একমাস শাটার নামানো ছিল দোকানগুলির। ‘স্বাভাকি শহর’-এর কোলাহল করোনার কোপে স্তব্ধ। রবিবার লকডাউনের বাজারে দোকানের লক খোনেনি অধিকাংশ দোকানদার। কিন্তু কেন্দ্রের নির্দেশিকা মোতাকে প্রায় একমাস পরে শহর কলকাতার গুটিকয়েক ব্যবসায়ী দোকান খোলেন। কিন্তু কিনবে কারা! জামা কাপড়ের দোকানে ভিড় নেই, কলম-খাতা কিনতেও এল না কেউ, আক্ষেপ ব্যবসায়ীদের।
শনিবার কেন্দ্রীয় সরকার একটি নির্দেশিকা জারি করে। সেখানে বলা হয়, ছোট এবং মাঝারি দোকানগুলি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ব্যবসা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে দোকানের কর্মীসংখ্যা অর্ধেক করতে হবে। শপিং মলগুলি এই নির্দেশিকার আওতায় পড়ে না, এমনটা কার্যত স্পষ্ট উল্লেখ করা ছিল এই নির্দেশিকায়।
রবিবার কেন্দ্রের এই নির্দেশ পাওয়ার পরই উত্তর থেকে দক্ষিণ, শহর কলকাতার গুটিকয়েক ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে ছিলেন। কিন্তু খরিদ্দারই দোকানে আসেনি, দাবি অধিকাংশেরই।
কেষ্টপুরের ব্যবসায়ী রমেশ পান্ডে জানান, বিকেলের দিকে কিছুক্ষণের জন্য দোকান খুলে ছিলেন তিনি। তার জামা কাপড়ের ব্যবসা কিন্তু এদিন একজন ক্রেতাও দোকানে পা রাখেননি, জানান এই ব্যবসায়ী।তিনি আরও বলেন, বিকেল চারটে থেকে ছয়টা অবধি একটি পাল্লা খুলে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু ক্রেতারা না আসায় ছটার সময় তা বন্ধ করে দেন রমেশ বাবু।
কিছুটা একই সুরে শোনা গেল বাঘা যতীনের ব্যবসায়ী অনুপম দাস’এর গলায়। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা দেখার পর নিজের ছোট্ট জুতোর দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। দীর্ঘদিন লকডাউন চলতে থাকায় জমানো অর্থ প্রায় শেষ তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই দোকান খুলেছিলেন তিনি, জানান এই ব্যবসায়ী। কিন্তু দোকানে আসেনি একটিমাত্র ক্রেতাও।
করোনাভাইরাস আতঙ্কে লকডাউন মানার ক্ষেত্রে শহরাবীস আশাব্যঞ্জকভাবে সচেতন, জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাদের কথায়, যদি স্থানীয় প্রশাসন মনে করে এলাকার অবস্থা আশঙ্কাজনক সেক্ষেত্রে প্রশাসনের সমস্ত নির্দেশ তারা মেনে চলবেন।
তবে রবিবার লকডাউন পরবর্তী ব্যবসার হালহকিকত নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে এই ব্যবসায়ীদের কপালে। তাদের কথায়, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তরা মূলত তাদের খরিদ্দার। সেক্ষেত্রে লকডাউন পরবর্তী সময় নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তদের কাছে জিনিসপত্র কেনার টাকা থাকবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
তাদের কথায়, উচ্চবিত্তরা শপিংমলে চলে যাবেন। কিন্তু পাড়ার মধ্যবিত্ত লোকজনের হাতে যদি অর্থ না থাকে, সেক্ষেত্রে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের দুর্দিন আসতে চলেছে, জানান বাগুইআটির ব্যবসায়ী শীতল দাস।
এদিকে রবিবার লক্ষ্মী লাভ না হওয়ায় কিছুটা হতাশ হলেও সাধারণ মানুষের সচেতনতায় কার্যত সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের কথায়, লকডাউন মানতে শহরবাসী সচেষ্ট। করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় এটাই এখন একমাত্র পথ। এই মারণ ভাইরাসের তাণ্ডব শেষ হয়ে গেলে আবার শহর কলকাতা জেগে উঠবে আশাবাদী এই ব্যবসায়ীরা।