আজ মঙ্গলবার কলকাতা পুরসভার অন্তর্গত ১৪৪ টি ওয়ার্ডের ফলপ্রকাশ হচ্ছে। সমস্ত ওয়ার্ডের প্রার্থীদের ভাগ্যপরীক্ষা আজ। তবে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে হাওয়া তৃণমুলের দিকেই।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ে আগেই জানিয়েছিলেন ১৩৫ টির মতো আসনে জিতবে তৃণমূল। বিরোধীরা মুখে কিছু না বললেও তাদের যে জেতার বিষয়ে খুব একটা আত্মপ্রত্যয়ী নয়, সেকথা পুরভোটের দিনই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথা থেকে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।
তবে সংখ্যাতত্ত্বের হিসেব যাই হোক না কেন, তৃণমূল শিবিরে মোটামুটি জয়েরই মুড রয়েছে। মোটামুটিভাবে কলকাতা পুরসভার নির্বাচন প্রশাসনকে একটা শিক্ষা দিয়ে গিয়েছে। অনেকরকম সতর্কতা এবং হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও পুরভোটে কিছু অশান্তির খবর এসেছে। সামনেই রাজ্যের শতাধিক পুরসভার নির্বাচন।
তার আগে কলকাতার পুরভোট নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠে গেল। বাম আমলেও কলকাতা পুরসভার ভোটের সময়ে রাস্তায় রাস্তায় অশান্তির খবর মিলেছে। এবার পুরভোট বাতিলের দাবিতে বিজেপির সুরে গলা মিলিয়েছে বামদলও।
যদিও ভোট বাতিল নিয়ে কেউ সোমবার পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হয়নি। কাজেই সব যুক্তিকে হারিয়ে আজ ঘোষিত হতে চলেছে পুরভোটের ফল। কলকাতা পুরভোটে গত বার ১৪৪ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১৪টিতে জিতেছিল তৃণমূল।
এ বার মঙ্গলবারের ভোট গণনার আগে শাসক শিবিরের দাবি, ১৩৪ এর কম নয়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাজ্যের বিজেপি, বাম এবং কংগ্রেস নেতাদের বড় অংশও একান্তে স্বীকার করে নিচ্ছেন শাসকের নজিরবিহীন জয়ের সম্ভাবনার কথা।
রবিবার ভোটগ্রহণ পর্বের ‘চিত্র’ দেখে তাঁদের অনেকেই বলছেন, বিরোধীরা দু’অঙ্ক ছুঁতে পারলে সেটাই হবে ‘যথেষ্ট’। ২০১৫ সালে বামেরা ১৫, বিজেপি সাত, কংগ্রেস পাঁচ এবং অন্যেরা তিনটি ওয়ার্ডে জিতেছিল।
বিরোধীদের আশা, এ বার তাঁরা ১০ পেরোবেন। প্রার্থী এবং এজেন্টকে মারধর, বোমাবাজি, বুথ দখল, ছাপ্পা ভোটের নানা ঘটনা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রবিবার ঘটেছে বলে অভিযোগ।
প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির শাসকদলের দিকে। কলকাতায় নির্বাচনী গোলমালের ‘ইতিহাসের নিরিখে’ অবশ্য রবিবার বড় কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটেনি।
কিন্তু দিনভর উত্তেজনার এই ভোটে শহর জুড়ে শাসক শিবিরের যে একতরফা দাপট দেখা গিয়েছে, অতীতে ভোটের কলকাতা তা দেখেছে কি না মনে করতে পারা যাচ্ছে না। বিরোধীদের এমন ‘আশা’র পিছনে, শাসকের ওই প্রতাপ প্রদর্শন বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। আরও কয়েকটি ক্ষেত্রেও নজিরবিহীন এ বারের কলকাতা পুরভোেট।
কলকাতা পুর এলাকার বাইরে (বিধাননগরে) রাজ্যের বিরোধী দলনেতার বাড়ি পুলিশ দিয়ে ঘিরে রাখা, বা এমএলএ হস্টেলের গেট তালাবন্ধ করে বিধায়কদের ‘নিয়ন্ত্রণ’ করার ঘটনাও রয়েছে এই তালিকায়। রাজ্য প্রশাসন এবং শাসকদলের যুক্তি, ভোটের দিন উত্তেজনা এড়ানোর উদ্দেশ্যেই এমন পদক্ষেপ করা হয়েছিল।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আগেই ঘোষণা করেছিলেন, ভোটের দিন হামলা বা কারচুপির ঘটনা ঘটলে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরের উদ্দেশে মিছিল শুরু করবেন।
রবিবার ভোট চলাকালীন এমন পরিস্থিতি ঘটলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল বলেই শুভেন্দু এবং বিজেপি বিধায়কদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল।
এ ক্ষেত্রে ভোটের আগে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের জারি করা নির্দেশিকাও শাসক শিবিরের হাতিয়ার। ওই নির্দেশিকায় ভোটের দিন বলা হয়েছিল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা ঘোরাফেরা করতে পারবেন না।
কেবলমাত্র যাঁরা প্রার্থী, তাঁদের ক্ষেত্রে নিজেদের ওয়ার্ডে ঘোরাফেরায় ছাড় দেওয়া হয়েছিল। ভোটারের বুথ ফেরত সমীক্ষা পূর্বাভাস দিয়েছে, কলকাতার ১৪৪ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩১ টিতে জয়ী হয়ে পুরসভার ক্ষমতায় ফিরতে পারে তৃণমুল। বাকি ১৩ টি পেতে পারে বিজেপি।
ওই সমীক্ষা অনুযায়ী তৃণমূল পেতে পারে ৫৮ শতাংশ ভোট। বিজেপি ২৮ শতাংশ। বামেরা পাঁচ শতাংশ এবং কংগ্রেস সাত শতাংশ ভোট পেতে পারে। নির্দল এবং অন্যেরা পেতে পারে দুই শতাংশ ভোট।
এটা ঠিক যে, এ ধরনের নমুনা বুথ ফেরত সমীক্ষায় সব সময় বাস্তবের প্রতিফলন ঘটে না। কিন্তু ইভিএম খোলার পরে সমীক্ষার ফল মিলে যাওয়ার উদাহরণও রয়েছে। সামগ্রিক ভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভোটারদের ভাবনার আভাস পেতেও এই ধরনের সমীক্ষার গুরুত্ব রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন।