রবিবার ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চে বিজেপিতে যােগ দিয়ে মিঠুন সাফ বলেছেন, তার আগের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তাঁর কথায়, কারও দিকে আঙুল তুলতে চাই না। কাউকে দোষও দিচ্ছি না। আমারই সিদ্ধান্তে ভুল ছিল। প্রসঙ্গত ব্রিগেজ্ঞে সভার পরে মঞ্চের পিছনে মিঠুনের সঙ্গে আলাদা করে অন্তত পনেরাে মিনিট কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি।
মিঠুনের কথায়, ওঁর সঙ্গে আমার খুব ভালাে আলােচনা হয়েছে। সব কথা তাে প্রকাশ্যে বলা যায় না। তার আরও বক্তব্য, বাংলায় বিজেপি যথেষ্ট ভালাে জায়গা তৈরি করেছে। বাংলার মানুষ বিশ্বাস করছে ওরা রাজ্যের জন্য ভালাে কিছু করবে। তারা ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছে, সেটা কখনও মিথ্যে হতে পারে না। তার মধ্যে কিছু সততা থাকে।
মিঠুন আগেও বলেছেন, তিনি রাজনীতি নয় মাননীতি বােঝেন। কিন্তু তার কথা, সকলেরই একটা পতাকা প্রয়ােজন হয়। প্রধানমন্ত্রী আমায় ডেকে যখন কথা বললেন, আমি বললাম, আমি বাংলার জন্য কাজ করতে চাই। আমি বাংলাকে ভালােবাসি। একদা অতি বামপন্থী ছিলেন তারপর বামপন্থী।
তবে প্রয়াত সিপিএম নেতা সুভাষ চক্রবর্তী ঘনিষ্ঠ হলেও সিপিএমে সে ভাবে কখনও যােগ দেননি মিঠুন। তবে তৃণমূলে যােগ দিয়েছিলেন ২০১৪ সালে। তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভার সদস্যও হয়েছিলেন। সেই ইনিংস মাঝপথে অসমাপ্ত রেখেই তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেন কয়েক বছর আগে।
সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে ব্যথিত হয়েছিলেন এই সুপারস্টার। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে চিঠি লিখে টাকা ফেরত দেন তিনি। ।তার পর থেকে তাকে আর বিশেষ লােকসমক্ষেও দেখা যায়নি। রাজনীতি তাে দুরের কথা আচমকাই বাংলার বিধানসভা ভােটের আগে তার উদয় এবং পদ্মশিবিরে যােগদান। সে যােগদানের পর মিঠুনকে যথেষ্ট অভিভূত এবং আপ্লুত দেখিয়েছে । তা গােপন করারও কোনও চেষ্টা করেননি।
তিনি বলেছেন , এই দিনটা তার কাছে | স্বপ্নের মতাে । তা হলে কি বলতে | চাইছেন তৃণমূলে থাকার দিনগুলাে দুঃস্বপ্ন ? প্রত্যাশিত ভাবেই এর জবাব দেননি মিঠুন। মিঠুনের কথায়, আমি কখনও গিয়ে মমতাদিকে বলিনি আমার রাজ্যসভায় দিন। উনিই আমায় ডেকে বলেছিলেন। তার আগে আরও একবার বলেছিলেন । আমি তখন রাজি হইনি।
তবে দলবদল প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে মিঠুন বলেন, আমার ভাবনাটা একই আছে। দলের নামটা শুধু বদলেছে। আগাগােড়াই মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছি । সেই আদর্শ থেকেই বামপন্থী রাজনীতিতে জড়িয়েছিলাম। এখনও তাই করতে চাই। আমি মনে করি ভাবনা যদি ঠিক থাকে তবে বাকি কাজও ঠিকই হবে। ম্যায় হুঁ অ্যায়সা আদমি।
মিঠুন বলেছেন, এতদিনে মনে হচ্ছে আমার স্বপ্ন সত্যি হল। গরিবদের জন্য কাজ করা আমার বরাবরের স্বপ্ন। এতদিনে সেই স্বপ্নপূরণ হতে দেখছি আমি। ভােটের আগে বাঙালি আবেগ টানতে মিঠুনকে দলে নিয়ে বিজেপি মাস্টার স্ট্রোক দিয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতারা।
প্রত্যাশিত ভাবেই তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, মিঠুনকে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সামনে আনতে চাইছে বলে বলতে শুনছি। অনেককে। প্রশ্ন করে বলেন, ওর কি সেই রাজনৈতিক ভিত আছে, না ও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার যােগ্য? ও তাে বারবার দল পাল্টায়। ও পাল্টিবাজ। ওকে কি ভরসা করা যায়।
সৌগতর বক্তব্য সম্পর্কে মিঠুন বলেন, আমি পাল্টিবাজ হলে বাকিরা কী! মানুষের ভালােবাসা আমাকে এখানে এনেছে, ভালমন্দ সব জায়গায় আছে। আমি নিজের জন্য কারও কাছ থেকে কোনও সুবিধা নিইনি। মানুষের জন্য সাহায্য চেয়েছি। সৌগতের আরও অনুমান, মিঠুনকে ইডির ভয় দেখিয়ে বিজেপিতে যােগ দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
আগামী শুক্রবার থেকে বিজেপির হয়ে বিধানসভা ভােটের প্রচারে নামার কথা মিঠুনের। আপাতত কথা আছে তিনি কুড়িটি জনসভা এবং মিছিল করবেন। তবে ভােটের প্রচার মিঠুনের কাছে নতুন নয়। এর আগে সিপিএম নেতা সুভাষ চক্রবর্তীর স্ত্রী রমলা চক্রবর্তীর হয়ে প্রচার করেছেন তিনি।
আবার তৃণমূলের সাংসদ থাকার সময় মমতার প্রার্থীদের হয়েও নিরলস প্রচার করেছেন। মঞ্চে নেচেছেন। সিনেমায় তার জনপ্রিয় ডায়লগ আউড়েছেন। কিন্তু এরপর কি একধাপ এগিয়ে তিনি ভােটে প্রার্থী হবেন? মিঠুনের জবাব একদিনেই সব বলে দেব নাকি? আমি তাে ফিল্মের লােক। ধীরে ধীরে পাতা খুলব। তখনই জানতে পারবেন।