সােমবার মন্ত্রিসভা গঠন ও দফতর বন্টনের দিনেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, রাজ্যে এখনই সম্পূর্ণ লকডাউন হচ্ছে না। তবে লকডাউনের সমস্ত বিধিই মানতে হবে মানুষকে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী ফের ঘােষণা করেন, কেন্দ্র থেকে টিকা পাওয়া গেলেই রাজ্যবাসীর বিনামূল্যে টিকাকরণ করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন করােনার টিকা ও অক্সিজেন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালােচনা করেন। মে মাস জুড়ে করােনার দাপট নিয়ে সােমবার রাজ্যবাসীকে সতর্ক করে দেন মমতা। তবে লকডাউন ঘােষিত হলে সাধারণ মানুষের অসুবিধে হবে। দরিদ্র মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যাবেন, সেটা আমরা চাই না। তাই এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ লকডাউন ডাকা হচ্ছে না।
এমনিতেই লােকাল ট্রেন বন্ধ রয়েছে। বাজার দোকান খােলার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। রােড রােডে হচ্ছে না ইদের নমাজ। ইদের সময় কোভিড বিধি মেনে ছােট ছােট করে প্রার্থনা সভা করার জন্যও আবেদন জানান মমতা। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মগুরুরা মমতার এই আবেদনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিয়েছেন।
কোভিড পরিস্থিতি মােকাবিলায় ভারত সেবাশ্রম, রামকৃষ্ণ মিশন, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, শিখ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা যেভাবে এগিয়ে এসেছেন তাকে অভিনন্দন জানান। বড়বাজারের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এমনকী দুর্গাপুজোর ক্লাবগুলির কাছেও কোভিড মােকাবিলায় রাজ্যের মানুষকে সাহায্য করার জন্য আবেদন করেন। করপােরেট সংস্থাগুলিকেও কোভিড মােকাবিলায় রাজ্যে পাশে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
রাজ্যে যখন মমতা সরকার সরকারি, বেসরকারি, স্বেচ্ছাসেবী, করপােরেট–সব সংস্থাকে নিয়ে কোভিড মােকাবিলায় যুদ্ধে নামার সাজ সাজ রব। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে সহযােগিতা না করে একেবারেরই নীরব।
সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বলেন, কোভিডপরিস্থিতির মােকাবিলায় সাহায্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে একাধিক চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার টাকাপয়সা তা দূরস্থান পর্যাপ্ত টিকা দিয়ে পর্যন্ত সাহায্য করছে না। তিন কোটি টিকা চেয়ে পাঠালেও এখনও পর্যন্ত মাত্র এক লক্ষ পাওয়া গিয়েছে। কেন্দ্রের কাছ থেকে টিকা পাওয়া গেলে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে এক কোটি টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মমতা।
মমতা এদিন অনুযােগ করেন, দেশে উৎপাদিত ৬৫ শতাংশ টিকা যদি দেশের বাইরেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে অন্য দেশ থেকে তা আনা উচিত। কোভিড মােকাবিলায় কেন্দ্রে সুস্পষ্ট নীতি থাকা দরকার। কোভিড মােকাবিলায় ব্যবহৃত সরঞ্জামে জিএসটি না নেওয়া উচিত।
কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কোভিডকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না। পরিবর্তে রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল রাজ্যে পাঠিয়ে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। মমতা এদিন জানিয়ে দেন, বাইরে থেকে যে কেউই ট্রেনে, প্লেনে বা হেলিকপ্টারেই আসুন, তাঁদের আরটিপিসিআর টেস্ট করতে হবে। টেস্টে করােনা পজেটিভ হলে আইসােলেশনেই যেতে হবে তাকে।
এই বিষয়ে মুখ্যসচিবকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। একুশের নির্বাচনে ‘ল্যান্ড স্লাইড ভিক্ট্রি’র জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন রাজ্যবাসীকে নতমস্তকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বলেন, আমরা মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই আমাদের সমর্থন করেছেন। আমরা বিভেদ চাই না, ঐক্য চাই। আমরা শান্তি, সম্প্রীতি ও সংহতি চাই।