নিজস্ব প্রতিনিধি– ডায়মন্ড হারবারে ভোট জল্পনায় ইতি। ‘ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশন’ অর্থাৎ ‘স্বাধীন এবং স্বচ্ছ নির্বাচন’ হয়েছে অভিষেক-গড় ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্র তথা গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতেই, তা মেনে নিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার নিজেই। সেই মর্মেই লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর রাজীব কুমার একটি প্রশংসাপত্র পাঠিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার এসপি রাহুল গোস্বামী কে। সেই প্রশংসাপত্রে রাজীব কুমার লিখেছেন, ২০২৪ এর ১৬ই মার্চ নির্বাচনী নির্ঘন্ট প্রকাশ হতেই গোটা দেশে সুষ্ঠ এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। হিংসাকে দূরে সরিয়ে এবং রিপোল বা পুনঃনির্বাচনের সংখ্যা কমিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রয়োগ করার পথ সুগম করাই ছিল একমাত্র লক্ষ্য। আর সেটিই সুনিশ্চিত করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী তথা প্রশাসন। তিনি ওই চিঠিতে আরও লেখেন, “আমার বলতে দ্বিধা নেই যে, আপনি (রাহুল গোস্বামী) কেবল আমাদের বিশ্বাস অর্জন করেছেন তা নয় পাশাপাশি সংগঠনের মর্যাদাও বৃদ্ধি করেছেন। আপনাদের কার্যের তৎপরতায় আমি কমিশনের তরফ থেকে আপনার অধীনে থাকা পুলিশদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক অনুশীলনকে সফল করার জন্য আপনাকে এবং আপনার সহকর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”
ডায়মন্ড হারবার তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জুড়েই স্বচ্ছ নির্বাচন সংঘটিত হয়েছে। নির্বাচন চলাকালীন বাংলায় হিংসার ঘটনা ঘটেনি, এই ছবি বিরল। তবে এবার দীর্ঘ বছরের রেকর্ড ভেঙে চব্বিশের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে শান্তিপূর্ণ ভাবেই। হতাহতের বা রক্তারক্তির ঘটনা তেমন ঘটেনি। বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু অঞ্চল উত্তপ্ত হয়ে উঠলেও কেন্দ্রীয় বাহিনী, পুলিশ প্রশাসন এবং প্রার্থী সকলে মিলেই পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। পাশাপাশি এবার বাংলায় দেখা গিয়েছে, মহিলারা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নিজ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগে অংশগ্রহণ করেছিলেন, যা গণতন্ত্রের পক্ষে ভালো। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ডায়মন্ড হারবারের বিক্ষিপ্ত কিছু অঞ্চল অশান্ত হয়ে উঠেছিল নির্বাচনের দিন। কোথাও দেখা গিয়েছে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, আবার কোথাও দেখা গিয়েছে পোলিং এজেন্টকেই বসতে দেওয়া হচ্ছিলো না। বিজেপির অভিযোগ ছিল, ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রের ফলতা বিধানসভার সব ক’টি বুথে কারচুপি হয়েছে। পাশাপাশি বজবজ, মহেশতলা বিধানসভার দিকেও উঠেছিল আঙ্গুল। যদিও বাস্তব চিত্রটা ছিল অন্যরকম। দেখা গিয়েছিল, ভোটের দিন সকাল থেকে দফায় দফায় জনসাধারণের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ দাস ওরফে ববি। কখনও তাঁর গাড়ি আটকে দেওয়া হয়েছিল, আবার কখনও তাঁকে ঘিরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিয়েছিলেন সাধারণ জনতা। গ্রামের মহিলারা অভিজিৎ কে লক্ষ করে বলেছিলেন, “আমরা ১০০ দিনের টাকা চাই। এখানে তো শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে, তিনি কেন আসবেন?” এই প্রসঙ্গেই বিজেপি পুনঃনির্বাচনের দাবি তোলে। পাল্টা তৃণমূল দাবি করে, বিজেপি প্রার্থী জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত জনরোষের সম্মুখীন হলে তাতে পুনঃনির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা নেই। কারণ সম্পূর্ণ ভোট প্রক্রিয়া মিটেছে শান্তিপূর্ণ ভাবেই।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় ছিলেন এই কেন্দ্রের তৃতীয়বারের তৃণমূল প্রার্থী। এবারের নির্বাচনে তিনি ভোট ব্যবধানের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছিলেন ৪ লক্ষ। ফলাফল ঘোষণা হতেই দেখা যায়, ৭ লক্ষের বেশি লিড নিয়ে বাংলার বুকে রেকর্ড ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন তিনি। তাঁর ব্যবধান যে বাড়বেই, তার আগাম পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছিল অভিষেকের নির্বাচনী কর্মসূচি গুলিতে হওয়া ব্যাপক জনজোয়ার দেখেই। রাজনৈতিক মহলেরও অনুমান ছিল, অভিষেক তৃতীয়বারও জয়ের মুকুট পরবেন দারুন ভোট ব্যবধান সঙ্গে নিয়ে। বাস্তবেও ঘটেছে ঠিক তেমনটাই। পাশাপাশি এই জেলার অন্য লোকসভা কেন্দ্র গুলিতেও লড়াই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। এতেই প্রমাণিত হয়, স্বচ্ছ ভাবেই সংঘটিত হয়েছে নির্বাচন যার প্রমাণ মিলেছে ভোটের ফলাফলে। নির্বাচন চলাকালীন বিভিন্ন কেন্দ্রের ভোটে কারচুপি হওয়ার একাধিক অভিযোগ ছিল বিজেপির। এই প্রশংসাপত্রের ফলে যেন বিজেপির সেই অভিযোগে ভাটা পড়েছে। নির্বাচনে ব্যাপক সফলতার পর জাতীয় এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন থেকে প্রশাসনিক স্তরে শুভেচ্ছাবার্তা জ্ঞাপন চলেছে। এবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার দক্ষিণ ২৪ পরগনার এসপি রাহুল গোস্বামী কে ওই জেলায় সুষ্ঠ ভাবে নির্বাচন সংঘটিত হওয়ার জন্যই প্রশংসাপত্র পাঠালেন।