কথা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা নির্বাচনের আগে সাগরে মুড়িগঙ্গা নদীতে সেতু তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি তিনি রাখলেন। প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মুড়িগঙ্গা নদীর উপর তৈরি হচ্ছে সেতু। এই সেতুর জন্য রাজ্য বাজেটে টাকা বরাদ্দের পর আগেই ঘোষণা করেছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। পূর্ত দপ্তর এই সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নাবার্ডের সহযোগিতায় রুর্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের আর্থিক সহায়তায় এই সেতু আগামী সাড়ে চার বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ হবে। ইতিমধ্যে এই সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয় প্রোজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করে পাঠানো হয় নবান্নে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পর রাজ্য বাজেটে এই সেতুর জন্য অর্থ বরাদ্দ করেন। মুড়িগঙ্গায় ৩.১ কিমি দীর্ঘ চার লেনের এই সেতুর জন্য প্রাথমিকভাবে ১৪৩৯ কোটি টাকা প্রয়োজন। এই সেতু নির্মাণ হলে সাগরদ্বীপে যাওয়া আরও বেশি সহজ হবে। যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে বর্তমানে ভেসেল এবং বার্জের উপর ভরসা করতে হয় আমজনতাকে। এই সেতু নির্মাণ হলে এই এলাকার মানুষের আর্থ ও সামাজিক ব্যবস্থার মানোন্নয়ন ঘটবে এবং পর্যটনেও গতি আসবে। সাগর মেলার সময় সাগরদ্বীপে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী জমায়েত হন। এর ফলে পুণ্যার্থীদেরও অনেক সুবিধা হবে। বছরভর সাগরদ্বীপে মানুষ আসেন কপিলমুনির আশ্রম দেখার জন্য।
কাকদ্বীপ থেকে সাগর পর্যন্ত মুড়িগঙ্গা নদীর উপর এই সেতু নির্মাণের জন্য পূর্ত দপ্তরের তরফে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
সম্প্রতি পূর্ত দপ্তরের আধিকারিকরা এলাকা পরিদর্শন করেন। তারপর প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দেওয়া হয় নবান্নের তরফে। এতবড় একটি সেতু নির্মাণে যাতে অসুবিধা না হয়, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন নবান্নে। পূর্তমন্ত্রী পুলক রায়কে এ বিষয়ে অতি সক্রিয় হওয়ার জন্য বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশ মেনেই দপ্তরের আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করেন মন্ত্রী। কচুবেড়িয়ার ভেসেলঘাট সংলগ্ন আশ্রম মোড় এলাকায় দপ্তরের আধিকারিকরা পরিদর্শন করেন। এই সেতু নির্মাণের জন্য যাঁদের বাড়ি, পুকুর এবং পানের বরজ রয়েছে, তাঁদের ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিয়েও দফায় দফায় আলোচনা হয়।
মুড়িগঙ্গা সেতু নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তৈরি করার জন্য একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। তারা পুরো বিষয়টি মনিটরিং করবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলেছে নবান্ন। এই সেতুর জন্য অন্যান্য দপ্তরগুলির সঙ্গেও সমন্বয় বৈঠক হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। এ বিষয়ে পূর্তমন্ত্রী পুলক রায় জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথা দিলে যে কথা রাখেন, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এই সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এই সেতু নির্মাণ সম্ভব হবে, এমনটাই জানা গিয়েছে নবান্নের তরফে । এছাড়া অ্যাপ্রোচ রাস্তার জন্য জমি অধিগ্রহণও প্রয়োজন। সব মিলিয়ে দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার অপেক্ষায় সাগরবাসী। (দেবাশিস দাস)