‘আমি মৃত তৃণমূল নেতা কুরবান শাহ’র মৃতদেহে হাত রেখে বলছি পাঁশকুড়ার বিজেপি নেতা (আনিসুর রহমান) জেলে ঢুকবে, আর কোনওদিন বেরােতে পারবে না। তার জন্য আইনি যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা আমি নেব’। মঙ্গলবার একথা বলেন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। নবমীর রাতেই নৃশংসভাবে খুন হন তৃণমূলের জেলার জনপ্রিয় এক যুব নেতা। দলীয় কার্যালয়ে ঢুকেই দুষ্কৃতীরা গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় ৩২ বছর বয়সী ওই নেতাকে।
কুরবান শাহ পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ও পাঁশকুড়া ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। শুধু তাই নয়, তার স্ত্রী সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। ঘটনায় নাম না করে এর পিছনে তৃণমূলেরই প্রাক্তন যুব নেতা তথা বর্তমান বিজেপি নেতা আনিসুর রহমানকেই দায়ী করেছেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। আনিসুর অবশ্য অভিযােগ অস্বীকার করেছেন। অন্যদিকে কুরবানের পরিবার স্থানীয় পুলিশের পরিবর্তে সিআইডি তদন্ত দাবি করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে সােমবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ। কুরবান তখন সঙ্গীদের নিয়ে মাইসােরার দলীয় কার্যালয়ে বসেছিলেন। পাঁশকুড়ার দিক থেকে তিনটি বাইকে করে সাত দুষ্কৃতী গুলি ছুড়তে ছুড়তে এসে দাঁড়ায়। অফিসের বাইরে কিছু দূরে গল্প করছিল কুরবানের অনুগামীরা। দুষ্কৃতীরা সােজা কুরবানের কাছে গিয়ে একাধিক গুলি করে। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন তিনি।
হতচকিতভাব কাটিয়ে উঠেই অনুগামীরা দুষ্কৃতীদের লক্ষ্য করে ইটপাথর ছুড়লেও তারা গুলি করতে করতেই চম্পট দেয়। খবর পেয়েই ছুটে যায় পাঁশকুড়া থানার পুলিশ। মৃতদেহ তারাই উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এলাকায় তীব্র আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে সরব হয়েছে এলাকাবাসী। শােকাচ্ছন্ন শাহ পরিবার কথা বলার মতাে পরিস্থিতিতে নেই তার স্ত্রী মাইসাের গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সায়েদা বানু খাতুন।
কুরবানের দাদা আফজল আলি শাহ ভাইয়ের মৃত্যুর সিআইডি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই রাজনৈতিক কারণেই খুন হয়েছে। দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারে একমাত্র সিআইডি’। সকালে এলাকায় যান মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘কার পরামর্শ ও নেতৃত্বে এই খুন তা সবাই জানে। তিনি জেলে ছিলেন। এখন বাইরে এসে এইসব করাচ্ছেন। খুনের বন্দোবস্ত করেই তিনি জেলা ছেড়েছেন’। মন্ত্রীর আঙুল তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা যুব সভাপতি ও বর্তমান বিজেপি নেতা আনিসুর রহমানের দিকে। শুভেন্দুর দাবি, খড়গপুর ও ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতীদের ভাড়া করেই এই কাজ করানাে হয়েছে।
আনিসুর অবশ্য অভিযােগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, তিনি এর বিন্দুবিসর্গ জানেন না। তিনি কঁচরাপাড়ায় মুকুল রায়ের বাড়িতে রয়েছেন। উল্লেখ্য, তৃণমূলের জেলা যুব সভাপতি থাকাকালীন আনিসুরের সঙ্গে নিহত কুরবানের সম্পর্ক খুব খারাপ হয়ে উঠেছিল। যদিও দুজনেই এক সময় শুভেন্দু অধিকারীর খুবই কাছের ছিলেন। বুধবার দফায় দফায় বেশ কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এর মধ্যে আনিসুরের ভাইও রয়েছে। পুলিশ সুপার ভি সলেমন নেশাকুমার জানান তদন্ত চলছে। এখনই সব কিছু বলা যাবে না। মঙ্গলবার তৃণমূল নেতার শেষকৃত্যে সাংসদ তথা জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী থেকে বিধায়ক, জেলা পরিষদের সভাপতি সকলেই উপস্থিত ছিলেন।