মুখ্যসচিবের সঙ্গে আলোচনায় মেলেনি সমাধান, উৎসবের মধ্যেও অনশন অব্যাহত

ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন মঞ্চে অপর্ণা সেন। এসেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও।

ধর্মতলায় আমরণ অনশনে জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, স্বাস্থ্যসচিবের পদত্যাগ। সেই দাবিতে অনশন পর্বের চতুর্থ দিনের মাথায় গিয়েছে। এর পর বুধবার সন্ধ্যায় জুনিয়র ডাক্তারদের ইমেল করে বৈঠকে ডাকেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। বৈঠকের জন্য স্বাস্থ্যভবনে ডাকা হয় তাঁদের। সেই মতো জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দল স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক করে। এরপর জুনিয়র ডাক্তাররা বাইরে বেরিয়ে এসে দাবি করেন, নতুন করে কিছু বলা হয়নি। সরকার শুধুই মৌখিক আশ্বাস দিয়েছে।

মুখ্যসচিব জুনিয়র ডাক্তারদের সেই মন্তব্য ঠারেঠোরে অস্বীকার করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আলোচনা করলাম। অনুরোধ করলাম। জুনিয়র ডাক্তারের এই মুহূর্তে সময়সীমা জানতে চাইছেন। আমরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা মেনে কাজ করছি। সেই মতোই কাজ এগোচ্ছে।’

তিনি ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সকলে এক মত যে, নির্বাচন হবে। যেখানে যেখানে নির্বাচন হয়নি, সেখানে নির্বাচন হবে। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে।’’ তিনি জানান, প্রয়োজনে আবার আলোচনায় বসা হতে পারে। মুখ্যসচিব বলেন, ‘দরকার হলে আমরা আবার বৈঠকে বসব। কিছুদিন পর আবার দরকার হলে মিটিং করব। ওদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’


প্রসঙ্গত রাজ্যজুড়ে পুজোর মধ্যেই চলছে আরজি কর কাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেটানোর ক্ষেত্রে সরকার কোনও সদর্থক পদক্ষেপ না করায়, তাঁদের সাতজন ধর্মতলায় মঞ্চ বেঁধে ইতিমধ্যেই আমরণ অনশন শুরু করেছেন। তাঁদের কারও কারও শারীরিক অবস্থা কিছুটা উদ্বেগজনক। রক্তে শর্করার মাত্রা কমেছে। তাঁরা এখনও মানসিকভাবে দৃঢ়তা বজায় রাখলেও রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ তাঁদের জন্য যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। সারাদিন ধরে অসংখ্য মানুষ তাঁদের অনশন মঞ্চে এসে তাঁদের সহমর্মিতা দেখিয়ে যাচ্ছেন। বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও অনেকে ছুটে আসছেন আকুল হয়ে।

সিনিয়র ডাক্তাররা বারবার আবেদন জানিয়েছেন সরকার যেন জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। অনশনরত তরুণ চিকিৎসক ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে তাঁরা গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেন। শেষ পর্যন্ত বুধবার সন্ধ্যায় আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে মেল আসে মুখ্যসচিবের। আশার কথা, জুনিয়র ডাক্তাররাও এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। তাঁদের সমস্ত দাবি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করে সরকার কার্যকরী করবেন, এই প্রত্যাশা ডাক্তারদের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষেরও।

যদিও ইতিমধ্যে এক সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জানান যে, জুনিয়র ডাক্তারদের দাবির ৯০ শতাংশ কাজ ১০ অক্টোবরের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যাবে। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, তাঁরা এই মৌখিক প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না। তাঁদের কথায়, মুখ্যসচিব লিখিতভাবে কোনও দায়বদ্ধতার প্রতিশ্রুতি দেননি। তাছাড়া আশ্বস্ত হওয়ার মতো কোনও কাজ এখনও সরকারের তরফ থেকে গ্রাউন্ড লেভেলে দেখা যায়নি। তাই তাঁরা অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন।