• facebook
  • twitter
Monday, 6 January, 2025

হাতে লিখে ‘নির্দেশ’ দিতেন পার্থ: সিবিআই

পার্থের ওএসডি প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ওই তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছিল। সিবিআই জানিয়েছে, এক এক জন প্রার্থীর নামের ক্ষেত্রে এক এক রকম মন্তব্য লিখে দিতেন পার্থ।

ফাইল চিত্র

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকা কত গভীর ছিল তা ফের জানালো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। ‘অযোগ্য’ চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকার উপর বিভিন্ন নির্দেশমূলক মন্তব্য নিজে লিখে দিতেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়’। এমনই দাবি করেছে সিবিআই। প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় সংস্থা যে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে, তা চার্জশিট আকারে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানেই পার্থের হাতের লেখার উল্লেখ রয়েছে। সিবিআই জানিয়েছে, ‘বিকাশ ভবনে তল্লাশি চালিয়ে ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের নামের তালিকা উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানেই পার্থের হাতের লেখা ছিল বলে জানা গিয়েছে’।

যদিও সেই লেখা সিবিআই বাজেয়াপ্ত করতে পারেনি। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে পার্থের ‘হাতে লেখা’ নির্দেশের ‘অনুলিখন’। ২০২৩ সালের জুন মাসে প্রাথমিক মামলার তদন্তে বিকাশ ভবনে হানা দেয় সিবিআই। সেখানকার গুদাম থেকে উদ্ধার করা হয় চাকরিপ্রার্থীদের নামের একটি তালিকা। ১৯ পাতার চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, ওই তালিকায় ৩২৪ জন অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীর নাম ছিল। পরে তালিকা খতিয়ে দেখা যায়, আসলে সেখানে প্রার্থীসংখ্যা ৩২১।

এঁদের প্রত্যেকের নাম প্রাথমিক স্কুলে চাকরির জন্য রাজনৈতিক প্রভাবশালী কোনও না কোনও ব্যক্তি সুপারিশ করেছিলেন। তালিকায় প্রার্থীদের নাম এবং রোল নম্বরের পাশাপাশি সেই প্রভাবশালী ব্যক্তির নামও উল্লেখ করা ছিল বলে দাবি সিবিআইয়ের। তাতেই লেখা থাকত ‘একে নিতেই হবে’, ‘এটা খুব দরকারি’ ইত্যাদি টুকরো টুকরো মন্তব্য। সিবিআইয়ের দাবি, পার্থ নিজের হাতেই ওই সব মন্তব্য লিখতেন।সিবিআই জানিয়েছে, স্বয়ং পার্থের কাছ থেকে এই ৩২১ জন প্রার্থীর সুপারিশ এসে পৌঁছেছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে। পার্থের সুপারিশ নিয়ে নামের তালিকার ‘হার্ড কপি’ এবং সিডি গিয়েছিল বিকাশ ভবনে।

পার্থের ওএসডি প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ওই তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছিল। সিবিআই জানিয়েছে, এক এক জন প্রার্থীর নামের ক্ষেত্রে এক এক রকম মন্তব্য লিখে দিতেন পার্থ। কোনও নামের উপরে লিখতেন ‘একে নিতেই হবে’ (মাস্ট বি টেক্‌ন), কোনও নামের উপরে লিখতেন ‘প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলে নিতে হবে’ (ওনলি ট্রেন্‌ড টু বি টেক্‌ন)। প্রার্থীদের ক্ষেত্রে জেলার নামও উল্লেখ করে দিতেন তৃণমূলের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ।

কোথাও লিখতেন ‘পুরুলিয়া’, কোথাও ‘বাঁকুড়া’। কোনও কোনও প্রার্থীর নামের পাশে আবার ‘ভিভিআই’ (পুরো কথা ‘ভেরি ভেরি ইমপর্টেন্ট’ বা ‘খুব খুব দরকারি’) লিখে দেওয়া হত! নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গত ২০২২ সালে পার্থকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে প্রাথমিক মামলায় গত বছরের অক্টোবরে তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই। এই মামলায় কেন্দ্রীয় সংস্থা যে চার্জশিট জমা দিয়েছে, তার একপর্যায়ে প্রতিটি লাইনে রয়েছে পার্থ এবং মানিকের নাম। অভিযোগ, ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাঁদের চাকরি পাইয়ে দিতেন পার্থ-মানিকেরা। সেই তদন্তের সূত্রেই পার্থের হাতের লেখার কথা জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।