দুর্গাপুজোর ভাসান নিয়ে সংশয় তৈরি হল কেন্দ্রীয় সংস্থা ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গার (এনএমসিজি) পত্রাঘাতে। নদীর দূষণ যাতে না হয়, সেজন্য কীভাবে প্রতিমার ভাসান দিতে হবে, তা নিয়ে একটি নির্দেশিকা আগেই জারি করেছিল রাজ্য। গত বছরের রাজ্যের সেই নির্দেশিকা মেনেই ভাসানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রশাসন।
এরই মধ্যে প্রকাশ্যে এল পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের ১১টি রাজ্যের মুখ্যসচিবকে পাঠানাে এনএমসিজি’র চিঠি। তাতে পরিষ্কার বলা হয়েছে, গঙ্গা বা তার কোনও শাখা-প্রশাখাতেই প্রতিমার ভাসান দেওয়া যাবে না। ভাসানের জন্য সংশ্লিষ্ট পুর এলাকা এবং গঙ্গা বা তার শাখাপ্রশাখার পাড়ে সাময়িকভাবে পুকুর বা জলাধার তৈরি করতে হবে। গঙ্গা বা তার কোনও শাখাপ্রশাখায় যাতে ভাসান না হয়, তা নিশ্চিত করতে পাড় ঘিরে দিতে হবে।
রাজ্যকে পাঠানাে ১৫ দফা নির্দেশিকার শেষে এনএমসিজি’র ডিজি রাজীবরঞ্জন মিশ্র জানিয়ে দিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের এই নির্দেশিকা কার্যকর করতে হবে। কেউ নির্দেশ অমান্য করলে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করতে হবে। জরিমানার অঙ্ক জমা করতে হবে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদের কাছে।
যদিও রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা এদিন বলেন, ‘আমার কাছে এরকম কোনও চিঠি আসেনি। আমাকে কেউ এ ব্যাপরে কিছু বলেওনি। পর্ষদের আধিকারিকরাও এই নির্দেশিকার বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি। কেএমডিএ বা কলকাতা পুরসভার কর্তারাও নির্দেশ নিয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছিলেন।
শুধুমাত্র কলকাতাতেই ২৬০০-এর মতাে বারােয়ারি পুজোকমিটি দুর্গাপুজোর জন্য আবেদন করে। বাড়ি ও আবাসনের পুজো ধরলে সংখ্যাটা আরও অনেকটা বাড়বে। পর্ষদের হিসাব অনুযায়ী, কলকাতা ও তার আশেপাশের জেলাগুলিকে মিলিয়ে প্রায় ২৪ হাজার দুর্গাপুজোর ভাসান হয়। এর সিংহভাগই গঙ্গায়, সন্দেহ নেই। ফলে এনএমসিজি-র নির্দেশের প্রেক্ষিতে সরকার নতুন কোনও পদক্ষেপ করে কিনা, সেটাই দেখার। পর্ষদের এক আধিকারিক বলেন, ‘পুজো উদ্যোক্তাদের ভাসানের ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম মানতে হবে, তা নিয়ে রাজ্য সরকারের একটি বিজ্ঞপ্তি রয়েছে। গত বছরের সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ীই এ বছরও ভাসান নিয়ে উদ্যোক্তাদের সচেতন করা হয়েছে’। তবে সেই নির্দেশিকায় গঙ্গায় ভাসান নিয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলা নেই। এনএমসিজি-র নির্দেশে পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে, গঙ্গা বা তার শাখাপ্রশাখায় ভাসান দেওয়া যাবে না। রাজ্যের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ভাসানের নিয়ম অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটিকে পঞ্চায়েত ও পুর এলাকা ভেদে তিন থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। এনএমসিজি যে জরিমানার অঙ্ক বলেছে, তা অনেক গুণ বেশি, ৫০ হাজার টাকা।
এনএমসিজি যে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেই এই নির্দেশ দিয়েছে এমনটা নয়। উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, হিমাচলপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও হরিয়ানার মতাে আরও ১০টি রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছেও একই চিঠি গিয়েছে। গণেশ চতুর্থী, বিশ্বকর্মা পুজো, দশেরা, দীপাবলি, হট ও সরস্বতী পুজোর মতাে উৎসব শেষ হওয়ার সাতদিনের মধ্যে ভাসান সংক্রান্ত নির্দেশিকার ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে রিপাের্ট দিতে হবে এনএমসিজিকে।
ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গার তরফে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে গত ১৬ সেপ্টেম্বর। দুর্গাপুজোর ভাসান শুরু হবে মঙ্গলবার, দশমী থেকে এর মধ্যে গঙ্গা বা তার শাখাপ্রশাখার পরিবর্তে ভাসানের জন্য নতুন পরিকাঠামাে তৈরি করা একরকম অসম্ভব বলেই মনে করছেন পুজো উদ্যোক্তারাও। কিন্তু নিয়ম অমান্য করলে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হবে কিনা, তা নিয়ে তারাও অন্ধকারে রয়েছেন।