• facebook
  • twitter
Sunday, 17 November, 2024

৮ পড়ুয়ার ট্যাবের টাকা গায়েব, গ্রেপ্তার প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক

পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা লোপাটের অভিযোগে গ্রেপ্তার আরও এক। দিনহাটার একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক মনোজিৎ বর্মনকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে মালদহ পুলিশ।

পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা লোপাটের অভিযোগে গ্রেপ্তার আরও এক। দিনহাটার একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক মনোজিৎ বর্মনকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে মালদহ পুলিশ। ধৃতকে রবিবার মালদহ জেলা আদালতে তোলা হয়। ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

পুলিশ সূত্রে খবর, বিভিন্ন ব্যাংকে মনোজিতের নামে অন্তত ২০টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। নিজে অন্তত ৮টি অ্যাকাউন্টে ট্যাবের টাকা গায়েব করেছে মনোজিৎ। অর্থাৎ, এটা স্পষ্ট যে কমপক্ষে ৮ জন পড়ুয়ার টাকা গায়েব করেছে মনোজিৎ। কোচবিহারের সিতাই সিংমারী স্টেট প্ল্যান্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনোজিৎ। গত ৮ বছর শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি।

মালদহের হবিবপুরের একটি স্কুলের পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশ খোঁজখবর শুরু করতেই দেখা যায়, মনোজিতের অ্যাকাউন্টে গিয়েছে ট্যাবের টাকা। শনিবার রাতে কোচবিহারের দিনহাটা থানার অন্তর্গত মাদার লেনের বাসিন্দা মনোজিতকে গ্রেপ্তার করে মালদহ জেলা পুলিশের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম।

মনোজিতেরর বিরুদ্ধে অভিযোগ, শিক্ষা পোর্টাল হ্যাক করে ছাত্রদের জায়গায় নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর জুড়েছে মনোজিৎ। কমপক্ষে আটটি অ্যাকাউন্ট থেকে ট্যাবের টাকা গায়েব করেছে সে। মালদার ট্যাব কেলেঙ্কারিতে মোট ৫টি মামলা রুজু হয়েছে। দুটি মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। বাকিগুলির তদন্ত করছে মালদহ জেলা পুলিশ।

ট্যাব কাণ্ড নিয়ে সম্প্রতি মুখ খুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ট্যাব কেলেঙ্কারি নিয়ে সিট গঠন করা হয়েছে। এটা প্রশাসনের কাজ। প্রশাসনকে করতে দিন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনা মহারাষ্ট্র, রাজস্থান-সহ একাধিক রাজ্যে ঘটেছে। এই গ্রুপটাকে আমরাই ধরতে পেরেছি। সুতরাং, আমাদের প্রশাসন খুব স্ট্রং। রাফ অ্যান্ড টাফ। ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকি যা যা করার, তারা করবে। ট্যাবের যারা টাকা পায়নি, তারা পেয়ে যাবে।’

২০২১ সাল থেকে ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্প চালু করে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় এতদিন শুধুমাত্র দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার জন্য টাকা দেওয়া হত। এবার একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদেরও এই প্রকল্পের আওতায় যুক্ত করা হল। স্কুল কর্তৃপক্ষই যোগ্য পড়ুয়াদের নাম, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরের তালিকা তৈরি করে শিক্ষা দপ্তরে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। সেই তালিকার ভিত্তিতেই ট্যাবের টাকা পড়ুয়াদের অ্যাকউন্টে জমা পড়ে।

যদিও এবছর অনেক পড়ুয়া অভিযোগ করেন, তাদের অ্যাকাউন্টে ট্যাবের কোনও টাকাই ঢোকেনি। ট্যাব কেলেঙ্কারির অভিযোগ সামনে আসার পর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়ে দেন, এরপর থেকে শিক্ষকরা নন, পড়ুয়ারাই ট্যাব সংক্রান্ত তথ্য পোর্টালে আপলোড করবে।

পুলিশ জানিয়েছে, ট্যাব কেলেঙ্কারির টাকা যেসব অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে সেগুলি ভাড়া নেওয়া অ্যাকাউন্ট। ৩০০ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে অ্যাকাউন্টগুলি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। ভাড়া করা সেই অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকার ২ ঘণ্টার মধ্যেই তা তুলে নেওয়া হয়। টাকা তোলার আগে কয়েকটি অ্যাকাউন্ট কয়েকটি অ্যাকাউন্ট ব্লক বা ফ্রিজ করা হয়েছিল। যে সব কম্পিউটার থেকে জালিয়াতি করা হয়েছে সেগুলির আইপি অ্যাড্রেস চিহ্নিত করেছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।

আইপি অ্যাড্রেসগুলি মূলত উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া ও তার আশপাশের এলাকার। পাশাপাশি এই ঘটনায় জামতাড়া গ্যাং জড়িত থাকারও অভিযোগ সামনে আসছে। ট্যাব কেলেঙ্কারির চক্র দেশের একাধিক রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে বলে মনে করছে তদন্তকারীরা। কারণ এই জালিয়াতির টাকা বিহারের কিষানগঞ্জ মধ্যপ্রদেশের রায়পুর সহ একাধিক শহরের একাধিক অ্যাকাউন্টেও গিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।