প্রথমে কেরালা, তারপর দিল্লি এবং দিল্লির পর পশ্চিমবঙ্গে প্লাজমা পদ্ধতিতে করোনা চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথম দুই রাজ্যে প্লাজমা পদ্ধতিতে করোনা চিকিৎসায় সাফল্য মেলায় এবার এই পথেই হাঁটতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ। আগামী সপ্তাহে এবিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে এই উদ্যোগ নেবে সিএসআইআর, আইআইসিবি।
রাজ্যের প্রথম করোনামুক্ত নাগরিক হাবড়ার তরুণী মনামী বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযো করেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে কর্তারা। প্লাজমা তৈরির জন্য এগিয়ে এসে রক্ত দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে তাঁকে। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়েছে মনামী। বৃহস্পতিবার নিজের জন্মদিন পালন করছিলেন মনামী। সেই সময় ফোন যায় প্রশাসনের তরফে।
উল্লেখ্য, এপ্রিলের শুরুতে স্কটল্যান্ড থেকে রাজ্যে ফেরেন এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্টের এই ছাত্রী। গলা ব্যথা থাকায় সচেতনতার পরিচয় দিয়ে নিজেই ভর্তি হয়েছিলেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন হাবড়ার ওই তরুণী।
মনামী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারবো জেনে ভালো লাগছে। আমি এই সম্পর্কে পড়াশুনা করেছি। তবে ঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানতাম না।
এদিকে প্লাজমা পদ্ধতি প্রয়োগ করে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করতে ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়া অন্যান্য রোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। তারাও জানিয়েছেন, শারীরিক কোনও সমস্যা না হলে তারাও রক্তদানে প্রস্তুত। এত অন্ধকারে মধ্যেও এই প্লাজমা পদ্ধতিতে করোনাকে রুখতে আশার আলো দেখছেন সকলে।
প্লাজমা পদ্ধতি প্রয়োগ ঠিক কি? কোনো ব্যক্তি করোনা সংক্রমণ থেকে একবার সুস্থ হয়ে উঠলে তার শরীরে সংশ্লিষ্ট ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। পরবর্তী ধাপে সেই সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির রক্ত থেকে প্লাজমা নিয়ে অসুস্থ ব্যক্তির শরীরে চিকিৎসা করা হয়।
সম্প্রতি পাঞ্জাব ও দিল্লিতে প্লাজমা প্রয়োগ পদ্ধতি ট্রায়ালে সফল হয়েছে। উল্লেখ্য, করোনা রোগীদের উপরে প্লাজমা থেরাপি সন্তোষজনক ফল দিয়েছে বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি জানান, দিল্লির লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতালে চারজন করোনা রোগীর চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি ব্যবহার করা হচ্ছিল গত কয়েকদিন ধরে। এখনও অবধি এই চিকিৎসায় ভাল কাজ হয়েছে। রোগীদের শারীরিক অবস্থাও স্থিতিশীল।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর) অনুমোদনের পরেই দিল্লি, গুজরাত ও কেরলে প্লাজমা থেরাপির ট্রায়াল শুরু হয়। দিল্লিতে এই থেরাপির ট্রায়াল সফল বলে দাবি করা হয়েছিল স্বাস্থ্য দফতরের তরফে।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, যে রোগীদের উপরে প্লাজমা থেরাপির প্রয়োগ হয়েছে তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এখনও অবধি এই থেরাপির রেজাল্ট বেশ ভালোর দিকেই। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) জানিয়েছিল যতদিন না কোভিড ভ্যাকসিন ও কার্যকরী ড্রাগ বাজারে আসছে, বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করা যেতেই পারে।