• facebook
  • twitter
Monday, 16 September, 2024

মেদিনীপুর পূর্বের রাজনীতির প্রভাবক অনলাইন জুয়া

কাঁথি-তমলুকে তৃণমূলের পরাজয়ের কারণ খুঁজতে উঠে আসল নয়া তত্ত্ব

ভারতে নিষিদ্ধ জুয়ার নেশায় বর্তমানে বুঁদ হচ্ছে যুবসমাজ। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের মদতেই পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি এবং তমলুকের বিস্তীর্ণ অংশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে অনলাইন জুয়ার ঠেক। আর এই জুয়ার অর্থই প্রভাবিত করেছে মেদিনীপুর পূর্বের রাজনীতিকে। বিষাক্ত করে দিচ্ছে ওই জেলার যুবসমাজকে। এই জুয়ার আয়োজক তথা মালিকের পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ যোগ না থাকলেও অর্থের প্রভাব খাটিয়ে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে কাঁথি এবং তমলুকে বিজেপির জয়ের পথকে প্রশস্ত করার পেছনে তাঁর ভূমিকা ছিল। এবার প্রশ্ন হলো, কে এই অনলাইন জুয়া খেলার আয়োজক তথা মালিক? প্রসূন মন্ডল নামক এই ব্যক্তি একজন সাধারণ ব্যবসায়ী ছিলেন, সম্প্রতি কয়েক বছরে তিনি জুয়া কারবারের সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত হয়েছেন। তিনি একজন পুলিশ কর্মীর ভাই। সূত্রের খবর, কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাথে তাঁর ব্যক্তিগত ওঠাবসা আছে কিনা তা স্পষ্ট নয়, তবে তাঁর প্রভাব মারাত্মক।

কথায় বলে, অর্থবল যাঁর, বাহুবল তাঁর। প্রসূনের ক্ষেত্রেও এই বিষয়টি প্রযোজ্য। ২০১৭-১৮ সাল নাগাদ সাধারণ ব্যবসায়ী প্রসূন মন্ডল আর্থিক ভাবে নিঃস্ব ছিলেন। তবে বর্তমানে তিনি প্রায় দশ থেকে পনেরো কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। তবে এই বিপুল অর্থের উৎস কি? স্বাভাবিক ভাবেই, তাঁর অর্থের উৎস এই অনলাইন জুয়ার কারবার। তাঁর বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারে। গোটা জেলা জুড়ে ২০০ এর বেশি কাউন্টারে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার খেলা চলে বলেই সূত্রের খবর। প্রসূনের জুয়ার কারবার বা অনলাইন লটারির ব্যবসা কেবল পূর্ব মেদিনীপুরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং তা হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া সহ বাংলার একাধিক জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পূর্ব মেদিনীপুরের দুই হাইভোল্টেজ লোকসভা কেন্দ্র হলো কাঁথি এবং তমলুক। রাজ্য জুড়ে সবুজ ঝড় উঠলেও কাঁথি এবং তমলুক হেঁটেছিল উল্টো স্রোতেই অর্থাৎ দুই কেন্দ্রেই ফুটেছিল পদ্মফুল। কাঁথি লাগোয়া মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। তবে তার সামান্যতম আঁচ পড়েনি মেদিনীপুর পূর্বের দুই কেন্দ্র কাঁথি এবং তমলুকে। লোকসভা নির্বাচনে এই দুই কেন্দ্র কি বাস্তবেই উল্টো স্রোতে হেঁটেছিল নাকি হাঁটানো হয়েছিল তাতেই রয়েছে প্রশ্নচিহ্ন। সূত্রের খবর, এই প্রসূন মন্ডলের বিপুল অর্থ বিজেপির হয়ে ব্যয়িত হয়েছে কাঁথি ও তমলুকের নির্বাচনে। বলা যেতে পারে, কাঁথি ও তমলুকের রাজনীতিতে তৃণমূলের ব্যাকফুটে যাওয়ার পরোক্ষ কারণ এই অনলাইন জুয়া কারবারী প্রসূন মন্ডলই। পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপির প্রভাবকে টিকিয়ে রাখতেই নির্বাচনে বিজেপির হয়ে অর্থের প্রভাব খাটিয়েছিলেন প্রসূন, তাও আবার পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায়। মেদিনীপুর পূর্বের কাঁথি ও তমলুকের একাধিক থানা চোখে কালো কাপড় বেঁধেছে প্রসূনের এই কার্য পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে।

সূত্রের খবর, এই দুই কেন্দ্রের প্রায় ন’টি থানা ভিত্তিক পুলিশের আর্থিক লাভেই নিশ্চুপ দর্শকের ভূমিকা পালন করে চলেছে প্রশাসন। এমনকি ইডি, সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার নজরেও রয়েছেন এই প্রসূন। সূত্রের খবর, নতুন কাউন্টার খুলতে ৪০-৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় এছাড়াও পুলিশকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয় কাউন্টার চালানোর জন্য। জানা গিয়েছে, প্রসূন এবং তাঁর ম্যানেজার গৌতম উভয় মিলেই অনলাইনে জুয়ার ব্যবসা চালান। এছাড়াও দেবাশিষ দাস, সন্তু মুখার্জি, বিনয় মুখার্জি সহ একাধিক ব্যক্তি হাত মিলিয়েছেন প্রসূনের ব্যবসায়। এই কারবারে অপর এক প্রভাবশালী জুয়া ব্যবসায়ীর নাম উঠে এসেছে।

আনন্দ শর্মা নামক ব্যারাকপুরে বসবাসকারী এই ব্যবসায়ী অনলাইন জুয়া খেলার জন্য জাল অর্থাৎ বেআইনি সফটওয়্যার সরবরাহ করে থাকেন প্রসূনকে। অভিযোগ, গোটা বাংলা জুড়েই অসংখ্য জুয়া কারবারীদের জাল সফটওয়্যার সরবরাহ করে থাকেন তিনি। পাঁশকুড়া, চণ্ডীপুর, তমলুক, কোলাঘাট, ভগবানপুর, কাঁথি,এগরায় সবমিলিয়ে চলছে প্রসূনের অজস্র জুয়ার কাউন্টার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাজনীতিতে অভিজ্ঞ কাঁথি ও তমলুকের দুই তৃণমূল প্রার্থী অক্লান্ত পরিশ্রম করেও এই দুই লোকসভা কেন্দ্রে ফোটাতে পারেননি জোড়াফুল। এক্ষেত্রে কাঁথি ও তমলুক তথা পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের পরাজয়ে একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছিল প্রসূনের অনলাইন জুয়া ব্যবসার অর্থ এবং প্রসূনের কার্যে পুলিশের মদত। পুলিশের পরোক্ষ সহযোগিতায় প্রসূনের ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠেছে বলে অভিযোগ। বর্তমানে এই জেলার যুব সমাজের অবক্ষয়ের পশ্চাতে পরোক্ষ ভাবে দায়ী এই প্রসূনই। তাঁর অনলাইন জুয়া খেলার নেশাতেই আসক্ত হচ্ছে যুবক-যুবতীগণ। পুলিশ প্রশাসন আদেও এক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয় কিনা, সেটিই দেখার বিষয়। উল্লেখ্য, এই বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁর তরফ থেকে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।