• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

পুজোয় ১১ দফা নির্দেশিকা

করোনা পরিস্থিতিতে কীভাবে দুর্গাপুজো হবে,মহালয়ার আগের দিনই এগারো দফা নির্দেশিকা প্রকাশ করল নবান্ন। জানিয়ে দিল এবার রেড রোডে হবে না দুর্গা পুজোর কার্নিভাল।

দুর্গা প্রতিমা (Photo@Arnab Biswas/SNS)

করোনা পরিস্থিতিতে কীভাবে দুর্গাপুজো হবে, তা নিয়ে মহালয়ার আগের দিনই এগারো দফা নির্দেশিকা প্রকাশ করল নবান্ন। জানিয়ে দিল এবার রেড রোডে হবে না দুর্গা পুজোর কার্নিভাল। নিষেধাজ্ঞা জারি রইল মণ্ডপ চত্বরের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ওপরও।

তবে এবার ছাড় দেওয়া হয়েছে দুর্গাপুজোর সময়ে সিঁদুরখেলা বা দেবীবরণের মতো রীতিতে। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে এই রীতি পালন করা যাবে। করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরও নমো নমো পুজো হয়েছিল। মণ্ডপে ঢুকে প্রতিমা দর্শনের অনুমতি ছিল না।

এবার করোনার প্রকোপ আগের বছরের তুলনায় কম। তবে গত সপ্তাহেই কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছিল যে, করোনা সংক্রমণের ইতি ঘটেনি। তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পুজোর আয়োজন করতে হবে। মঙ্গলবার পুজো নিয়ে বৈঠক হয় নবান্নে।

তারপরই রাজ্যজুড়ে দুর্গোৎসব নিয়ে নির্দেশিকা জারি করল রাজ্য সরকার। মণ্ডপসজ্জা, পুষ্পাঞ্জলি থেকে প্রতিমা দর্শন ইত্যাদি নিয়ে একগুচ্ছ নিয়ম বেঁধে দিল নবান্ন। মণ্ডপসজ্জার নিয়মে বলা হয়েছে মণ্ডপের ভেতর পর্যাপ্ত জায়গা রাখতে হবে। চারদিক খোলা রাখলেই ভালো হয়। কোনওভাবেই ভিড বা ঘেঁষাঘেঁষি চলবে না। মণ্ডপের ভেতরে যেন পারস্পারিক দূরত্ব বজায় রাখা যায়। প্রতি মণ্ডপে প্রবেশ এবং প্রস্থান পথ আলাদা হতে হবে।

এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে উৎসব কমিটিগুলিকে। মাস্ক এবং স্যানিটাইজার যথাযথ ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছে নবান্ন। মণ্ডপের ভেতরে যে স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবেন, তাঁদের সঙ্গে মাস্ক এবং স্যানিটাইজার থাকতেই হবে। দর্শনার্থীদের জন্যও পর্যাপ্ত ফেস মাস্কের ব্যবস্থা রাখতে হবে পুজো কমিটিগুলিকে। মাস্ক ছাড়া কোনও দর্শনার্থী পুজো মণ্ডপে এলে তাদের মাস্ক বিলি করতে হবে পুজো কর্তৃপক্ষকেই। পুজোর বিধিতে যাবতীয় কোভিড সতর্কতা মানতে হবে।

হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে বড় পুজোর ক্ষেত্রে মণ্ডপের ভেতরে সর্বাধিক ষাট জন এবং ছোট পুজোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পনেরো জন থাকতে পারবেনষ দর্শনার্থীদের হাঁটতে হাঁটতেই প্রতিমা দর্শন করতে হবে। মণ্ডপে মধ্যে আসা দর্শনার্থীরা যাতে দুরত্ববিধি মেনে চলেন এবং ভিড় করে দাঁড়িয়ে না পড়েন সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে স্বেচ্ছাসেবকদের। ছোট পুজোর প্যান্ডেলের বাইরে পাঁচ মিটার এবং বড় পুজোর প্যান্ডেলের বাইরে দশ মিটার দূরে ব্যারিকেড রাখতে হবে।

পুজোর বিধি মেনেই সিঁদুর খেলা, অঞ্জলি দেওয়া, প্রসাদ বিতরণ, ঢাক বাজানো ইত্যাদি কোভিড গাইডলাইন মেনে করতে হবে। ঢাকিরা নো এন্ট্রি জোনের বাইরে ঢাক বাজাবেন। পুরোহিত মাইকে মন্ত্র বলবেন। যা অনেক দূর পর্যন্ত শোনা যায়। সেই মন্ত্র শুনে অঞ্জলি দিতে হবে। মণ্ডপে ঢোকা যাবে না। দর্শনার্থীদের অঞ্জলির ফুল বাড়ি থেকে আনতে হবে।

ফুল বিতরণের সময় যাতে ঘেঁষাঘেঁষি না হয়, সেজন্যই এই ব্যবস্থা। মণ্ডপের আশেপাশে স্টেজ বেঁধে কোনও জমায়েত হবে না। পুজোতে বিচারকমণ্ডলীর জন্যও কিছু বিধি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সেরা প্রতিমা, মণ্ডপসজ্জা, আলোকসজ্জা ইত্যাদি বিচারের জন্য মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরা চলবে না বিচারকমণ্ডলীর। গোটা বিষয়টি ভার্চুয়ালি করতে হবে।

যদি একান্তই বিচার করতে হয় মণ্ডপে গিয়ে, তাহলে সকাল দশটা থেকে দুপুর তিনটের মধ্যে মণ্ডপে ঢুকতে হবে। পুজোর সময় জনসাধারণকে সতর্ক করার দায়িত্ব নিতে হবে পুলিশ এবং সংবাদমাধ্যমকেই। পুজো মণ্ডপের বাইরে যাতে ভিড় উপচে না পড়ে তার জন্য সর্বক্ষণ মাইকিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। রাস্তায় নেমে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে পুলিশকর্মীদের।

সংবাদমাধ্যমকেও দায়িত্ব নিতে হবে জনগণকে সতর্ক ও সচেতন করার জন্য। পুজো উদ্বোধনের সময় যাতে ভিড় কম হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে পুজো কমিটিগুলিকে। তুলনামূলকভাবে কম আড়ম্বরে উদ্বোধনের অনুষ্ঠান করতে হবে। যে ঘাটে বিসর্জন হবে আগে থেকে তা স্যানিটাইজ করে রাখতে হবে। বিশাল মিছিল করা চলবে না।

মঙ্গলবার রাজ্য সরকার পুজো কমিটিগুলিকে কিছু পরিষেবায় ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। জরুরিকালীন অবস্থার জন্য দমকল পরিষেবা বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। বিদ্যুৎ পরিষেবাতেও ছাড় থাকবে। এছাড়া তালিকাভুক্ত পুজো কমিটিগুলিকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা তো দেওয়া হবেই।