ডালপালা মেলেছিল তার আভাস মিলেছে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে। আরজি কর কাণ্ডের পর যে থ্রেট কালচারের অভিযোগ সামনে উঠে আসে , তার তদন্তে গঠন করা হয় অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি। শনিবার কলেজ কাউন্সিল তদন্ত কমিটির রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে থ্রেট কালচারে অভিযুক্ত ৫৯ জনের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শনিবারই কলেজের তরফে তালিকা প্রকাশ করে বলা হয় ৭ জন চিকিৎসক এবং ৩ চিকিৎসক পড়ুয়াকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে বহিষ্কার করা হবে ।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে থ্রেট কালচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে ৫৯ জনের নাম জড়িয়ে পড়ে। অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির তিন দফার শুনানি শেষে তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। ক্যাটাগরি ১এ- তে ১০ জন অভিযুক্তের নাম রয়েছে। ক্যাটাগরি ১বি-তে নাম রয়েছে ২৭ জনের। ক্যাটাগরি ২-এ রয়েছেন ১৬ জন। ৬ জন রয়েছেন ক্যাটাগরি ৩-এ।
অভিযুক্তরা কি কি ধরণের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল ছিল তাও উঠে এসেছে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, পড়ুয়ারা কথা না শুনলে তাদের ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো। গভীর রাতে হস্টেলের রুমে ডেকে নিয়ে গিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো। পড়ুয়াদের বাবা-মায়ের নামে খারাপ শব্দ ব্যবহার করা হতো।এমনও অভিযোগ রয়েছে যে, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের মিটিং-মিছিলে যোগ দিতে বাধ্য করা হতো। এঁরা সকলেই সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
তালিকায় যে ১০ জনকে বহিষ্কারের সদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন সৌরভ পাল, আশিস পান্ডে, অভিষেক সেন, নির্জন বাগচী, আয়ুশ্ৰী থাপা, শরিফ হাসান, নীলাগ্নি দেবনাথ, অমরেন্দ্র সিংহ, সতপাল সিংহ এবং তনবীর আহমেদ কাজির নাম। এই ১০ জনকে আরজি থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলেজ কাউন্সিলের তদন্ত কমিটি। ৭২ ঘন্টার মধ্যে তাঁদের হস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ১০ অভিযুক্তের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। কয়েক জনের বিরুদ্ধে রয়েছে রাগিংয়ের অভিযোগ। এদের নামের তালিকা পাঠানো হবে রাজ্য গ্রিভান্স সেল, ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে। অভিযুক্ত চিকিৎসকদের অভিভাবকদেরও ডেকে পাঠানো হবে।
দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে যে ২৭ জনের নাম রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধেও সহপাঠীদের যৌন হয়রানি, নানাভাবে উত্যক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এঁদেরও ৭২ ঘন্টার মধ্যে হস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা চিকিৎসক পড়ুয়া তাঁদের এক বছরের জন্য কলেজে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর পরের ক্যাটাগরির ১৬ জনের বিরুদ্ধেও একই ধরণের অভিযোগ উঠে এসেছে। এই ১৬ জন চিকিৎসক পড়ুয়াকে ৬ মাসের জন্য ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ইন্টার্নদের তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাকি ৬ জনকে সতর্ক করা হয়েছে। তবে তাঁদের অভিভাবকদেরও ডেকে পাঠানো হবে।
কলেজের অধ্যক্ষ মানস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন ‘কাউন্সিল বৈঠকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েচে। কলেজের উপাধ্যক্ষ সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায়ের জানান, যাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে তারা দোষ স্বীকার করেছে।