হাতে খুব বেশি সময় নেই। ১৩ নভেম্বর রাজ্যের ৬টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন। মেদিনীপুর, হাড়োয়া, তালডাংরা, নৈহাটি, সিতাই এবং মাদারিহাট। ২৩ নভেম্বর ফল ঘোষণা। ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই উপনির্বাচন সব রাজনৈতিক দলের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে তৃণমূলের কাছে এই নির্বাচন কিছুটা হলেও ‘মুখ বাঁচানোর লড়াই’। চব্বিশের লোকসভা ভোটে তৃণমূল যা ফল করেছিল, তাতে বিধানসভা উপনির্বাচনের আগে তাদের নাকে তেল দিয়ে ঘুমোলেও চলত। কিন্তু আরজি কর কাণ্ডের আবহে ঘাসফুল শিবিরের অন্দরে কিছুটা হলেও চিন্তার বাতাবরণ।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে এই ৬টির মধ্যে ৫টি বিধানসভা আসনেই উড়েছিল সবুজ আবির। শুধু গেরুয়া শিবিরের হাতে ছিল মাদারিহাট বিধানসভা। আসন্ন উপনির্বাচনের আগে আরজি কর কাণ্ডকে হাতিয়ার করেই পথে নামতে চাইছে বিরোধীরা। বিশেষ করে বিজেপির লক্ষ্য মাদারিহাট আসনে ক্ষমতা ধরে রাখা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মনে করছেন, ‘সুষ্ঠু’ ভোট হলে মাদারিহাটের পাশাপাশি আরও ২টি আসনে অনায়াসেই ঘাসফুল উপড়ে ফুটবে পদ্মফুল।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে এই মাদারিহাট আসনে জিতেছিলেন মনোজ টিগ্গা। চব্বিশের লোকসভা ভোটে আলিপুরদুয়ার আসন থেকে বিজেপির টিকিটে জিতে তিনি আপাতত সাংসদ। বাকি ৫টি আসন ছিল তৃণমূলের দখলে। সেই ৫টি আসনের বিধায়করাও লোকসভা ভোটে জিতে সাংসদ হয়ে গিয়েছেন। তাই এই ৬টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনের সিদ্ধান্ত।
ভোট ঘোষণা হল কয়েকদিন মাত্র হয়েছে। তার আগে থেকেই শাসকদলের অন্দরে জোরকদমে প্রস্তুতি চলছে। আরজি কর আন্দোলন আবার তৃণমূলের উপর অতিরিক্ত ‘চাপ’ ফেলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিকমহল। তবে শাসক শিবির বার বারই দাবি করে এসেছে, চিকিৎসক এবং নাগরিক আন্দোলন খুব ‘সংকীর্ণ অংশেই সীমাবদ্ধ’। আসন্ন উপনির্বাচনে তা প্রমাণ করার তাগিদেই প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখতে চাইছে না তৃণমূল। তাদের লক্ষ্য ৬-এ ৬। স্ট্র্যাটেজি ঠিক করা, প্রার্থী বাছাই করা, সর্বোপরি স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখাই তৃণমূলের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
অন্যদিকে বিরোধী শিবিরে যেন এখনও গা ছাড়া মনোভাব। রাজনৈতিকমহলে একাংশের মতে, বাম শিবির এখন ডাক্তারদের আন্দোলনকে হাতিয়ার করে নির্বাচনে নামতে চাইছে। অন্যদিকে বিজেপি একপ্রকার আত্মবিশ্বাসী যে আরজি কর ইস্যুই তৃণমূলের উপর ‘অভিশাপ’ হয়ে নামতে পারে। তাই তাদের মধ্যেও আপাতত মরিয়া মনোভাব নেই। তবে বিরোধীদের কিছু অংশ মনে করছে, তৃণমূল হয়তো এবার ভোটটাই করতে দেবে না।
বিধানসভা উপনির্বাচনে জয় নিয়ে কিছুটা আত্মবিশ্বাসের সুর শোনা গিয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর গলায়। বিশেষ করে তিনি মনে করেন, মাদারিহাটে তাদের দল অবশ্যই জিততে পারে। কারণ ২০১৬ এবং ২০২১-এই দুই বিধানসভা নির্বাচনেই মাদারিহাট থেকে বিজেপির পতাকায় জয় পেয়েছিলেন মনোজ টিগ্গা। ২০১৯ এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও ভালো ফল করেছিল পদ্ম শিবির।
মাদারিহাট ছাড়াও মেদিনীপুর এবং তালডাংরা আসনেও বিজেপির জেতার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন শুভেন্দু। তবে বিগত উপনির্বাচনের কথা টেনে এনে খারাপ অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে রায়গঞ্জে ৪৬ হাজার ৭৩৯ এবং রানাঘাট দক্ষিণ আসনে ৩৬ হাজার ৯৩৬ ভোটে এগিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু উপনির্বাচনে ভোট লুট করে ওই আসন জিতে নিয়েছিল তৃণমূল।’ শুভেন্দু আশাবাদী, আসন্ন বিধাননসভা উপনির্বাচনে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে মেদিনীপুর এবং তালডাংরা আসনেও জয় ছিনিয়ে নিতে পারে বিজেপি।
এবার একটু চোখ রাখা যাক গত লোকসভা নির্বাচনের দিকে। মাদারিহাট আসনে ১১ হাজার ৬৩ ভোটে এগিয়ে বিজেপি। সিতাই কেন্দ্রে ২৮ হাজার ৩৭৭ ভোটে, তালডাংরায় ৭ হাজার ৪৮৩ ভোটে, মেদিনীপুরে ২ হাজার ১৭০, হাড়োয়ায় ১ লক্ষ ১০ হাজার ৯৯১ এবং নৈহাটিতে ১৫ হাজার ৫১৮ ভোটে এগিয়ে তৃণমূল। তারও আগের বার অর্থাৎ ২০১৯-এর ভোটে ছবিটা একটু আলাদা ছিল। সেই বছর মেদিনীপুরে ১৬ হাজার ৬৪১ ভোটে এবং তালডাংরায় ১৭ হাজার ২৬৮ ভোটে এগিয়েছিল পদ্মশিবির। সেই অঙ্কেই বিচার-বিশ্লেষণ করে বিধানসভা উপনির্বাচনে জয়ের আশা করছেন শুভেন্দু অধিকারী।