করোনা অতিমারিতে গোষ্ঠী সংক্রমণ নিয়ে যখন মানুষের মনে আতঙ্ক, যখন রাজ্যের মৃত্যুর সংখ্যা একের পর এক বেড়ে চলেছে বলে শোনা যাচ্ছে, সেইসময় মুখ্যমন্ত্রী আতঙ্ক ছড়ানো, মৃতের সংখ্যা বাড়ানো নিয়ে সতর্কবার্তা দিলেন।
বুধবার নবান্নে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী দাবি করলেন, ৬ নয়, আজ বিকেল চারটে পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৩। বাকি একজনের নিউমোনিয়া এবং একজনের কিডনির সমস্যায় মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার সকালে বেলঘরিয়া নিবাসী একজনের মৃত্যু প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ছোট একটা নার্সিংহোম কী বলে দিল তাই নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। এতে মানুষ অযথা আতঙ্কিত হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সরকারি তরফে নিশ্চিত না হয়ে কোনও ভুল তথ্য পরিবেশন করবেন না। ভুয়ো খবর প্রচার করা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও রয়েছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয়াবাদের প্রৌঢ়র অবশেষে মৃত্যু হল। বুধবার সন্ধ্যায় পিয়ারলেস হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। কোভিড ১৯ নিউমোনাইটিস সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েই এই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই ভর্তি হয়েছিলেন নয়াবাদের এই প্রৌঢ়।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলে বলেন, যে যা পারছে বলে দিচ্ছে। আজকে পর্যন্ত ৩৭’টা কেস সামনে এসেছে। তার মধ্যে পজিটিভ ৩১ জন। ৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছে। চারটে পরিবারের মধ্যেই ১৭ জনের সংক্রমণ হয়েছে।
যেমন আলিপুরে কমান্ডো হাসপাতালের যে ডাক্তারের করোনা হয়েছিল, তার পরিবারে আরও ৪ জনের করোনা হয়েছে। তেহট্টের পরিবারেও একজনের থেকে আর ৪ জনের অর্থাৎ এক্ষেত্রেও মোট ৫ জন করোনায় আক্রান্ত হলেন। এছাড়া মেদিনীপুরের ব্যক্তির পরিবারের সদস্য সমেত মোট ৩ জন আক্রান্ত আর কালিম্পং’এর মহিলার পরিবারেও মোট ৪ জন সংক্রামিত হয়েছেন। এই চারটে পরিবার মিলিয়েও তো মোট ১৭ জন সংক্রামিতের খোঁজ মিলল।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একজন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। তার পরিবারের লোকই তো বলছে চিকিৎসা করার কোনও সুযোগই পায়নি ডাক্তাররা। আর একজন কিডনির সমস্যায় মারা গিয়েছেন। সপ্তাহে দু’দিন করে ডায়ালিসস চলত তার। করোনায় মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এই ধরনের প্রচার না চালাতে অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
অযথা আতঙ্কিত না হতে এবং গুজব না ছড়াতে বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, এই রোগে মৃত্যুর হার এখনও তেমন বেশি কিছু নয়। ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ৯৮ শতাংশের মতো। কিন্তু যেভাবেই হোক গোষ্ঠী সংক্রমণ ঠেকাতে হবে। একই সঙ্গে সবাইকে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশমতো ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন মানতে অনুরোধ জানান বারবার।
এই সময় একসঙ্গে আড্ডা মারা, ক্যারাম খেলার কিছু চিত্র তার চোখে ধরা পড়েছে। এইসব থেকে বিরত থাকতে বলেন মানুষকে। নিত্যপণ্য সামগ্রী বাজারে যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। তাই অযথা বাজারে ভিড় বাড়াতে বারণ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
বয়স্ক মানুষদের এমনিতেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকে। তাদের জন্য বাড়িতে আলাদা করে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া কিডনি, হৃদযন্ত্র, ফুসফুসের ক্রনিক সমস্যায় যারা ভোগেন, তাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখতে বলেন তিনি।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী করোনায় রাজ্যে আপৎকালীন ত্রাণ তহবিলে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করেন। দশ টাকা, পঞ্চাশ টাকা যে কোনও অঙ্কের আর্থিক অনুদানই যে তার কাছে অমূল্য সেকথা জানান। করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্রের কাছ থেকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম পাওয়া যায়নি বলেও অনুযোগ করেন। একই সঙ্গে রাজ্যের তরফে হাসপাতালকে কী কী দেওয়া হয়েছে তার পরিসংখ্যান দেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত রাজ্যের হাসপাতালগুলিকে ১ লক্ষ ১১ হাজার ২৯৬’টি পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) দেওয়া হয়েছে। এন নাইন্টি ফাইভ মাস্ক দেওয়া হয়েছে ৪২,২৯৬’টি। সেভেন লেয়ারড মাস্ক ১ লক্ষ ৬০ হাজার। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ১৮,৩৬৩ লিটার। ৩২০০’টি থার্মাল গান। এছাড়াও রেশন বিলি করার জন্য খাদ্য দফতরের কর্মীদেরও ১০ হাজার মাস্ক দেওয়া হয়েছে। পুলিশ বিভাগকেও দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কাজ না করে জ্ঞান দিতে অনেকে পারেন। এখন জ্ঞান দেওয়া বন্ধ করে বিবাদ ভুলে কাজ করুন।