বউবাজার মেট্রো বিপর্যয় কাণ্ড অব্যাহত। একদিকে চলছে ড্রাউটিং-এর কাজ অন্যদিকে একের পর এক এলাকায় চিড় ধরেছে রাস্তা থেকে বাড়ি। দুর্গাপিতরি লেন, স্যাকরাপাড়া লেনের পর এবার গৌরি দে লেনের একাংশে বৃহস্পতিবার ফের ফাটল। বউবাজার মেট্রো বিপর্যয় কান্ডের বিধ্বস্তদের তালিকায় এবার খােদ রাজ্যের মন্ত্রীর নাম উঠল।
মেট্রো কর্তৃপক্ষের নােটিশ পেয়ে এদিন বাড়ি ছাড়ার তােড়জোর শুরু করেন রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায়। বউবাজারের প্রাচীন বসতি অঞ্চলের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা তাপস রায়ের পরিবার। বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্যের মন্ত্রী পরিবার সমেত বাড়ি ছাড়েন। যে আবাসনে তিনি থাকতেন সেখানকার অন্য বাসিন্দারাও বাড়ি ছাড়ছেন এক এক করে। পার্ক সার্কাসে মন্ত্রীদের জন্য যে আবাসন রয়েছে সেখানেই স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে উঠেছেন মন্ত্রী তাপস রায়।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে কেঁপে ওঠে তিন নম্বর গৌরি দে লেনের একাংশ। ওই অংশটি মূলত বস্তিবাসীরা রয়েছেন। হঠাৎ বিকট আওয়াজ শুনতে পান বস্তির এক বাসিন্দা তপন কুমার জানা। দুপুরে কাজ থেকে ফিরে সবেমাত্র খেতে বসেছিলেন তিনি। আকস্মিক আওয়াজ আর সাথেই দেওয়ালের একাংশ ধরে ফাটল ধরেছে দেখতে পান তিনি।
কালবিলম্ব না করেই তিনি ছুটে যান গােয়েঙ্কা কলেজে বিশেষ কনট্রোল রুমে। মেট্রোর আধিকারিক ও পুলিশ প্রশাসনকে গােটা বিষয় জানান। দায়িত্বপ্রাপ্ত মেট্রোর আধিকারিকরা এসে দেখে বাড়িটি চিহ্নিত করে রেখে যান। এবং দ্রুত তপন জানাকে বাড়ি খালি করার নির্দেশ দেন। কিন্তু এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তার থাকার বন্দোবস্ত করা হয়নি।
অন্যদিকে ওই এলাকারই সরু গলির অংশে রাস্তাতেও ধরেছে ফাটল। বস্তির প্রায় বাইশটির উপর পরিবার প্রমাদ গুনছেন। দিশাহারা হয়ে পথে নেমে দাঁড়িয়ে মেট্রো কর্তৃপক্ষের দিকে তাকিয়ে গৌরি দে লেনের বস্তিবাসীরা। আর মৌখিক আশ্বাসবাণী নয় জরুরি বৈঠক শেষে বউবাজারের বাস্তুহারা বাসিন্দাদের দাবি মেনে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষ। বাড়ি মেরামতি থেকে শুরু করে ভিটেহারাদের পুনর্বাসনের দাবিতেও পড়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষের সিলমােহর।
গােটা বিষয়ের তত্ত্বাবধানে গঠিত হয়েছে বিশেষ কমিটি। তার মধ্যে যেমন রয়েছেন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার তেমনই রয়েছেন শীর্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকরা। বিপর্যস্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলবেন এবং বিধ্বস্ত বাড়িগুলিকে হয় মেরামতি বা পরিস্থিতি বিচার করে পুনরায় বাড়ি তৈরি করে দেওয়া পর্যন্ত সামগ্রিক বিষয় তত্ত্বাবধান করবেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কেএমআরসিএল’র তরফ থেকে জানানাে হয়েছে, এসপ্ল্যানেড এবং শিয়ালদহ মধ্যস্থ যে এলাকায় মেটোর কাজে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, সেখানের বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ নির্দেশিকা। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারপিছু ৫ লক্ষ টাকা দ্রুত প্রদান করা হবে। এছাড়া যেসব বাড়ি ধসে পড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং মেরামতির যােগ্য নয়, সেগুলিকে পুনরায় তৈরি করে দেওয়া হবে। এছাড়া যেগুলি অল্প ফাটল ধরেছে বা মেরামতি করে দেওয়া যায়, সেগুলি সারিয়ে দেওয়া হবে।
যেসব পরিবারকে বিপর্যস্ত এলাকা থেকে বার করে হােটেলে বা লজে রাখা হয়েছে, তাদের জন্যও রয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষের বিশেষ ব্যবস্থা। তাদের থাকা-খাওয়া সংক্রান্ত খরচখরচা বহন করবে কেএমআরসিএল। যদি পুনর্বাসন প্রক্রিয়া প্রলম্বিত হয়, সেক্ষেত্রে বিপর্যস্ত পরিবারগুলিকে ফ্ল্যাটে বা বাড়ি ভাড়া করে রাখার ব্যবস্থা করবে কেএমআরসিএল।
বউবাজার বিপর্যয় কাণ্ড খতিয়ে দেখতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের বিশেষজ্ঞদের নিয়ােগ করা হয়েছে। দ্রুত সমস্যার সুরাহা করতে বদ্ধপরিকর মেট্রো কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যেই শহরে এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ পল ভিরেল। হুগলি নদীর নীচ দিয়ে। মেট্রোর যে সুড়ঙ্গ তৈরি হয়েছে, তার টানেল ইঞ্জিনিয়ারদের নেতৃত্ব ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন পল ভিরেল। এছাড়া হংকং থেকে এসেছেন এইসিওএম’র টানেল এক্সপার্ট গাই ব্রিজ। বিশেষজ্ঞ টিমে রয়েছেন বিশিষ্ট জিও টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার অধ্যাপক জন এনডিক্ট। তিনি এসেছেন সিঙ্গাপুর থেকে। এছাড়া রয়েছেন রাশিয়ার গ্রাউটিং এক্সপার্ট কিরিল শ্রামকো এবং চেন্নাইয়ের ডা. কুমার পিছুমুনি।
প্রসঙ্গত, বউবাজার বিপর্যয় কাণ্ডে পুনর্বাসনের দাবিতে পথ অবরােধ করেন বিপন্ন পরিবারগুলি। উপযুক্ত লিখিত নথি দাবি করেন তারা। কোনও মৌখিক আশ্বাসবাণীতেই আর ভরসা রাখতে না পেরে শেষমেশ বৃহস্পতিবার পথে নামেন বিধ্বস্ত পরিবারগুলি। এদিন সকালে হিদারাম ব্যানার্জি লেন ও গৌরি দে লেনের সংযােগস্থলে পথ অবরােধ করেন তারা। মৌখিক প্রতিশ্রুতিতে নয়, লিখিত নথিই চাই বলে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট অবরােধ করেন তারা।