অভিনেতা তথা রাজনীতিবিদ তাপস পালের অকালপ্রয়াণে সিবিআইকেই কাঠগড়ায় তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতিকেই দায়ী করলেন। রবীন্দ্রসদনে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন মমতা।
বুধবার রবীন্দ্রসদনে তাপল পালকে চিরবিদায় জানাতে এসে আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে। তৃণমূল নেত্রী বলেন, আমি তাপসের মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে অসময়ে চলে যেতে হল তাপসকে। মৃত্যুর আগে জানতেও পারল না ওর কী অপরাধ ছিল।
পাশে দাঁড়ানাে সুদীপ বন্দোপাধ্যায়ের দিকে তাকিয়ে মমতা বলেন, একটা এন্টারটনমেন্ট চ্যানেলের ডিরক্টের ছিল তাপস। সেখান থেকে মাইনে পেয়েছিল। সেই চ্যানেলের সঙ্গে কোনও অর্থলগ্নী সংস্থার যাে গাযােগ ছিল। কিন্তু সেই কারণে তাপস পালের মতাে একজন নাম্বার ওয়ান অভিনেতাকে এক বছর এক মাস জেলে রাখা হল। কোনও চার্জশিট তৈরি হল না। অথচ বন্দি করে রাখা হল।
এইভাবে মানসিকভাবে অত্যাচারিত হয়ে তাপস ভয়ানক বিপর্যস্ত, ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছিল। তাই মমতার মতে, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে একটা এজেন্সির অত্যাচারে এই মৃত্যু।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন রবীন্দ্রসদনে তাপস পালের মরদেহের সামনেই বলেন, এই নিয়ে তিনজনের মৃত্যু হল কেন্দ্রীয় এজেন্সির চাপে। বছর দেড়েক আগে মৃত্যু হয়েছে সুলতান আহমেদের। আমি তাঁর পরিবারের লােকজনের কাছে শুনেছি, সিবিআই তাঁকে চিঠি পাঠাল, তারপর কী একটা ফোন এল, তারপরই সে বাথরুমে গেল আর মারা গেলেন। প্রাক্তন ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী পারমিতার মৃত্যুর জন্যও কেন্দ্রীয় সরকার। আর এজেন্সির অত্যাচারের তৃতীয় বলি তাপস পাল।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী শ্রীকান্ত মােহতার প্রসঙ্গও তােলেন। যিনি টালিগঞ্জের অধিকাংশ ছবির প্রযােজনা করতেন। তাঁকেও এক বছরের ওপর সিবিআই আটক করে রেখেছে। হাজতে থাকাকালীন তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। একবার স্ট্রোকও হয়ে গিয়েছে তাঁর।
মমতা এদিন বলেন, বিভিন্ন অভিনেতা অভিনেত্রী বিভিন্ন কোম্পানিতে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার হিসেবে কাজ করেন। সেই কাজ করতে গিয়ে যদি অত্যাচারের শিকার হতে হয়, অকাল মৃত্যু ঘটে, তাহলে কী বলার থাকতে পারে। আইনের চোখে কেউ অপরাধী হলে আইন তার বিচার করবে। কিন্তু বিচারের নাম করে দীর্ঘদিন আটকে রেখে দেওয়া উচিত নয়।
রাজনীতিতে টালিগঞ্জের তারকাদের নিয়ে আসার নেপথ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা বড় ভূমিকা ছিল। তৃণমুল স্থাপনার প্রথম লগ্নে যাঁরা রাজনীতিতে এসে ভােটব্যাঙ্কে সাফল্য এনে দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম তাপস পাল। শেষের দিকে তাপস পালের কিছু মন্তব্যের জন্য কিছুটা হলেও দুরত্ব বেড়েছিল তৃণমূল সুপ্রিমাের।
এরপর সিবিআই গ্রেফতারির পর তাপস পালের সঙ্গে সংযােগ একরকম বিচ্ছিন্নই হয়ে গিয়েছিল মমতার। শেষ বিদায় জানাতে এসে বিজেপির প্রতি অনুযােগের মাধ্যমেই অনুশােচনা আড়াল করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।