• facebook
  • twitter
Friday, 18 October, 2024

এক টাকার ডাক্তার পদ্মশ্রী সুশোভনের প্রয়াণ দিবস পালন

ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের প্রিয় ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন গর্বিত খায়রুল আনাম: মহাকালের রথের চাকার সাথে জড়িয়ে রয়েছে মানুষের জীবন চক্র। যেখানে জন্মের কোলেই রয়েছে মৃত্যুর অনিবার্যতা। এই জন্ম ও মৃত্যুর মাঝের সময়টুকুকে মানুষ তাঁর কর্মকালের সময় হিসেবে পেয়ে থাকেন। এই সময়কালে এমন অনেক মানুষ থাকেন, যাঁরা এমন কিছু সাক্ষর রেখে যান, যাতে মানুষ তাঁদের প্রজন্মের

ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের প্রিয় ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন গর্বিত

খায়রুল আনাম: মহাকালের রথের চাকার সাথে জড়িয়ে রয়েছে মানুষের জীবন চক্র। যেখানে জন্মের কোলেই রয়েছে মৃত্যুর অনিবার্যতা। এই জন্ম ও মৃত্যুর মাঝের সময়টুকুকে মানুষ তাঁর কর্মকালের সময় হিসেবে পেয়ে থাকেন। এই সময়কালে এমন অনেক মানুষ থাকেন, যাঁরা এমন কিছু সাক্ষর রেখে যান, যাতে মানুষ তাঁদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্মরণ করে চলেন। এমন একজন মানুষ হিসেবে রয়ে গিয়েছেন বোলপুর হরহৌরীতলার ডা. সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি প্রকৃত অর্থেই ছিলেন ‘সুশোভন’। সবার কাছে ‘এক টাকার ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের প্রিয় ছাত্র ডা. সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। এটা তাঁর কাছে গর্বেরও ছিল।

ইংল্যাণ্ড থেকে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত ডা. সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় পাশ্চাত্যের সমস্ত হাতছানিকে উপেক্ষা করে বোলপুরে ফিরে এসে কিছুদিন বিশ্বভারতীর শান্তিনিকেতন পিয়ারসন মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত থাকলেও, পরবর্তীতে তিনি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়ে তাঁর বোলপুর হরগৌরীতলার বাসভবনে রোগী দেখা শুরু করেন। তাঁর মা চেয়েছিলেন, ছেলে মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করুক এবং প্রতীকী দক্ষিণা হিসেবে এক টাকা গ্রহণ করুক।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করা ডা. সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্বের ১৬৭ টি দেশ পরিভ্রমণ করা সত্ত্বেও কখনও তাঁর মাতৃদেবীর আকাঙ্খাকে উপেক্ষার পরিবর্তে সম্মান জানিয়ে আমৃত্যু এক টাকা দক্ষিণা নিয়ে দিন-রাত রোগীদের পরিষেবা দিয়ে গিয়েছেন। তাঁর এই অনন্য দৃষ্টান্তের স্বীকৃতি স্বরূপ বোলপুরের প্রাক্তন বিধায়ক ডা. সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ দিল্লিতে ডা. সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ভারত সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান তুলে দেওয়ার পরে তাঁকে বিশেষভাবে শুভেচ্ছাও জানান। আরেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপধ্যায় যেমন ছিলেন ডা. সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি অনুরক্ত তেমনি, বোলপুরের বাড়ি থেকে মহানায়িকা সুচিত্রা সেন কলকাতা চলে গেলেও, আমৃত্যু তিনি তাঁর ‘ভাই সুশোভন’-এর উপরে চিকিৎসা এবং পারিবারিক অনেকক্ষেত্রেই ছিলেন নির্ভরশীল।

পদাধিকার বলে ভারতের রাষ্ট্রপতি বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক এবং প্রধানমন্ত্রী বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের পদ অলঙ্কৃত করেন। রাষ্ট্রপতি জ্ঞানী জৈল সিংহের সময়কাল থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সময়কাল পর্যন্ত ডা. সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের মনোনীত প্রতিনিধি। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে থাকেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি, রাজীব গান্ধি থেকে শুরু করে আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তিনি ছিলেন অত্যন্ত কাছের মানুষ। গান্ধি পরিবারের রাজীব গান্ধি, সোনীয়া গান্ধি, রাহুল গান্ধি এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধিও ডা. সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

এমন-ই একজন মানুষ ডা. সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ও মহাকালের রথের চাকার সাথে জীবনচক্রে একদিন চলে গিয়েছেন মহাকালের পথে। কিন্তু রয়ে গিয়েছে তাঁর জীবনচক্রের পথ পরিক্রমার নিদর্শনগুলি। সেই পথেই শুক্রবার ২৬ জুলাই বোলপুর হরগৌরীতলায় তাঁর বাসভবনের পাশে তাঁর আবক্ষমূর্তির পাদদেশে হরগৌরী যুব সঙ্ঘের পক্ষ থেকে ডা. সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় প্রয়াণ দিবসটি যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়। সেখানে ডা. সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবক্ষমূর্তিতে মাল্যদান করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিনাব্যয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছিলো।