আরজি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তরুণী খুন ও ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে রাজ্যের প্রতিটি কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি করেছিলেন রাজ্যের জুনিয়র চিকিৎসকেরা। কার্যত সেই আবহেই সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর হামলার ঘটনার পর, নার্স ও মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা এখন গভীর নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন।
শনিবার সকাল থেকে তাঁরা নিরাপত্তার দাবিতে সরব হয়ে উঠেছেন। এমএসভিপির ঘরের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান তোলেন নার্সরা, তাঁদের মূল দাবি—হাসপাতালে সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করতে হবে। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের এই ঘটনার পর চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে রোগীর এত পরিজন কীভাবে একসঙ্গে হাসপাতালের চার তলায় পৌঁছলেন? এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নার্সরা এবং তাঁদের দাবিদাওয়া তুলে ধরেন হাসপাতালের এমএসভিপি সুজয় মিস্ত্রির কাছে।
একজন নার্স সংবাদমাধ্যমের সামনে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ”কর্তৃপক্ষ বলছেন নিরাপত্তা আছে, তবে এত লোক কীভাবে উপরে উঠল?” তিনি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন, অভিযোগ করে বলেন যে, ঘটনার সময় পুলিশ শুধু দাঁড়িয়ে দেখছিল, কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি জানান, ”আমাদের যখন মারা হচ্ছিল, পুলিশকর্মীরা দূর থেকে দেখছিলেন।”
শুক্রবার রাতের ওই ঘটনার পর, সাগর দত্তের নার্সরাও জুনিয়র ডাক্তারদের মতোই নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। তাঁরা বলেন, ”আমরা এখানে চাকরি করতে এসেছি, মার খেতে নয়। আমাদের কাজ মানুষের সেবা দেওয়া, কিন্তু আমাদের নিজেদের সুরক্ষা কোথায়?” তাঁরা আরও অভিযোগ করেন যে, হাসপাতালে পর্যাপ্ত চেঞ্জিং রুম পর্যন্ত নেই। পাশাপাশি, পুলিশের ভূমিকা এবং এফআইআর সঠিকভাবে দায়ের করা হয়েছে কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তাঁরা।
নার্সদের দাবির বিষয়ে সাগর দত্ত হাসপাতালের এমএসভিপি সুজয় মিস্ত্রি তাঁদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। তিনি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ”সব রোগীকে বাঁচানো সম্ভব নয়। যারা গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আসে, তাদের সবাইকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব নয়। এখানে যারা আছেন, তাঁরা ডাক্তার ও নার্সিং স্টাফ, ভগবান নন।”
এমএসভিপি নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নিরাপত্তা বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন। চেঞ্জিং রুমের অভাবের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি জানান, এর সমাধানে অনুমোদন পাওয়া গেছে, তবে কাজ রাতারাতি সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয়।
অন্যদিকে, হাসপাতালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধানও জুনিয়র ডাক্তারদের নিরাপত্তার দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন এবং এই ঘটনাকে নিন্দনীয় হিসেবে কটাক্ষ করেছেন। তবে তিনি জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি তুলে নিয়ে কাজে ফেরার অনুরোধও জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সাগর দত্ত হাসপাতালে শুক্রবার রাতে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযোগ, রোগীর পরিবারের সদস্যেরা হাসপাতালের চার তলায় উঠে গিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর চড়াও হন। ভাঙচুর করা হয় মহিলাদের ওয়ার্ডে। এমনকি,আরজি কর করে দেব বলেও হুমকি দেওয়া হয় বলেঅভিযোগ। শুক্রবার রাতের ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে কামারহাটি থানার পুলিশ। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সদর্থক পদক্ষেপ না পাওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।