শান্তস্বভাবের হাবিবুল্লাহ জঙ্গি? বিশ্বাস করতে পারছে না কাঁকসার মীরপাড়ার বাসিন্দারা

নিজস্ব প্রতিনিধি: ফের জঙ্গি সংযোগের কেন্দ্র হিসাবে উঠে এলো বর্ধমান জেলার নাম।শনিবার জঙ্গি সন্দেহে কাঁকসা থেকে এক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। এই ঘটনাতে তীব্র চাঞ্চল্য পড়ে গেছে এলাকায়।  অভিযুক্ত মানকর কলেজের দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র হাবিবুল্লাহ শেখ।বছর কুড়ির হাবিবুল্লাহ কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন। শান্ত স্বভাবের হাবিবুল্লাহ যে কোনও জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য হতে পারে? সে কথা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না কাঁকসার মীরপড়ার বাসিন্দারা। এলাকাবাসীদের দাবি, -‘ হাবিবুল্লাহকে তাঁরা মেধাবী ছাত্র হিসাবেই জানতেন। পাড়ার কারও সঙ্গে তেমন মেলামেশা ছিল না তার। শুধু কলেজে যাওয়া-আসা করার সময়ই তাকে বাড়ির বাইরে দেখা যেত’।

এদিন  দুপুরে পুলিশের চারটি গাড়ি হাবিবুল্লাহদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। পুলিশকে তাঁদের বাড়ির ভিতরে ঢুকতে দেখে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। হাবিবুল্লাহদের বাড়ি সামনে তখন কৌতূহলী মানুষের ভিড় জমে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ ওই কলেজ পড়ুয়াকে পাঁজাকোলা করে গাড়িতে তুলে কাঁকসা থানার দিকে রওনা দেয়। এমনটাই জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। এক প্রতিবেশী জানিয়েছেন  “খুবই শান্ত স্বভাবের ছিল হাবিবুল্লাহ। বাড়ি থেকে খুব একটা বেরত না। এমন ছেলে এমন কিছুর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে সেটা বিশ্বাস হচ্ছে না। তবে সমস্ত কথা জানার পরে মনে আতঙ্ক রয়েছে।” একই কথা বলছেন, মীরপাড়ার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা রাজীব মল্লিক। পেশায় তিনি গাড়ি চালক। তিনি বলেছেন, “কলেজে যাওয়া ছাড়াও ছেলেটাকে শুক্রবার নিয়ম করে মসজিদে যেতে দেখতাম। ও এমন কোনও সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হবে এটা আমার বিশ্বাস হয় না।”

ওই পাড়ায় আরও এক তরুণ সৈয়দ আরিয়ান আলি। হাবিবুল্লাহর বাড়ি পিছনেই তাঁদের বাড়ি। এদিন তিনিও দেখেছেন পুলিশ হাবিবুল্লাহকে নিয়ে যাচ্ছে। আরিয়ান বলেন, “ওর সঙ্গে কোনও বন্ধুত্ব ছিল না আমার। রাস্তায় আসতে যেতে ওকে দেখতাম। সারাক্ষণ পড়াশোনাই করত। পাশের বাড়ির সমবয়সি এক তরুণের সঙ্গে মাঝে মধ্যে কলেজে যেতে দেখেছিলাম।” এলাকায় মুদির দোকান রয়েছে কল্পনা পালের। তিনি বলেন, “হাবিবুল্লাহর বাবা ভীষণ ভাল মানুষ। ওনার ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা রয়েছে। যখন ছেলেটাকে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমি দোকানে ছিলাম না। শুনেছি চার গাড়ি পুলিশ এসেছিল।”পুলিশ জানিয়েছেন, হাবিবুল্লাহকে দেখে কারও বোঝার উপায় ছিল না সে কোনও জঙ্গি সংগঠনের সদস্য।


বাড়িতে বসেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তথ্য আদান-প্রদান চলত বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের মডিউল ‘শাহদাত’-এর সঙ্গে। একটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ খুলে জঙ্গি সংগঠনের প্রচার চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বেশ কিছুদিন ধরে সাদা পোশাকে এসটিএফ হাবিবুল্লাহর গতিবিধির উপরে নজর রাখছিল। ধৃতের বিরুদ্ধে কাঁকসা থানায় ইউএপিএ সহ একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে। রবিবার ধৃতকে আদালতে তোলা হয়।বছর আটেক আগে এক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াকে গোপালপুর পশ্চিম পাড়ার রাসতলার একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছিল রাজ্য পুলিশের সিআইডি। সে কলেজ পড়ুয়া পরিচয় দিয়ে মেস ভাড়া নিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, সে এক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। মেধাবি ওই ছাত্রও কোনওভাবে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল। এত বছর পরে ফের আরও এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠল।এলাকায় চাঞ্চল্য রয়েছে ।