মঙ্গলবার রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় দুই দিনাজপুরের প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই দুই জেলায় চলতে থাকা সরকারি প্রকল্পের খোঁজখবর নেন মুখ্যমন্ত্রী। স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ডের পরিষেবা সকলের কাছে পৌঁছেছে কিনা খোঁজ নেন। শিল্পীদের জন্য ‘আর্টিসান কার্ড’-এর কথা ঘোষণা কর্ণজোড়ার বৈঠকেই।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের দাবিদাওয়া পেশ করলেন। কেউ চাইলেন কলেজ, কেউ চাইলেন বিদ্যুৎ বিলে আরও বেশি ভর্তুকি, কেউ আবার মহকুমাকে জেলায় পরিণত করার আবেদন জানালেন। এইসব দাবির বহরে ক্ষুব্ধ হলেন মুখ্যমন্ত্রী।
জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে বললেন, যতই দাও শুধু চাই, কাজের বেলায় কিছু নাই। দাও বললেই হবে, টাকাটা কোথা থেকে আসবে ভেবে দেখেছেন? মমতা এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, দু’বছর কিচ্ছু চাওয়া যাবে না সরকারের ভাড়ারে টান রয়েছে।
ক্ষুব্ধ মমতা বলেন, ম্যাজিশিয়ান তৈরি কর, সে টাকা দিয়ে দেবে। এদিন দিনাজপুরের বিধায়ক আবদুল করিম চৌধুরী ইসলামপুরকে পৃথক জেলা করে দেওয়ার দাবি তুললে রেগে অগ্নিশর্মা হন মমতা। ধমক দিয়ে বলেন, এরকম ‘চিপ’ কথা আর প্রকাশ্যে বলকেন না নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রাখতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার সহ একাধিক প্রকল্প চলছে রাজ্য সরকারের।
শুধু লক্ষ্মীর ভাণ্ডার সামলাতেই যে নবান্নের বিরাট অঙ্কের টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে, সেকথা এদিন গোপন রাখেননি মমতা। সেই সঙ্গে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, আগামী দু’বছর বিধায়কদের নিজেদেরই টাকার সংস্থান করতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার মোটামুটি সব কাজই করে দিয়েছে। বিধায়কদের কাজ হল মানুষের পাশে থাকা। এদিন জেলার চেম্বার অফ কমার্সের এক প্রতিনিধি মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, এক শিল্পপতি ইথানল তৈরির কারখানা করার জন্য চারশো কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চাইছে বিদ্যুতের দরটা কমিয়ে দিলে, এই বিনিয়োগ আনা সহজ হবে।
এই অনুরোধ শুনেই রেগে যান মমতা বলেন, আপনি কি চান, সরকার ভিখারি হয়ে যাক? বিদ্যুতের জন্য এমনিই সরকারকে অনেক ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আর পারবে না সরকার। এদিনের প্রশাসনিক বৈঠকে উত্তর দিনাজপুরের বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী দাবি তোলেন, উত্তর দিনাজপুর থেকে ইসলামপুরকে পৃথক করা হোক। পৃথক জেলা করা হোক ইসলামপুরকে। এমন প্রস্তাব শুনেই মেজাজ হারান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন এরকম দাবি মিটিংয়ে করা উচিত নয়।
এসব চিপ (সস্তা) কথাবার্তা বলবেন না মমতা বলেন, আপনার এইটুকু একটা জেলা। এমনিতেই ইসলামপুর মহকুমা, এখানে পুলিশ জেলা রয়েছে। পৃথক জেলা হলে অফিসার কোথা থেকে পাবেন? একটা জেলা করতে হলে অনেক কাজ করতে হয়। অনেক খরচ হয়।
রায়গঞ্জ থেকে ইসলামপুরের দুরত্ব খুব বেশি নয়। চাইলেই ঠিক করে কাজ করতে পারেন। তবে এদিন সমস্ত বিধায়কের ওপরই অনুদারহস্ত ছিলেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কুশমুণ্ডির তৃণমূল বিধায়ক নমিতা রায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি কমিউনিটি সেন্টারের জন্য আবদার করেন।
যিনি ১৯৭৭ সাল থেকে আরএসপি’র দখলে থাকা আসন ছিনিয়ে এনেছেন। তাঁর আবেদন মঞ্জুর করে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদকে নির্দেশ দেন কমিউনিটি সেন্টার গড়ে দেওয়ার জন্য। এদিন একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তর দিনাজপুরের ১৫ টি এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের ২৩ টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন মমতা।
কর্মসংস্থান বাড়াতে ক্ষুদ্র শিল্পে জোর দেওয়ার নির্দেশ দেন। জানালেন কালিয়াগঞ্জে তৈরি হবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। তাঁতিদের জন্য তিন বছরের অর্ডার থাকবে, যা কর্মসংস্থানে দিশা দেখাবে। আত্রেয়ী নদীর জন্য বিশেষ প্রকল্পের ঘোষণা করে তা দেখভালের দায়িত্ব দেন সেচ দফতরকে।
এদিন রায়গঞ্জের কর্ণজোড়াতে প্রশাসনিক বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, আগামী বছরের জানুয়ারি মাসেই দুই পর্বে দুয়ারে সরকার প্রকল্প চালু হবে। প্রথম পর্বে ১ থেকে ১০ এবং দ্বিতীয় পর্বে ২০ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত দুয়ারে সরকার শিবিরেই সরকারি প্রকল্পের সুবিধে পেতে পারেন সাধারণ মানুষ।