দলীয় রাজনীতি নিয়ে পুলিশের ব্যস্ততা, খারাপ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: এএনআই।

পুলিশের ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে কেউ রাজি নয়। কিন্তু দলীয় রাজনীতির ঘরোয়া বিষয়ে পুলিশের নাক গলানো নিয়ে আড়ালে প্রায় প্রত্যেক তৃণমূল নেতাই সরব। এক পা বাড়িয়ে এইসব তৃণমূল নেতারা একথাও বলছেন পুলিশ আজকাল রাজনীতি নিয়ে বেশি মাথা ঘামানোর ফলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করার কাজে তাদের সেভাবে মন নেই। ফলে শহর জুড়ে বাড়ছে অপরাধমূলক কার্যকলাপ।

আরজিকর কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের সব হাসপাতালে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও খড়গপুর হাসপাতালে থাকা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে রোগী দেখে ফেরার পথে বহিরাগত দুষ্কৃতিদের হাতে বুধবার রাতে মার খেতে হয়েছে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের ২৫ নং ওয়ার্ড সভাপতি জীবন বিশ্বাস ও তার বন্ধু গণেশ খিলাড়িকে । দুষ্কৃতীরা জীবনবাবুর গলার প্রায় পাঁচ ভরি ওজনের সোনার হার ছিনতাইও করে। চোখের সামনে দুষ্কৃতিদের তাণ্ডব চললেও ফাঁড়ি থেকে বেরিয়ে এসে পুলিশ কর্মীরা দুষ্কৃতিদের ধরতে উৎসাহ দেখাননি ।
এই ঘটনার দিন তিনেক আগে ভরদুপুরে কৌশল্যা থেকে পানাছত্রে নিজেদের হাউসিং কমপ্লেক্সে ফেরার সময় এক দম্পতির বাইক থামায় কয়েকজন দুষ্কৃতি । মহিলার গলার সোনার হার দেখিয়ে এক দুষ্কৃতী বলে, ‘পুলিশ বারণ করা সত্ত্বেও গলায় সোনার হার পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন । আপনাদের সাহস তো মন্দ নয়।’ এরপর ভদ্রমহিলার গলার সোনার হার তারা খুলে নেয়।
এর আগে উন্মত্ত জনতার হাতে মার খেতে হয়েছে খোদ খড়গপুর টাউন থানার আইসিকে। তারও পরে নাবালককে অপহরণ করে খুন করার ঘটনা ঘটেছে এই রেল শহরে। এছাড়াও শহর এবং শহর লাগোয়া গ্রামীণ এলাকায় নানা ধরনের অপরাধ মূলক কার্যকলাপ চললেও পুলিশ সেই ভাবে অপরাধ দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেনি বলেই অভিযোগ খোদ রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের ।

অপরাধ দমনে পুলিশের ব্যর্থতা তুলে ধরার পাশাপাশি শাসক দলের ঘরোয়া কোন্দল নিয়ে পুলিশের অতি উৎসাহ নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন খড়্গপুরের তৃণমূল নেতারা। তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, নানা অছিলায় তৃণমূলের নেতাদের থানায় ডেকে পাঠিয়ে তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করতেই বেশি ব্যস্ত পুলিশ। সাধারণ মানুষকেও অভিযোগ জানাতে গিয়ে থানায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে অনুযোগ তৃণমূল নেতাদেরই। কোন নেতার গোষ্ঠীতে কোন কাউন্সিলর রয়েছেন, কোন কাউন্সিলরের দুর্বলতা কোথায়, কোনও তৃণমূল নেতা বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন কি না, নেতাদের পারস্পরিক সম্পর্ক কী রকম – এইসব নানা রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা করতেই পুলিশ বেশি ব্যস্ত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশের । কিন্তু পুলিশ বর্তমানে রাজ্যের শাসকদলের শৃঙ্খলা রক্ষা করতেই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে শহরে অপরাধমূলক কার্যকলাপ থামানোর দিকে তাদের নজর নেই।’