• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

রাজীব মামলায় টানাপোড়েন অব্যাহত, মঙ্গলবার রায়ের সম্ভাবনা

সােমবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চে আইপিএস রাজীব কুমারের আগাম জামিনের মামলায় রায়দানের সম্ভাবনা ছিল।

রাজীব কুমার (File Photo: Kuntal Chakrabarty/IANS)

নারদা মামলায় যখন ধৃত আইপিএস সৈয়দ হােসেন আলি মির্জা সিবিআই হেফাজত কাটিয়ে প্রেসিডেন্সি জেলে বিচারাধীন বন্দি হিসেবে যাচ্ছেন, তখন সারদা মামলায় ‘মেঘনাদ ইন্দ্রজিতের’ মতাে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন আরেক অভিযুক্ত আইপিএস রাজীব কুমার।

সােমবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চে আইপিএস রাজীব কুমারের আগাম জামিনের মামলায় রায়দানের সম্ভাবনা ছিল। তবে সােমবার রায়দানটি স্থগিত রাখেন বিচারপতিরা। আইনজীবীমহলে ধারণা, মঙ্গলবারই আগাম জামিনের মামলায় চুড়ান্ত নির্দেশ দিতে পারে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চ।

ইতিমধ্যেই সিবিআইয়ের স্পেশাল ১৪-এর বেশির ভাগ অফিসার ফেরত গেছেন হেড কোয়ার্টারে। তবে সিআরপিএফের জোনাল কর্তাদের সঙ্গে গত রবিবার একপ্রস্থ আলােচনা সেরে ফেলেছে কলকাতার সিবিআইয়ের টিমটি। সিবিআই গত দু’সপ্তাহে কুড়ির বেশি অভিযান চালিয়ে আদৌ কি রাজীবকে গ্রেফতারে আগ্রহী ছিল? নাকি মামলার নােটিশ দিতে দিয়ে অতীতের পুরাতন সম্মানহানির বদলা নিল? কেননা সিবিআইয়ের অফিসাররা প্রথম পর্যায়ে সারদা মামলায় নােটিশ দিতে গিয়ে কলকাতা পুলিশের হাতে নিগৃহীত হয়েছিল। তাই সিবিআইয়ের রাজীব পাকড়াও অভিযানে সংবাদমাধ্যমকে নিয়ে যা চলেছে, তাতে অনেক পুলিশকর্তা প্রশ্ন তুলেছেন সিবিআইয়ের অভিযান ঘিরে।

মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট রাজীবের আগাম জামিনের মামলায় কী রায় দেয়, তার দিকে তাকিয়ে সিবিআই। যদি আইপিএস রাজীব কুমারের পক্ষে রায় যায়, তাহলে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ কিংবা সুপ্রিম কোর্টে আপিলে যাবে তারা। আর যদি গ্রেফতারিতে সম্মতি মেলে, সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে সিবিআই ‘আসল’ অভিযানে নামতে পারে মঙ্গলবারই।

তবে কলকাতা পুলিশের অন্দরমহলে ‘পরােপকারী’ ইমেজ রয়েছে আইপিএস রাজীবের। লালবাজারের এক আধিকারিক নাম গােপন রাখার শর্তে বলেন, ‘হােমগার্ড থেকে ইন্সপেক্টর লেভেলের অফিসারদের বিপদে-আপদে গভীর রাতেও এগিয়ে এসেছেন স্যার, তাহলে আমরা এখন তাঁর বিপদে কেন পাশে থাকব না?

গত সােমবার এই আগাম জামিনের মামলা দাখিল করেন ‘নিখোঁজ’ গােয়েন্দাপ্রধানের স্ত্রী সঞ্চিতা কুমার। তাতে গত মঙ্গলবার শুনানি না হলেও বুধবার থেকে শুক্রবার ‘রুদ্ধদ্বার’ এজলাসে উভয়পক্ষের আইনজীবীরা সওয়াল-জবাব চালান। সারদা মামলায় যেভাবে আইপিএস রাজীব কুমার সুপ্রিম কোর্ট থেকে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মধুমতী মিত্রের এজলাসে বিপক্ষে নির্দেশিকা পেয়েছেন, তাতে আইনি রক্ষাকবচ পুনরায় মিলবে কিনা, তা নিয়ে জোর চর্চা উঠেছে।

বারাসতের দু’টি এজলাসে এই মামলা না শুনলেও আলিপুর আদালতে দুটি পৃথক এজলাসে যেভাবে বিচারকরা ‘অর্ডার’ দিয়েছেন এই সারদা সম্পর্কিত মামলায়, তাও সিবিআইয়ের আইনজীবীর কাছে কলকাতা হাইকোর্টে চলতি সময়ে সওয়াল জবাবে আরও শক্তপােক্তভাবে কেন রাজীবকে গ্রেফতার জরুরি, তা বােঝানাে সহজ হয়েছে।

সিবিআইয়ের আইনজীবী কখনও ওয়ারেন্ট ইস্যুতে দাউদ ইব্রাহিমের মামলার নথি পেশ করেছে আবার কখনও বা রাজীবের আগাম জামিনের শুনানিতে দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের গ্রেফতারির উদাহরণ টেনেছে।

সারদা যেভাবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ২৫০০ কোটি টাকা তুলেছে বলে দাবি, সে সময়কার সারদার প্রধান অফিস এলাকার পুলিশ কমিশনার পদে ছিলেন আইপিএস রাজীব কুমার। তাই তাঁর অজ্ঞাতসারে রাজ্যজুড়ে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ তােলা নিয়ে পুলিশি ভূমিকা এড়ানাে যায় না। এটি সিবিআইয়ের আইনজীবীরা বিভিন্ন সওয়াল এজলাসে জানিয়েছেন। অর্থনৈতিক অপরাধের পাশাপাশি প্রভাবশালীদের বাঁচাতে তথ্যপ্রমাণ লােপাট করার অভিযােগ রযেছে আইপিএস রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে। এহেন অভিযােগের সপক্ষে একদা সিটের তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা সিবিআইয়ের জেরায় রাজীবের তদন্তে নেতৃত্বদানের কথা জানিয়েছেন।

সর্বোপরি, সারদা কোম্পানির সেকেন্ড ব্যক্তি দেবযানী মুখােপাধ্যায়ের বয়ান আইপিএস রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ লােপাটের অভিযােগকে আরও শক্তপােক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে। সােমবার আইপিএস রাজীব কুমারের সরকারি ছুটি শেষ হয়েছে। যদিও এই ছুটি বাড়ানাে পর্ব নিয়ে বিস্তর অভিযােগ উঠেছে। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট আইপিএস রাজীব কুমারের আগাম জামিনের মামলায় কী রায় দেয়, তার দিকে তাকিয়ে গােটা রাজ্য রাজনীতি।