একশো বছর পর রাজ্যে নতুন মৌজা ম্যাপ তৈরির পরিকল্পনা

নবান্ন। ফাইল চিত্র

রাজ্য সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। ভূ-মানচিত্রে ১০০ বছর আগে তৈরি করা মৌজা ম্যাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। থাকবে না সাবেক সিএস ম্যাপ। ফলে ১০০ বছর বাদে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন করে কাজ শুরুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ১৯২৫ সালে শেষবার মৌজা ম্যাপ চালু করা হয়েছিল। যা আমিনদের কাছে ‘ক্যাডাস্ট্রাল ম্যাপ’ বা সিএস ম্যাপ বলেও পরিচিত। ২০২৪ সালে প্রায় ১০০ বছর পর সেই ম্যাপ সংশোধনের পরিকল্পনা নিয়েছে নবান্ন।

প্রসঙ্গত এই ১০০ বছরে রাজ্যে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। রাজ্যের এমন অনেক জায়গা রয়েছে, আগে যেখানে প্রত্যন্ত গ্রাম ছিল, এখন সেটা ঝাঁ চকচকে শহর। এলাকার প্রশাসনিক পরিচিতিরও অনেক রদ-বদল ঘটেছে। আগে যেটা ছিল পঞ্চায়েত, এখন সেটা পৌরসভা অথবা পুরসভা। গড়ে উঠেছে একাধিক শিল্প তালুক, শিল্প-করিডর, নতুন রাস্তাঘাট, এক্সপ্রেসওয়ে, রেললাইন, স্কুল-কলেজ, বিল্ডিং সহ আরও অনেক কিছু। ফলে ভৌগোলিক পরিবেশ পাল্টে গিয়েছে। জমির চরিত্রেরও ব্যাপক বদল ঘটেছে।

সেজন্য এই পরিবর্তনের ওপর ভিত্তি করেই নতুন সিএস ম্যাপ প্রকাশ করতে চলেছে নবান্ন। জমির বর্তমান চরিত্র অনুযায়ী, নতুন মৌজা মানচিত্রের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেজন্য উপগ্রহ চিত্রের সাহায্য নেওয়া হবে। নেওয়া হবে ড্রোনের সাহায্যও। প্রতিটি মৌজা ধরে ধরে নিখুঁতভাবে খতিয়ে দেখা হবে প্রতিটি এলাকা। এই ভেরিফিকেশন হবে রাজ্য সরকারের ‘ডিরেক্টরেট অফ ল্যান্ড রেকর্ডস অ্যান্ড সার্ভে’ বিভাগের তত্ত্বাবধানে। হাই রেজোলিউশন উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে তৈরি করা হবে নতুন ম্যাপ।


তিন ধাপে এই সমীক্ষা করা হবে বলে জানা গিয়েছে। প্রথম পর্বে হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং পূর্ব বর্ধমানের সমীক্ষা করা হবে। দ্বিতীয় পর্বে পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা এবং তৃতীয় পর্বে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কালিম্পং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ এবং মুর্শিদাবাদে।

রাজ্যে বর্তমানে মোট মৌজার সংখ্যা ৪২ হাজার ৩০২টি। কিন্তু ৬৮ হাজার ৪৫৩টি সিএস ম্যাপ তৈরি করা হবে। কারণ, ৪২ হাজার ৩০২টির মধ্যে অনেক মৌজায় দ্বীপাঞ্চল, পাহাড়ি এলাকাও রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে একটি মৌজার জন্য একাধিক মানচিত্র তৈরি করা হবে।

নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১০০ বছরে রাজ্যের প্রায় প্রতিটি মৌজা এলাকার চরিত্রগত বদল ঘটেছে। ফলে কোনও মৌজা এলাকার ৩২ শতাংশ জমির চরিত্র বদল হলেই নতুন করে এই সার্ভে করার নিয়ম জারি করা হয়েছে। এক সময়ের প্রত্যন্ত গ্রাম রাজারহাট-নিউটাউন, এমনকি কল্যাণীও আধুনিক শহরে পরিণত হয়েছে। আবার লবণ হ্রদ বলে পরিচিত বিধাননগরের বিস্তীর্ণ ভেড়ি বা জলাভূমি এলাকা এখন কলকাতা শহরের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। একইভাবে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলার প্রত্যন্ত গ্রামেরও ভূমি চরিত্রের আমূল বদল ঘটেছে। অথচ জমির ম্যাপের কোনও সংশোধন করা হয়নি এই দীর্ঘ সময়ে। অনেক জায়গায় জমির চরিত্রেরও বদল করা হয়নি। ফলে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমুখী পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে। সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতেই নতুন সিএস ম্যাপ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে নবান্ন।

নতুন সিএস ম্যাপে নতুন করে চিহ্নিত হবে কৃষিজমি থেকে শুরু করে আবাসন, জলাভূমি, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, রেললাইন, এক্সপ্রেসওয়ে, শিল্পতালুক। নতুন ভূ-মানচিত্রে এইসব এলাকার সার্বিক তথ্য তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি, সরকারের স্বাস্থ্য পরিকল্পনার কথা মাথায় রেখে করা হবে ভেক্টর সার্ভে। যাতে মশার বংশবৃদ্ধি থেকে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।