• facebook
  • twitter
Wednesday, 19 March, 2025

পানিহাটি পুরসভার বৈঠকে গৃহীত মলয় রায়ের পদত্যাগপত্র

পানিহাটি পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে গৃহীত হল মলয় রায়ের পদত্যাগপত্র। সোমবার বোর্ড মিটিংয়ে কাউন্সিলররা সকলেই তাঁর ইস্তফার পক্ষে মত দেন।

পানিহাটি পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে গৃহীত হল মলয় রায়ের পদত্যাগপত্র। সোমবার বোর্ড মিটিংয়ে কাউন্সিলররা সকলেই তাঁর ইস্তফার পক্ষে মত দেন। সেই কারণে আস্থা ভোটের প্রয়োজন পড়েনি। নিয়ম মেনে আগামী ২১ মার্চ বৈঠক ডেকেছেন ভাইস চেয়ারম্যান। ওইদিন পানিহাটি পুরসভার নতুন চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা হতে পারে। পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার পর মলয় বলেন, আমার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে বৈঠক ডেকে নতুন পুরপ্রধান নির্বাচন করা হবে বলে জানতে পেরেছি।

তৃণমূল সূত্রে খবর, আগামী ২১ মার্চ উপ-পুরপ্রধান সুভাষ চক্রবর্তী পরবর্তী মিটিং ডাকবেন এবং সেখানে নতুন পুরপ্রধানের নাম ঘোষণা করা হবে। সোমবার বোর্ড অফ কাউন্সিলর্সের বৈঠকে ৩৫ জনের মধ্যে ৩৩ জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। এক তৃণমূল কাউন্সিলর জেলে থাকায় তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। অপরদিকে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর সঙ্গীতা সরকার অনুপস্থিত ছিলেন।

শাসকদল সূত্রে জানা যাচ্ছে, মলয়ের জায়গায় পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান হতে পারেন সোমনাথ দে। তিনি বর্তমানে পূর্ত দপ্তরের দায়িত্বে রয়েছেন। এর আগে পানিহাটি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। অভিজ্ঞতা এবং প্রশাসনিক কাজের দক্ষতার বিচার করে তাঁকেই পরবর্তী পুরপ্রধান করা হতে পারে। অন্যদিকে মলয় রায়কে অন্য কোনও দায়িত্ব দিতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস। সামনেই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন। মলয়কে দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব দিতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস।

পানিহাটি পুরসভার সদ্যপ্রাক্তন চেয়ারম্যান মলয় রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তাঁর মদতে অমরাবতীর একটি বড় মাঠ বিক্রির চক্রান্ত হয়েছে। এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মাঠটিকে সরকারি স্তরে অধিগ্রহণ করার উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি পানিহাটির তৎকালীন পুরপ্রধান মলয় রায়কে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন। পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম দু’দফায় মলয়কে ফোন করে সেই নির্দেশ জানিয়ে দেন।

সেই নির্দেশের পরেও অবশ্য নিজের পদ আঁকড়ে অনড় ছিলেন মলয়বাবু। পরে চাপে পড়ে ইস্তফাপত্র লিখলেও তাতে স্পষ্ট করে ‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ’ কথাটি উল্লেখ করেন বিদায়ী চেয়ারম্যান। ১১ মার্চ পুরমন্ত্রীর ফোনের পর সেই দিন সন্ধ্যায় তাঁর চেতলার বাড়িতে গিয়েছিলেন মলয়। ১২ মার্চ দুই প্রতিনিধি মারফত এসডিও–র কাছে পদত্যাগপত্র জমা করেন তিনি। সোমবারের বোর্ড অব কাউন্সিলর্সের বৈঠকে ভোটাভুটির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পানিহাটির বিদায়ী চেয়ারম্যান।

যদিও সোমবার কোনও ভোটাভুটি হয়নি। এদিন নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিলররা বৈঠকে বসেন। সেখানে কেউ মলয় রায়ের ইস্তফার বিরোধিতা করেননি। ফলে সর্বসম্মতিক্রমে তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। এদিকে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেন মলয়। তিনি বলেন, অমরাবতী মাঠ বিক্রির যে জল্পনায় আমাকে বদনাম করা হচ্ছিল, তাতে পুরমন্ত্রী আমাকে ক্লিনচিট দিয়েছেন। আমি কোনও দুর্নীতি করিনি।

আগেই তিনি পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। মলয় বলেন, তিন বছর পুরপ্রধানের কাজ করলাম, তাতে ববিদার (ফিরহাদ) অনেক সহযোগিতা আছে। আমাদের রাস্তাঘাট, আলো, সব কিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ওঁর আশীর্বাদ নিয়ে যদি চলতে পারি, তা হলে পানিহাটি ভাল ভাবেই চলবে। প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সাল থেকে টানা কাউন্সিলর রয়েছেন মলয় রায়। বিরোধী দলনেতা থাকার পাশাপাশি ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যানেরও দায়িত্ব সামলেছেন মলয় রায়।

পানিহাটি পুরসভার অধীনে মোট ৩৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, গত বছর মলয়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করে তৃণমূল হাইকমান্ডকে চিঠি দিয়েছিলেন ৩২ জন কাউন্সিলর। মলয়ের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছিল। পুরসভার ১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে চাঁদা তোলার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এর পাশপাশি ৮৫ বিঘার স্থানীয় অমরাবতী মাঠের বড় অংশ আবাসন প্রকল্পের জন্য বিক্রির চক্রান্তের অভিযোগ ওঠে মলয়ের বিরুদ্ধে।