দিনটা একটু আলাদা। কী রাজ্যবাসীর কাছে কী বর্ধমানের সরকার পরিবারের কাছে। ফি বছর একুশে জুলাই সমস্ত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ শুনতে কলকাতায় আসেন বর্ধমানের সরকার দম্পতি। আর ফেরেন নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে।
এ বছর তাই গৃহবধূ তৃণমূল কর্মী রেখা সরকার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় শহিদ সমাবেশে তাদের আসা কোনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। তবে এবার যা নিয়ে তারা ফিরে গেলেন সেটাই যে সুন্দরতম তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এলেন দু’জন আর ফিরে গেলেন এক নতুন সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে। শহিদ স্মরণে কলকাতায় ধর্মতলা আসার পথে বাসের মধ্যেই কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন রেখা। দিদির জন্য আসছিলেন শহিদ দিবসের মঞ্চে। ২১ জুলাইয়ের সভায় আসতেই হবে, তা শারীরিক অবস্থা যেমনই হােক, স্বামীকে এমনই বলেছিলেন বর্ধমানের তৃণমূল কর্মী রেখা সরকার।
শহিদ দিবসে ধর্মতলার মঞ্চে পৌঁছানাের আগেই রাজপথেই প্রবল প্রসব বেদনা ওঠে অন্তঃসত্ত্বা রেখার। এরপরে সেই রাজপথের মাঝেই অন্যরকম ঘটনার সাক্ষী রইল বরানগরবাসী। সমাবেশে যােগ দিতে এ শহরে পা রাখতেই বর্ধমানের রেখার কোল আলাে করে এল এক মেয়ে। একুশের শহিদ দিবসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তারা মেয়ের নাম রাখলেন-একুশি।
জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানের জেলার নীলপুরের বাসিন্দা পেশায় রাজমিস্ত্রির যােগাড়ে অজিত সরকার ও তার স্ত্রী রেখা বরাবসের তৃণমূলের সমর্থক। স্থানীয় বিভিন্ন দলীয় অনুষ্ঠানে তাদের সরাসরি অবদান যােগ না থাকলেও পরােক্ষ একটা সমর্থন থাকেই। প্রতি বছর একুশে জুলাই তৃণমূলের শহিদ দিবস স্মরণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ শুনতে, বর্ধমান থেকে স্বামী স্ত্রীর কলকাতায় আসা চাই।
এবছর রেখার শারীরিক অবস্থা অন্যরকম, তিনি অন্তঃসত্ত্বা। তা সত্ত্বেও কাছের মানুষকে সামনে থেকে দেখার কথা শােনার ইচ্ছেটা ছাড়তে পারেননি। ওই অবস্থাতেই রবিবার পূর্ব বর্ধমান শহর তৃণমূল কংগ্রেসের ১৩ নং ওয়ার্ড কমিটির তরফে এলাকার নেতা কর্মীদের সঙ্গে ধর্মতলায় আসছিলেন।
এদিন সকাল আটটা নাগাদ তারা সেখান থেকে রওনা দিয়েছিলেন। সকাল দশটা নাগাদ ডানকুনি পেরােতেই বাসের মধ্যে রেখা দেবীর প্রসব যন্ত্রণা ওঠে। এরপর বিষয়টি রেখা দেবী তার স্বামীকে জানায়। রেখা দেবীর স্বামী বাসের অন্যান্য মহিলা কর্মীদের বলেন। বাসে থাকা মহিলা কর্মীরা অন্তঃসত্ত্বা তৃণমূল কর্মীকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। বরানগর আইএসআইয়ের কাছে বাসটি আসতেই বাসের মধ্যে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন রেখা দেবী। আর সঙ্গে সঙ্গেই মেয়ের নামকরণও করেন–একুশি।
একুশে জুলাইয়ের সঙ্গে এভাবে মেয়ের জন্মের মুহূর্ত মিলেমিশে এক হয়ে যাওয়ায় এমন এক নাম রেখেছেন অধীর-রেখা। কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার পর বাসটি বিটি রােডের ওপর দাঁড় করিয়ে পুলিশের সহযােগিতায় তারা সদ্যজাত কন্যা ও তার মা কে বরানগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ভর্তি মা ও কন্যা।
হাসপাতাল সূতের জানা গিয়েছে মা ও শিশু দু’জনে সুস্থ আছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের আগে শিশুটি প্রসব হওয়ায় ওজন তুলনায় কম। চিকিৎসকরা বাচ্চাটিকে বিশেষ নজরদারিতে রেখেছেন। রেখার স্বামী অজিত সরকার বলেন প্রতি বছরের মতাে এবছরও রেখা রওনা দিয়েছিলেন ধর্মতলার উদ্দেশ্যে। সেই সময়ই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন রেখা। সরকারি হাসপাতালে আপাৎকালীন পরিষেবাও চমৎকার ছিল। চিকিৎসকরা প্রত্যেকে পাশে ছিলেন বলে জানান অজিত।