একদা নরেন্দ্র মােদির ভোট কৌশলী ছিলেন তিনি। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজনীতির ব্যাপার-স্যাপারে পেশাদার পরামর্শ দেন। সেই তিনি প্রশান্ত কিশাের, সােমবার সকালে কিছুটা চমকেই দিলেন বাংলার তৃণমূল নেতাকর্মীদের।
রবিবার রাতে হিউস্টনে একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডােনাল্ড ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। যে মঞ্চকে ব্যবহার করে মােদি যেমন ট্রাম্পর এক প্রকার ভােট প্রচার করে দিয়েছেন, তেমনই ভারতের উন্নয়ন যাত্রা ও স্বপ্নপূরণের পথে সবরকম সহযােগিতার অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প।
প্রসঙ্গত, আগামী বছর আমরিকায় নির্বাচন আসন্ন। তার আগে রবিবার হিউস্টনের মঞ্চ থেকে মােদি স্লোগান তােলেন, ‘আব কি বার ট্রাম্প সরকার’। সােমবার তা নিয়েই প্রশান্ত বললেন, বাহু এতাে অভূতপূর্ব’।
এদিন সকাল দশটা নাগাদ টুইট করেন প্রশান্ত। তাতে বলেন, ‘আমেরিকায় আসন্ন নির্বাচনের আগে মার্কিন রাষ্ট্রপতি যখন কিছুটা বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে, তখন যে কৌশলে মােদির তার পূর্ণ সুযােগ নিতে চাইলেন, তা বেশ স্মার্ট’।
প্রশান্তের কথায়, মােদি এক্ষেত্রে কৌশলে সংখ্যাটাই হাতিয়ার করেছেন। এবং গণতন্ত্রে সংখ্যাই সব। অর্থাৎ আমেরিকায় যে বিপুল সংখ্যক অনাবাসী ভারতীয় তথা ‘আমেরিকান ইন্ডিয়ান’ রয়েছেন, তা-ই নয়া দিল্লির শক্তি। তারা যাতে ভােটে ট্রাম্পের হাত শক্ত করেন, সেজন্য মােদি প্রকারান্তরে আহ্বান জানিয়েছে। আর বিনিময়ে আদায় করে নিতে চেয়েছেন কৌশলগত ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের মদত।
প্রশান্ত কিশােরের বক্তব্য, এর আগে এত ভালাে করে এই কৌশলের কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীই ব্যবহার করতে পারেননি। সন্দেহ নেই প্রশান্তের এই অবস্থান তৃণমূলের অনেককেই বিভ্রান্ত করতে শুরু করেছে। বাংলায় এখন প্রশান্ত কিশােরের নাম সবার মুখে মুখে। তৃণমূলের নেতারাই বলেন, এখন দল চালাচ্ছেন তিনজন, দিদি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশান্ত কিশাের।
এমনিতেই মমতার সম্প্রতি নয়া দিল্লি সফর এবং মােদি-অমিত শাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ রাজ্য রাজনীতিতে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। মােদির ব্যাপারে যেরকম নরম কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী, তাতে বিরােধীরা যেমন টিপ্পনি কেটে বলেছেন, তৃণমূল তা হলে আত্মসমর্পণ করল? তেমনই সেই প্রশ্ন উঠছে তৃণমূলের অন্দরেও, তার মধ্যেই আবার প্রশান্তের এই টুইট।
দ্বিতীয়ত, প্রশান্তের এই অবস্থানে তৃণমুলের অনেক পােড় খাওয়া নেতা সহমত নন। তাদের বক্তব্য, আমেরিকার সঙ্গে নয়া দিল্লির কালােত্তীর্ণ কুটনৈতিক সম্পর্কের শর্ত লঙঘন করেছেন মােদি। তিনি হিউস্টনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প তথা রিপাবলিকান পার্টির হয়ে প্রচার করেছেন। অথচ নয়া দিল্লি বরাবর আমেরিকায় দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেই গুরুত্ব দিয়ে এসেছে অর্থাৎ রাজনৈতিক ভাবে ডেমােক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের সমান গুরুত্ব দিয়েছে তৃণমূলের এক নেতার কথায়, প্রশান্ত কিশাের যে আদতে স্রেফ একজন কৌশলী, মতাদর্শগত কোনও গভীরতা বা বােধ নেই, তা তার এই টুইট প্রমাণ করে। তার রাজনৈতিক বােধের পরিধি যদি এই হয়, তাহলে তাঁর পরামর্শ তৃণমূলের জন্য কতটা কার্যকরী হয়ে উঠবে, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়ে গেল আজ।