কোথায় রাজীব কুমার ? কোথায় গা ঢাকা দিয়েছেন কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার? শনিবার এই প্রশ্নমালা যখন সাধারণ মানুষ থেকে সাংবাদিকদের মুখে মুখে ফিরছে, এমনকি সারদা মামলায় সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসাররা এই ধরনের একগুচ্ছ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন, তখনই হঠাৎ সিবিআই দফতরে পৌঁছয় প্রাক্তন নগরপালের একটি ই-মেল।
সূত্রের খবর, ই-মেলের মাধ্যমে সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের কাছে হাজিরার জন্য এক মাসের সময় চেয়েছে রাজীব কুমার। জানিয়েছেন, তিনি ছুটিতে রয়েছেন, তাই আসতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার হাইকোর্টে তার গ্রেফতারি সংক্রান্ত রক্ষাকবজ উঠতেই ওই দিনই বিকেলে প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার ৩৪ নম্বর পার্ক স্ট্রিটের ঠিকানায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৬০ ধারায় সিবিআই তাঁকে নােটিশ দেয়। সেই মতাে এদিন সকাল ১০টায় হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। প্রস্তুত ছিল সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। তড়িঘড়ি দিল্লি থেকে উড়িয়ে আনা হয় সংস্থার ক্রাইম ব্রাঞ্চের অন্যতম অধিকর্তা সাই মনােহরকে।
কিন্তু এডিজি সিআইডি রাজীব কুমার সিবিআইয়ের নােটিশের প্রেক্ষিতে সাড়া না দিয়ে আত্মগােপন করে থাকেন। এবং তিনি কোথায় রয়েছেন, এদিন সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত তা স্পষ্ট নয় সিবিআইয়ের কাছে। আর এর জন্যই রাজীব কুমারের খোঁজ পেতে মরিয়া সিবিআই আধিকারিকরা সতর্ক করেছে কাকা সহ সমস্ত বিমানবন্দরকে। রাজীব ও তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীর মােবাইলের উপর নজরদারি চালাচ্ছে সিবিআই। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, পার্ক স্ট্রিটে আইপিএস অফিসারদের যে আবাসন রয়েছে, সেখানেই কোনও ফ্ল্যাটে আত্মগােপন করে রয়েছেন কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার।
প্রসঙ্গক্রমে, এদিন সকাল থেকেই সরগরম ছিল সল্টলেকে সিবিআই দফতর। সকাল ১০টায় রাজীব কুমারের জন্য সিজিও কমপ্লেক্সে অপেক্ষা করলেও দুপুর দুটো বাজতেই তৎপর হয়ে ওঠে সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। রাজীব কুমারের সন্ধানে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানে নামার প্রস্তুতি নেন তদন্তকারীরা। এই সময়েই বেলা আড়াইটা নাগাদ সিবিআইকে ই-মেল করেন রাজীব কুমার। সেখানে তিনি একমাস সময় চেয়ে নেন। জানান, তিনি ছুটিতে আছেন। যদিও সিবিআই আধিকারিকরা সরকারিভাবে মেল পাওয়ার কথা স্বীকার করেননি।
এরপর দুপুর তিনটের সময় ফ্রি সিজিও কমপ্লেক্স থেকে সারদা মামলার আইও তথাগত বর্ধন ও এসপি র্যাঙ্কের অফিসার পার্থ মুখােপাধ্যায় সহ কেন্দ্রীয় গােয়েন্দা সংস্থার একাধিক আধিকারিক গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। তবে, তারা কোথায় যাচ্ছেন কাউকেই জানাননি। মা ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে গাড়ি চলে যায় নিজাম প্যালেসে বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ নিজাম প্যালেসে পৌঁছন তারা।
এরপর মিনিট দশেক সেখানে থাকার পর পাঁচজন সিআইএফ এবং সিবিআইয়ের জয়েন্ট পঙ্কজ শ্রীবাস্তব গাড়ি নিয়ে বিকেল চারটে নাগাদ নিজাম প্যালেস থেকে বন্ডেল রােড হয়ে বালিগঞ্জ প্লেসে পৌঁছন তদন্তকারীরা। সেখানে সিবিআইয়ের আইনজীবী ওয়াই জে দস্তুরের বাড়ি যান তারা।
সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত সেই সম্পর্কে আইনি পরামর্শের জন্যই আইনজীবীর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন তদন্তকারীরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠকের পর বিকেল পাঁচটার কিছু সময় পরে আইনজীবহী দস্তুরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন জয়েন্ট ডিরেক্টর পঙ্কজ শ্রীবাস্তব বেরিয়ে এসে তিনি বলেন, কাগজপত্র যা পাওয়া যাবে, তা খতিয়ে দেখব। আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করব। যা হবে দেখতে পাবেন। এরপর ফের তারা সিজিও কমপ্লেক্সে ফিরে আসে।
সূত্রের খবর, আইনজীবীর সঙ্গে কী কথা হয়েছে, তা দিল্লিতে জানানাে হয়। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এদিন আর কোনও নােটিশ পাঠানাে হবে না। তবে একমাস সময় দিতেও তারা নারাজ। সূত্রের খবর, সিবিআই দফতরে যেমন তৎপরতা শুরু হয়েছে, তেমনই রাজীব কুমারও হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় গােয়েন্দাদের একাংশ। তাদের ধারণা, তিনি হাজির এড়িয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন। সে জন্য হয়তাে তার আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করছেন। তাদের মতে, সােমবার সুপ্রিম কোর্ট খুললেই আবেদন করবেন রাজীব।
অন্যদিকে এদিন সকাল থেকেই রাজীব কুমারের পার্ক স্ট্রিটের আবাসন ঘিরে ফেলে কলকাতা পুলিশ। ডিসি পদমর্যাদার দু’জন অফিসার সেখানে ছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যা হতেই সেই ব্যবস্থা প্রত্যাহার করে নয় কলকাতা পুলিশ।