• facebook
  • twitter
Thursday, 19 September, 2024

প্রখ্যাত কবি অসীম সাহা প্রয়াত

— সৈয়দ হাসমত জালাল প্রতিবাদী, অসাম্প্রদায়িক ও শুদ্ধ চেতনার কবি অসীম সাহা ১৮ জুন, মঙ্গলবার দুপুর দুটো নাগাদ ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। মূলত কবি হিসেবে তিনি খ্যাতি অর্জন করলেও গত ৫৫ বছর ধরে সাহিত্যের সব শাখাতেই তাঁর নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। বিগত ষাটের দশকের

— সৈয়দ হাসমত জালাল
প্রতিবাদী, অসাম্প্রদায়িক ও শুদ্ধ চেতনার কবি অসীম সাহা ১৮ জুন, মঙ্গলবার দুপুর দুটো নাগাদ ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
মূলত কবি হিসেবে তিনি খ্যাতি অর্জন করলেও গত ৫৫ বছর ধরে সাহিত্যের সব শাখাতেই তাঁর নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। বিগত ষাটের দশকের মধ্যভাগ থেকে কবিতার হাত ধরে তাঁর যে শৈল্পিক অভিযাত্রা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার ক্রমপরিণতি তাঁর কবিতাকে দিয়েছে স্বতন্ত্র মাত্রা। আধুনিক চিন্তাধারার ফলে তাঁর রচনা একদিকে যেমন দার্শনিকতায় ঋদ্ধ, তেমনই বাংলা কবিতার যে মৌলিক গতিপ্রবাহ, তার গীতিধর্মিতা, সেই ঐতিহ্যকেও তিনি ভোলেননি।
অসীম সাহার জন্ম ১৯৪৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা শহরের মামাবাড়িতে। অধ্যাপক পিতার চাকরিসূত্রে মাদারীপুর শহরে ছিল তাঁদের স্থায়ী বসবাস। সেখানেই কলেজের পড়াশোনা শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের কারণে তাঁর স্নাতকোত্তর পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। ফলে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান ১৯৭৩ সালে।
সেই থেকে ঢাকা শহরেই তাঁর বসবাস। ১৯৬৫ সাল থেকে অব্যাহতভাবে লিখে গেছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছড়া, কিশোর কবিতা, গান ইত্যাদি। এছাড়া তিনি রচনা করেছেন আধুনিক ব্যবহারিক সহজ বাংলা অভিধান। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪০। এইসব লেখালেখির পাশাপাশি দীর্ঘদিন তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
তিনি বাংলাদেশেই শুধু নয়, ভারতের বাংলা সাহিত্যের জগতেও তিনি ছিলেন বিশেষ পরিচিত এবং সম্মানিত একটি নাম। তিনি যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য পুরস্কার এবং সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পুরস্কার, আইএফআইসি ব্যাঙ্ক সাহিত্য পুরস্কার-সহ আরও বহু পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। ভারত থেকে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক রূপসী বাংলা পুরস্কার, আন্তর্জাতিক লিটল ম্যাগাজিন পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু স্মারক পুরস্কার ইত্যাদি। এছাড়া সর্বোপরি বাংলাদেশ সরকার ২০১৯ সালে তাঁকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পারকিনসন্স এবং ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। এর পাশাপাশি কিছুটা মানসিক অবসাদও এসে গিয়েছিল। গত ২১ মে থেকে তিনি ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশে তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার সাহিত্য মহলেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অসীম সাহা তাঁর মরদেহ দান করার ইচ্ছে প্রকাশ করে গেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র অর্ঘ্য সাহা।
বিগত সত্তরের দশক থেকেই আমি তাঁর কবিতার সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। তবে তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয় ও সম্পর্ক গড়ে ওঠে গত নব্বইয়ের দশকের গোড়ায়। এই দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময়ে তাঁর সঙ্গে গড়ে উঠেছিল আত্মীয়তার সম্পর্ক। কলকাতা এবং বাংলাদেশের বহু সাহিত্যসভায় একসঙ্গে থেকেছি আমরা। তাই তাঁর মৃত্যুতে গভীর মর্মাহত আমিও। তাঁর স্ত্রী কবি অঞ্জনা সাহাও আমাদের প্রিয়জন। কবি হিসেবে তিনিও সুপরিচিত।
স্ত্রী, দুই পুত্র ও অগণিত অনুরাগীদের রেখে চলে গেলেন কবি অসীম সাহা। সাম্প্রতিক কালে এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক পরিস্থিতি তাঁকে উদ্বিগ্ন করে তুলত। ব্যক্তিগত কথোপকথনে ও আলোচনায় তা বহুবার টের পেয়েছি। মনে পড়ছে তাঁর একটি কবিতার কয়েকটি পঙক্তি যেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘চারদিক থেকে ধেয়ে আসছে কালো অন্ধকার।’ লিখেছিলেন, ‘তবে কি ঘন কালো মেঘের শরীর অতিক্রম করে/ আর কখনো বেরিয়ে আসবে না জ্যোৎস্নাভরা রাত?’