রাজবংশীদের জন্য ‘সুদিন’ আসছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শার সঙ্গে বৈঠকের পরে এমনটাই মনে করছেন রাজবংশীদের ‘স্বঘােষিত’ মহারাজা অনন্ত রায়। পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রদোহিতার বেশ কয়েকটি মামলা থাকায় অসমের চিরাং জেলার সতিরগাঁও গ্রামে বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে যান অমিত শাহ। খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে চলে ভােট রাজনীতির আলােচনা।
অমিত অবশ্য একা যাননি। সঙ্গে যান অসমের মন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও। ছিলেন কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক এবং অসম বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত দাস। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে আপ্যায়নের জন্য নানা রাজবংশী পদও রান্না হয়েছিল। কোচবিহার যাওয়ার তাড়া থাকলেও বেশ খানিকটা সময় ছিলেন অমিত শাহ।
অনন্ত জানালেন, তাঁর বাড়িতে বানানাে পিঠে-নাড়ু খেয়েছেন শাহ। তিনি বলেন, ” আমাদের বরােনি চালের পিঠে খুব সুস্বাদু। সঙ্গে নারকেল আর তিলের নাড়ু অমিত শাহ তাে নিজে থেকে নাড়ু চেয়ে নিয়েছেন।
অনন্ত রায় বলেন, “ আমরা তাে ভুখাতুর। আমাদের অনেক দাবি। উনি বলেছেন দফায় দফায় সব মেটাবেন, যতদিন মিটছে ততদিন খিদে নিয়েই থাকতে হবে।” তাঁর বাড়িতে বৈঠক সেরে কোচবিহারে যখন ওই সব ঘােষণা করছেন অমিত, তখন মহারাজের নজর ছিল টিভি-তে।
সভা শেষে অনন্ত বলেন, “ সুদিন আসবে রাজবংশীদের। অমিত ‘ জি কথা দিয়েছেন একে একে সব দাবিই মানা হবে। তবে কতদিনে সেটা হয়, তার জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকব। আর এতে আমার খুশির ব্যাপার নেই। যাদের জন্য এই ঘােষণা, সেই রাজবংশী সমাজের মানুষ খুশি কিনা সেটাই প্রশ্ন। কংগ্রেস কথা দিয়েও ধোকা দিয়েছে। এর পরে তৃণমূলকেও আমরা সমর্থন দিলেও তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযােগ করেছে।
তৃণমূল উত্তরবঙ্গে বিপুল জয় পেয়েছিল। রাজবংশীদের সমর্থনে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভস্মসুর হয়ে আমার মাথায় হাত রেখে আমাকে ভস্ম করেছেন। এ বার নিজের মাথায় হাত রেখেছেন বিজেপি। রাজবংশী দের ভােট পাওয়া নিয়ে বলেন সভায় বিজেপি-র থেকে আমাদের সংগঠনের হলুদ পতাকাই সেখানে বেশি ছিল।
তার বিরুদ্ধে যাবতীয় রাষ্ট্রলােহিতার মামলা প্রসঙ্গে অনন্ত বলেছেন, ” অপরাধ করলে তবেই তাে মামলা হবে। আমি কোনও অপরাধই করলাম না। তবু এত মামলা!” সেই মামলা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা প্রসঙ্গে অনন্ত বলছেন, ‘আমি আগ্রহী নই। আমার অদৃষ্টে যা রয়েছে তাই হবে।”
গ্রেটার কোচবিহার রাজ্যের দাবি পূরণ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে অনন্ত জানান, “নিশ্চয়ই হবে। অনেক দিন থেকেই আলােচনা চলছে। যখন রাজনাথ সিংহ কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তখন থেকেই কথা চলছে। মাস খানেক আগে দিল্লিতে গিয়ে অমিত শাহজির সঙ্গেও এ নিয়ে কথা হয়েছে। ধীরে ধীরে দাবি পূরণ হবে বলেও জানিয়েছে কেন্দ্র।
“গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসােসিয়েশন’এর অন্যতম দাবি মেনে ভারতীয় সেনায় নারায়ণী ব্যাটালিয়ন গড়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে জানান। প্রসঙ্গত, গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসােসিয়েশন মনে করে ১৯৪৯ সালে কোচবিহারের রাজা ভারতভুক্তির যে চুক্তি করেছিলেন তা মানা হয়নি।
জেলা না , চুক্তি অনুযায়ী কোচবিহারকে আলাদা রাজা বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করতে হবে। তার সীমানা শুধু কোচবিহার জেলা নয়, উত্তরবঙ্গের করতােয়া নদী থেকে অসমের বেশ কিছু অংশ নিয়ে গ্রেটার কোচবিহারের দাবিদার তাঁরা।