ষাট দশকের বিশিষ্ট কবি আশিস সান্যাল সোমবার রাত সাড়ে এগারোটায় কলকাতার যাদবপুরে নিজস্ব বাসভবনে প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। কিছুদিন বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ ছিলেন। তাঁর স্ত্রী রত্না সান্যাল, কন্যা দূর্বা ভট্টাচার্য এবং জামাতা ও নাতনি বর্তমান।
কবি আশিস সান্যালের জন্ম ১৯৩৮ সালে অবিভক্ত বাংলার ময়মনসিংহ জেলার একটি ছোট গ্রাম সুসংদুর্গাপুরে। দেশভাগের কারণে নয় বছর বয়সে চলে আসেন কলকাতায়। ছাত্রাবস্থাতেই প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘শেষ অন্ধকার প্রথম আলো’। দীর্ঘকাল তিনি অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাংলার কাব্য জগতের ষাটের দশকের কবিদের মধ্যে তিনি একটি উজ্জ্বল নাম। কবিতা ছাড়াও গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং শিশুসাহিত্য সৃষ্টিতে ছিল তাঁর অনায়াস নৈপুণ্য। তাঁর রচিত গ্রন্থ সংখ্যা ১২০টিরও বেশি। তাঁর কবিতা যেমন বিভিন্ন বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, তেমনি তিনিও বিভিন্ন ভাষার সাহিত্য অনুবাদ করেছেন বাংলায়। তিনি কবি ও লেখক হিসেবে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এবং বাইরের বিভিন্ন দেশে সাহিত্য উৎসব ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন।
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের প্রতি গভীর বিশ্বাস থেকে তিনি ১৯৬৮ সাল থেকে সর্ব ভারতীয় কবি সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন, যা এই কলকাতা শহরে প্রথম। প্রথম পূর্বাঞ্চলীয় লেখক সম্মেলন, প্রথম আফ্রো-এশিয়ান লেখক সম্মেলন এবং প্রথম সার্কভুক্ত দেশগুলির লেখক সম্মেলনের আয়োজন করেছেন তিনি। আশিস সান্যাল বহু মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। ভূয়ালকা, মাইকেল মধুসূদন, বিষ্ণু দে, কলাভারতী, বিশ্ব কবিতা পরিষদ (বাংলাদেশ), আইসিসিএলপি (নরওয়ে) সম্মান তাদের অন্যতম। ১৯৮৯ সালে তাঁকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করে ভারত সরকার। ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। এছাড়াও ভারত সরকারের সামাজিক ন্যায় বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের অধীনে বাংলায় অনূদিত আম্বেদকর রচনার সম্পাদক ছিলেন তিনি।
তাঁর কবিতায় প্রকৃতি এবং মানবতা বোধ বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এক ধরনের সারল্য ছিল তাঁর কবিতার প্রধান গৌরব। তাঁর মৃত্যুতে একটি দীর্ঘ যুগের অবসান হল।