সােমবার বিধানসভার চলতি অধিবেশন সরগরম হয়ে ওঠে ‘কাটমানি’ ইস্যুতে। মুখ্যমন্ত্রী কাটমানি ফেরত দেওয়া নিয়ে নির্দেশ দেওয়ার পর থেকেই গত কদিন ধরেই এই ইস্যুটি নিয়ে বিতর্ক চলছে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। সােমবার সে বিতর্কের আঁচ এসে পড়ল বিধানসভাতেও।
এদিন অধিবেশনের প্রথমার্ধে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস একযােগে কাটমানি নিয়ে আলােচনার জন্য আবেদন জানায়। তাদের দাবি ছিল, কাটমানি নিয়ে যতদিন না মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য রাখবেন, ততদিন প্রত্যেক দিন তাঁরা এই ইস্যু নিয়ে আলােচনার দাবি রাখবেন। সেই দাবি গ্রাহ্য না হওয়ায় সােমবার সরব হয় এই দুই বিরােধী দল। স্লোগান দিতে দিতে ওয়াক আউটও করেন বাম-কংগ্রেস দলের বিধায়করা।
তাদের স্লোগানের মধ্যে ছিল ‘সিএম ফর কাট মানি’। আগামীকাল বুধবার বিজেপি’র তরফেও পৃথকভাবে কাটমানি নিয়ে আন্দোলন করা হবে বলে জানান বিজেপি বিধায়ক মনােজ টিগ্গা। বিধানসভার দ্বিতীয়ার্ধেও কাটমানি নিয়ে প্রসঙ্গ ওঠে রাজ্যপালের ভাষণ নিয়ে আলােচনার পর্বে।
তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাটমানি ফেরতের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সােস্যাল নেটওয়ার্কি সাইটে বিরােধীরা এই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন।
বামফ্রন্টের সুজন চক্রবর্তী বলেন, কাটমানি ফেরত দেওয়ার জন্য নবান্নে, তৃণমূল ভবনে কাউন্টার খােলা হােক। সুজনবাবু কাটমানি নিয়ে সরকারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন।
বিরােধী দলনেতা আবদুল মান্নান বলেছেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে কাটমানির বিষয়ে তদন্ত করা হােক। নিজের দলের নেতা-মন্ত্রীদের দুর্নীতির তদন্তে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ওয়াংচু কমিশন তৈরির প্রসঙ্গও টানেন আবদুল মান্নান।
কাটমানি নিয়ে বিজেপি বিধায়ক মনােজ টিগ্গা বলেন, এই রাজ্যে কাটমানির জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচুর টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। রেশন ব্যবস্থায় দুর্নীতি হওয়ার জন্য কেন্দ্রের জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের সুফল পাচ্ছেন না রাজ্যের মানুষ। এছাড়া এদিন বিধানসভায় রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও সরব হন মনােজবাবু।
বিধানসভার দ্বিতীয়ার্ধেও বামফ্রন্টের আলি ইমরান রামজ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের সময় মডার্ন ডেকরেটার্স–এর মঞ্চ তৈরির বরাত থেকে পছন্দের সংস্থার কাছ থেকে সবুজসাথীর সাইকেল কেনাতেও কাটমানির ইঙ্গিত দেন।
কংগ্রেসের সুখবিলাস বর্মা ‘সবুজসাথী’ প্রকল্প নিয়ে বলেন, সাইকেল বন্টনে দুর্নীতি হয়েছে। কিছু জায়গায় এই প্রকল্পের সাইকেল কিনে ফেলে রাখায় তার ওপর জঙ্গল হয়ে গিয়েছে। কার টাকায় ওসব কেনা হয়েছিল? অনেক বেশি টাকা দিয়ে এই সাইকেল কেনা হয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন সুখবিলাসবাবু।
তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে বিরােধিতা করেছেন তৃণমূলের পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, সবুজসাথী’র সাইকেল নিয়ে দুর্নীতি থাকলে তা তদন্ত করে প্রমাণ দিক বিরােধীরা। আর মান অনুযায়ী পণ্যের দাম পরিবর্তিত হয়।
এদিন বিধানসভার বাইরে কাট মানি নিয়ে ফিরহাদ হাকিম বলেন, কাটমানি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানাে হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের ওপর দোষারােপ করা হচ্ছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, বাংলার বাড়ি প্রকল্পে প্রতিটি বাড়ি বানানাের খাতে খরচ হয় মােট ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার ৫৭৮ টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় (হাউজিং ফর অল) প্রকল্পের দেড় লক্ষ টাকা পাওয়ার পর উপভােক্তাদের দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা।
কোনও জনপ্রতিনিধি বা দলীয় কর্মী মারফত এই টাকা অনেক সময় উপভােক্তারা জমা দিয়ে থাকেন। এরপর রাজ্য সরকার বাংলার বাড়ি বানানাের জন্য বাকি ১ লক্ষ ৯৩ হাজার ৫৭৮ টাকা দেয়। কিন্তু ভুল বুঝে অনেক সময় উপভােক্তারা মনে করেন, এই ২৫ হাজার টাকা তারা কাটমানি হিসেবে জনপ্রতিনিধিদের দিচ্ছেন। কিন্তু বিষয়টি ঠিক নয়।
বামফ্রন্টের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী অবশ্য ফিরহাদ হাকিমের এই সাফাইকে ভিত্তিহীন বলে মনে করছেন। সুজনবাবুর মতে, তৃণমূলের কাটমানির তল পেতে হলে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে।