দুর্গাপুজোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পদ্মার ইলিশ

দুর্গাপুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে পদ্মার ইলিশ। কোথাও অষ্টমীর ভোগে মাকে ইলিশ দেওয়া হয়, আবার কোথাও পান্তা ভাত আর ইলিশ মাছ ভাজা খাওয়ার পর বিসর্জন শুরু হয়। সেই দুর্গাপুজোর আগেই ভারতে ইলিশ রফতানির বন্ধের কথা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার। আর তাতেই চিন্তার ভাঁজ পুজোর উদ্যোক্তাদের কপালে।

বকখালি, ডায়মন্ড হারবার সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গায় ইলিশ পাওয়া যায়। তবে সমস্যা কিন্তু অন্য জায়গায়। স্বাদ এবং সাইজের রাজ্যের ইলিশের তুলনায় বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ কয়েক যোজন এগিয়ে। তাই পুজোর মরশুমে রাজ্যে ব্যাপক চাহিদা থাকে পদ্মার ইলিশের। এর আগে প্রতি বছর নিয়ম করে বাংলাকে ইলিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ইলিশ পেতে খুব একটা সমস্যা হয়নি বঙ্গবাসীর। কিন্তু তিনি গদিচ্যুত হতেই গোল বেঁধেছে। মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, অক্টোবরে ভারতে ইলিশ রফতানির অনুমতি দেওয়া হবে না। আর তাঁর এই ‘ফতোয়া’ ঘিরে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন এপার বাংলার ব্যবসায়ীরা।


এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঠিক কী কারণে ভারতে ইলিশ নিষেধাজ্ঞা জারি করল ইউনূস সরকার? সেই ব্যাখ্যাও দিয়ে দিয়েছেন ফরিদা আখতার। তাঁর কথায়, ভারতে সব ইলিশ মাছ রফতানি করে দেওয়ায় আমাদের দেশের মানুষরা ইলিশ খেতে পারে না। সেই জন্য এবছর রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরাও দুর্গাপুজো উদযাপন করি, আমাদের দেশের মানুষ এখানেই দুর্গাপুজো উপভোগ করতে চান।

প্রসঙ্গত, দুর্গাপুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে ইলিশ। কোথাও পুজোর রীতি মেনে ইলিশ ভোগে দেওয়া হয়, এছাড়া কলকাতা সহ রাজ্যের হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলিতে পুজোর সময় তুমুল চাহিদা থাকে ইলিশের। ইলিশ থালিও নিয়ে আসে বড় বড় হোটেলগুলো। কিন্ত এবার কীভাবে খাদ্যরসিক বাঙালির চাহিদা মেটাতো যাবে, তা ভেবে কুল পাচ্ছেন না হোটেল মালিকরা।

অবশ্য শুরু হোটেল-রেস্তরাঁই নয়, বাজার থেকে পদ্মার ইলিশ বাড়ি কিনে নিয়ে এসে রান্না করেন সিংহভাগ বাঙালি। সর্ষে ইলিশ, ইলিশ ভাপা, আর ইলিশের পাতুরির গন্ধে ম ম করে গোটা বাড়ি। কিন্তু এবার বাজার থেকে উধাও পদ্মার ইলিশ। লোকাল ইলিশ মিললেও সেগুলির ওজন গড়ে ২০০-২৫০। দাম ৫০০-৬০০ টাকা প্রতি কেজি। আর স্বাদও বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশের তুলনায় অনেক কম।

দুর্গাপুজোর সঙ্গে কীভাবে জড়িয়ে রয়েছে ইলিশ? হুগলির কোন্নগরের ঘোষাল বাড়িতে ইলিশ খেয়ে বিসর্জনে যান বাড়ির মহিলারা। জলপাইগুড়ি রাজবাড়িতে আবার অষ্টমীর ভোগে ইলিশ থাকতেই হবে। অবশ্য শুধু দুর্গাপুজোই নয়, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় ইলিশ ভোগ দেন অনেকে। কলকাতার বিখ্যাত পুঁটে কালী মন্দিরেও দেবীর ভোগে ইলিশ মাছ থাকে।