নিজস্ব প্রতিনিধি– রেমালের তাণ্ডবে রাজ্যে ৬ জনের মৃতু্য হয়েছে বলে খবর৷ ‘রেমাল’-এর কারণে রবিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া দুর্যোগ চলছে, সোমবারও বৃষ্টির সঙ্গে বইছে হাওয়া৷ ইতিমধ্যেই কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় জমে গেছে জল, একাধিক জায়গায় গাছ পড়ে অবরুদ্ধ বিভিন্ন এলাকা৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রাস্তায় নেমে কাজ করছেন প্রশাসনের কর্তারা থেকে সকলে৷ মুখ্যমন্ত্রী আগাম সকল রকম ব্যবস্থা করে রেখেছেন বলে আগেই জানিয়েছেন এবং কোনও রকম দুশ্চিন্তা না করার বার্তা দিয়েছেন৷
পাশাপাশি, রাজভবনের তরফে র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স ও রেডি রাখা হয়েছিল৷ এনডিআরএফ যে জায়গায় কাজ করছে তা তদারকি করতে খোদ রাজ্যপাল রাস্তায় নেমেছেন৷ রবিবার রাতে ঝড় চলাকালীন কলকাতার এন্টালিতে বাডি়র কার্নিশ ভেঙে এক ব্যক্তির মৃতু্য হয়েছে৷ মৌসুনি দ্বীপে রাতে থেকে চলেছে ঝডে়র তাণ্ডব৷ মৌসুনি দ্বীপের বাগডাঙা এলাকার বাসিন্দা রেণুকা মণ্ডল (৮০)৷ সোমবার সকালে তিনি ঘরের ভিতর খেতে বসেছিলেন৷ ওই সময়ে ঘরে আর কেউ ছিলেন না৷ আচমকা ঝডে়র প্রভাবে পাশের একটি বড় গাছের ডাল ভেঙে পডে়৷ রেণুকার ঘরের অ্যাসবেসটসের চালের উপর পডে় ওই ডালটি৷ তাতে চাল ভেঙে যায়৷ চাপা পডে় ঘটনাস্থলেই মারা যান বৃদ্ধা৷ স্থানীয় বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা বলেন, ‘‘বৃদ্ধা রান্নাঘরে খেতে বসেছিলেন,ঝোড়ো হাওয়াতে ওঁর বাডি়র লাগোয়া একটি বড় গাছ অ্যাসবেসটসের চালের উপর পডে়৷ অ্যাসবেসটস ভেঙে বৃদ্ধা চাপা পডে়ন এবং মারা যান৷ এ ছাড়া, ঝডে় বহু মাটির বাডি় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে৷ বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নিরাপদ স্থানে৷ দুর্গতদের কাছে খাবার পাঠানোর বন্দোবস্তও করা হয়েছে৷’’ রবিবার রাত সাডে় ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে এন্টালি থানা এলাকার বিবির বাগান এলাকায় প্রবল ঝড়বৃষ্টির সময় বাডি়র বাইরে থাকা ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ গেল বাবার৷ মৃতের নাম মহম্মদ সাজিব৷ বয়স ৫১৷ স্থানীয় সূত্রে খবর, সাজিদের ছেলে বন্ধুর বাডি়তে আইপিএলের ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন৷ ঝডে় ছেলে বিপদে পড়তে পারে, এই ভয়েই তাঁকে ডাকতে গিয়েছিলেন সাজিদ৷ তিনি রাস্তায় বেরোতেই প্রবল ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়৷ সেই সময় ১০ নম্বর বিবির বাগানে একটি বাডি়র নীচে আশ্রয় নেন সাজিদ৷ তখনই বাডি়র কার্নিশ ভেঙে পডে় তাঁর উপর৷ স্থানীয়েরা সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও চিকিৎসকেরা সাজিদকে মৃত ঘোষণা করেন৷ মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘কার্নিশ ভেঙে মৃতু্য! অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা৷ বারবার করে সারাতে বলা সত্ত্বেও সারাচ্ছে না কেউ৷ আমরা তো আমাদের কাজ করেই চলেছি৷’’
পুরসভা সূত্রে খবর, রেমালের তাণ্ডবে শহরের কয়েকটি জায়গায় বাডি়র একাংশ ভেঙে পডে়ছে৷ শিয়ালদহে একজনের জখম হওয়ারও খবর মিলেছে৷ বাডি়র পাঁচিল ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে ক্যামাক স্ট্রিটে৷ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় শেক্সপিয়র সরণি থানার পুলিশ৷
অন্যদিকে, বর্ধমানে বিদু্যৎস্পৃষ্ট হয়েছে মৃতু্য বাবা ও ছেলের৷ ঘটনাটি ঘটেছে মেমারি থানার অন্তর্গত কলানব গ্রামের কোঙারপাড়ায়৷ মৃতদের নাম ফড়ে সিং (৬৪) ও তরুণ সিং৷ স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রিমেলের তাণ্ডবে ভেঙে যাওয়া কলা গাছ কাটতে গিয়ে প্রথমে বাবা ফড়ে সিং বিদু্যৎস্পৃষ্ট হন, তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে বিপদে পডে়ন ছেলেও৷ স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করে৷
জমা জলের উপর ঝডে় ছিঁডে় পড়া যাওয়া বিদু্যতের তারে বিদু্যৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃতু্য হল আরও এক জনের৷ এ বার দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশপুরের নুঙ্গিতে বিদু্যৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃতু্য হল এক মহিলার৷ মৃতার নাম তাপসী দাস৷ ৫৩ বছরের ওই মহিলা মহেশতলা পুরসভার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা৷ স্থানীয় সূত্রে খবর, সকালে রাস্তার জমা জলে নেমে বিদু্যৎস্পৃষ্ট হন তাপসী৷ স্থানীয়েরা তাঁকে ওই অবস্থায় দেখে খবর দেন মহেশতলা থানায়৷ খবর যায় পুরমাতা অলকা মাইতির কাছেও৷ পুলিশ এবং স্থানীয় কাউন্সিলর ঘটনাস্থলে পৌঁছে তডি়ঘডি় মহিলাকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুল্যান্সে করে বেহালার বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা ওই মহিলাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷ অন্য দিকে, প্রবল দুর্যোগের মধ্যে ‘হুকিং’ করা তারে বিদু্যৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃতু্য হল পানিহাটিতে৷ মৃতের নাম গোপাল বর্মণ৷ বয়স ৪৭ বছর৷ স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, ‘হুকিং’ করে একটি দোকানে বিদু্যৎ নেওয়া হয়েছিল৷ ঝডে় সেই তার ছিঁডে় পডে়ছিল, ছিঁডে় পড়া সেই বিদু্যতের তার থেকে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে৷ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে খড়দহ থানার পুলিশ দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় হাসপাতালে৷
রেমালের তাণ্ডবে মিন্টো পার্ক, সিআর অ্যাভিনিউ, বেহালা সহ শহরের একাধিক জায়গার বিভিন্ন রাস্তা জলের তলায়৷ কোথাও হাঁটু জল জমেছে, কোথাও গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ৷ চিংডি়ঘাটার সুকান্ত নগর রোডে একাধিক জায়গায় জল জমার সমস্যা দেখা দিয়েছে৷ এক হাঁটু করে জল জমে গিয়েছে বাডি়র সামনে৷ ফুলবাগান মেলার মাঠের ঠিক উল্টো দিকের পুকুরের লাগোয়া গাছ উপডে় পডে়ছে পাড় ভেঙে৷ সে সব জায়গায় কাজ করছে এনডিআরএফ টিম৷ রাজভবনের টিম ছাড়াও কলকাতা পুলিশ ও কলকাতা পুরসভা গাছ সরানোর কাজ চালাচ্ছে৷ তবে বৃষ্টির কারণে ভেঙে পড়া গাছ সরাতে বেগ পেতে হচ্ছে৷ আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী রেমালের প্রভাবে সোমবার উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে ৷ ফলে বৃষ্টি না কমলে দুর্যোগ সামাল দিতে সমস্যা তৈরি হচ্ছে৷ মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, কলকাতায় ছোট বড় মিলিয়ে মোট ৫৮টি গাছ ভেঙে পডে়ছে৷ সকাল থেকে গাছ সরিয়ে রাস্তা ফাঁকা করার কাজ চলছে৷ ‘রেমাল’-এর তাণ্ডবে যে যে জায়গায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেসব জায়গায় পৌঁছে উদ্ধারকাজ করছে রাজভবনের এই স্পেশাল টাস্ক ফোর্স৷ রাজভবন চত্বরেও একাধিক গাছ ভেঙে পডে়ছে৷ সকাল থেকে সেই গাছগুলি কেটে পরিষ্কার করার কাজে হাত লাগিয়েছে এনডিআরএফ৷
বাংলার মানুষকে নিশ্চিন্ত করতে বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জানালেন, তিনি যা যা করার তাই করছেন দুর্যোগ সামাল দিতে৷