রামপুরহাট নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতির পদ থেকে আনারুল হোসেনকে সরাতে চেয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু স্থানীয় বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিখিত অনুরোধেই আনারুলকে সরাতে পারেননি তৃণমুলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।
তার আগে যদিও অনুব্রতকে লেখা আশিসের সেই চিঠি প্রকাশ্যে চলে আসে। যে চিঠি দেখে বিস্মিতও হন অনুব্রত।
তাঁকে লেখা আশিসের চিঠি সংবাদমাধ্যমের হাতে দেখে তিনি বলেন, “এটা কোথায় পেলেন?” তার পর জানান, আশিসের অনুরোধেই তিনি আনারুলকে সরাতে পারেননি।
আশিসের লেখা চিঠি প্রকাশ্যে আসার পর অনুব্রত দাবি করেন, তিনি অনেক আগেই রামপুরহাট ১ নম্বর এর ব্লক সভাপতির পদ থেকে আনারুলকে সরাতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু সেই সময় আশিস চিঠি লিখে আনারুলকে পঞ্চায়েত ভোট অবধি রাখার অনুরোধ করেন। আশিসের সেই পুরনো চিঠি দেখে বিস্মিত অনুব্রত বলেন, “এটা আশিসদার লেখা। এটা সত্যিই বটে।
গোপন চিঠিটা আপনাদের হাতে কী করে এল। কী করে চিঠিটা বেরোল জানি না। আমি আনারুলকে সরাতেই গিয়েছিলাম। ভোটের ফল খারাপ। মানুষ জনের অভিযোগ আছে।
তখন আশিসদা বলেন, আমি মুচলেকা লিখে দিচ্ছি। ওকে পঞ্চায়েত পর্যন্ত রাখো। আশিসদা এক জন প্রবীণ লোক।
ওর বিধানসভার ব্যাপার। উনি যখন লিখে দিলেন আমাকে তখন আমি আর আনারুলকে সরালাম না।”
বিজেপি-র কেন্দ্রীয় দল বগটুই ঘুরে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার কাছে। সেই রিপোর্টে অনুব্রত নাম একাধিক বার রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
সে প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “বিজেপি কী রিপোর্ট দিয়েছে তা আমি দেখিনি। তা নিয়ে আমি আগ্রহ দেখাতে রাজি নই আমি আনারুলকে ওই সময়ে বলেছিলাম, তুই সরে যা।
আমি আশিসদাকে অন্য ব্লক প্রেসিডেন্টের নাম বলতে বলেছিলাম। কিন্তু শেষমেশ সেটা আর হয়নি।”
এ ব্যাপারে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, “আমি চিঠিটি লিখেছিলাম। কিন্তু ওই ব্লক সভাপতি সরবেন কি সরবো না, সে সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারি না।”
বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে ২১ মার্চ রাত্রে ঘরের মধ্যে ভরে ৯ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার অভিযোগকে কেন্দ্র করে তোলপাড় হচ্ছে গোটা দেশ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই।
এই ঘটনায় যাঁরা গ্রেফতার হয়েছে এবং এখনও অধরা রয়েছে তাঁরা সকলেই তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী বলে জানা যাচ্ছে।
এই ঘটনার ‘মাস্টার মাইন্ড’ হিসেবে উঠে এসেছে তৃণমূল কংগ্রেসের রামপুরহাট -১ ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনের নাম। ইতিমধ্যেই তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তদন্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সিবিআই।
আনারুল হোসেন বেআইনীভাবে যে রোজগার করতো তার বখরা পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে যেত বলে অভিযোগ রধায়েছে।
এই আনারুল হোসেন রামপুরহাটের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার ড.আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত কাছের লোক হিসেবে পরিচিত এক।
এবার এমন একটি মুচলেকা প্রকাশ্যে এসেছে যা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়ে গিয়েছে। ওই মুচলেকাটির সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন ড. আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।
তবে, ওই মুচলেকাটি কী ভাবে প্রকাশ্যে এলো তা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে।
অনুব্রত মণ্ডল জানিয়েছেন, গত বিধানসভা ভোটের ফলাফলে রামপুরহাট এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেস খারাপ ফল করায় তিনি রামপুরহাট -১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি আনারুল হোসেনকে ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।
কেননা, আনারুল ইসলামের নামে দুর্নীতির নানান অভিযোগ আসছিলো।
যারফলে ২০২১ সালে রামপুরহাট এলাকায় দল খারাপও করে। কিন্তু ওই সময় আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় আনারুলকে তাঁর পদ থেকে না সরাবার কথা বলেন।
আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সিনিয়র লিডার হওয়ায় তিনি তাঁর কথা মেনে নিয়ে আনারুল হোসেনকে তাঁর পদে রেখে দেন।
তবে, তিনি এ ব্যাপারে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে একটি মুচলেকা লিখে নেন। সেই মুচলেকা কী ভাবে প্রকাশ্যে এলো তা তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন।
আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও স্বীকার করেছেন যে, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পরে বোলপুরে জেলা তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ে ভোটের ফলাফল পর্যালোচনার জন্য যে সভা হয় সেখানে রামপুরহাট -১ ব্লক এলাকায় দলের ফলাফল খারাপ হওয়ার বিষয়টি ওঠে।
সেই সময় আগামী পঞ্চায়েত ভোট পর্যন্ত আনারুল হোসেনকে তাঁর পদ থেকে না সরাবার করথাটা একটা সাদা কাগজে লিখে দিয়েছিলাম। দলের অভ্যন্তরের সেই বিষয়টিই এবার প্রকাশ্যে এসেছে।