কেন তড়িঘড়ি ভাঙা হল সেমিনার রুম লাগোয়া ঘর? রাজ্যের হলফনামা তলব হাইকোর্টের

আর জি কর মামলার শুনানিতে এর আগেই রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। আর এবার সেমিনার রুম লাগোয়া একটি ঘর ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলল আদালত। অভিযোগ, সিবিআইয়ের কাছ থেকে তথ্য লুকোতেই তড়িঘড়ি সেমিনার হল ভাঙার কাজ শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার শুনানি চলাকালীন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের বেঞ্চ পুলিশের ভূমিকারও কড়া সমালোচনা করে। বেঞ্চের দাবি, পুলিশ নিজেকে রক্ষা করতে পারছে না। জনতাকে ঠেকাতে পারছে না।

মঙ্গলবার মধ্যরাতে হাসপাতালে ভাঙচুর চালানোর বিষয়টি নিয়েও আদালতের তোপের মুখে পড়ে পুলিশ-প্রশাসন। কেন পুলিশ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে পারল না? সেই প্রশ্ন তোলে আদালত। হনুমান জয়ন্তীর প্রসঙ্গও উঠে আসে সওয়াল-জবাবে।


আদালতের প্রশ্ন, ৭০০০ মানুষ হাসপাতালে ঢুকে গেল, ভাঙচুর চালালো। পুলিশ কোথায় ছিল? পুলিশের কাছে কি কোনও তথ্যই থাকে না? অতগুলো মানুষ তো হেঁটে আসেনি। নিশ্চয় গাড়ি করে এসেছিল। কোনও নজরদারির ব্যবস্থা কেন ছিল না?

রাজ্যের তরফে আদালতে দাবি করা হয়, ৭০০০ মানুষ হাসপাতালে ঢোকেনি। ৪০-৫০ জনের একটি দল হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছে।

আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরেই কেন সেমিনার হলের পাশের ঘর ভাঙা হল, তা নিয়েও রাজ্যেকে প্রশ্ন করা হয়। রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়েছে, চিকিৎসকদের দাবি অনুযায়ী বিশ্রাম ঘর তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছিল।

এরপরই আদালতের তরফে রাজ্যের কাছে হলফনামা চাওয়া হয়। আদালতে রাজ্যকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, ঘটনাস্থল সুরক্ষিত কি না, সুরক্ষার কী কী বন্দোবস্ত সেখানে রয়েছে। বুধবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি। সেদিন আর জি করের সেমিনার হল লাগোয়া ঘর ভাঙা নিয়ে রাজ্য এবং মামলার আবেদনকারীদের হলফনামা জমা দিতে বলেছে আদালত।

প্রসঙ্গত, ‘রাত দখল’ কর্মসূচি চলাকালীন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে হামলা চালায় একদল দুষ্কৃতী। বুধবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ আর জি করের লাগোয়া এলাকায় ‘রাত দখল’ কর্মসূচির একটি মিছিল চলছিল। অভিযোগ, সেই সময় আর জি করের জরুরি বিভাগের বাইরে তাণ্ডব চালায় একদল দুষ্কৃতী। গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালানো হয়।

আর জি কর হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টার, এইচসিসিইউ (হাইব্রিড ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট), (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট), সিসিইউ (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট), ওষুধের স্টোররুমে ভাঙচুর চালানো হয়। আর জি করের পুলিশ ফাঁড়ি এবং আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের মঞ্চেও ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

ঘটনাস্থলে কিছু পুলিশকর্মী উপস্থিত থাকলেও প্রাথমিকভাবে তারা কিছু করে উঠতে পারেননি। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। নামানো হয় র‌্যাফও। ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। ভাঙচুর করা হয়েছে পুলিশের একাধিক গাড়ি। দুষ্কৃতীদের ছোড়া ইটে জখম হন বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী।