মাওবাদী সংক্রান্ত মামলার তদন্তে কলকাতা–সহ জেলায় জেলায় এনআইএ অভিযান

মঙ্গলবার ভোরবেলায় কলকাতা ও জেলায় জেলায় মাওবাদী সংক্রান্ত মামলায় তদন্তে এনআইএ। এনআইএ–র রাঁচি শাখার তরফে কলকাতার এনআইএ কর্মীদের নিয়ে এই তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। মোট ১২ টি জায়গায় এই তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে তাঁরা। তাঁর মধ্যে অন্যতম কলকাতার নেতাজিনগর।

এদিন আসানসোলের পানিহাটি পল্লীশ্রী এলাকায় মাওবাদী সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকার সন্দেহে শিপ্রা চক্রবর্তী নামক এক নারীর বাড়িতে হানা দেয় এনআইএ (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি)-এর কর্মকর্তারা।প্রথমে তাঁর বাড়িতে গিয়ে দরজায় ডাকাডাকি শুরু হয়, কিন্তু ভেতর থেকে কোনও সাড়া না পাওয়ায় এনআইএ সদস্যরা গেট পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় বাড়ির সামনে কৌতূহলী প্রতিবেশীদের ভিড় জমে যায়, তারা অনুমান করতে থাকেন কেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা শিপ্রার বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছেন।

ঘোলা থানার পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা পুরো বাড়িটি ঘিরে ফেলেন। দীর্ঘক্ষণ ধরে বাড়ির ভেতরে তল্লাশি চালানো হয়। অভিযোগ উঠেছে, শিপ্রা চক্রবর্তী এবং তার স্বামী মানবেশ সরকার মাওবাদী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত।


অন্যদিকে, মঙ্গলবারই সকাল ৮টা নাগাদ আসানসোলের কুলটি থানার ডিসেরগড় গ্রামের একটি বাড়িতেও এনআইএর অভিযান চালানো হয়। চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক সংগঠন ‘অধিকার’-এর নেত্রী সুদীপ্তা পালের বাড়িতে তল্লাশি শুরু হয়। সুদীপ্তা ওই বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

সুদীপ্তা জানান, ভোর ছ’টা নাগাদ এনআইএর দল তার বাড়িতে প্রবেশ করে এবং চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তল্লাশি চালায়। অভিযানের শেষে তার অ্যানড্রয়েড ফোন ও কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক নিয়ে যায় কর্মকর্তারা। সুদীপ্তার দাবি মিথ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে চাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। তিনি এরকম কোনও মাওবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত নন।

সূত্রের খবর, ছত্তীসগড়ের বিজাপুর জেলায় মাওবাদী কর্মকাণ্ডের তহবিল ও সংগঠনের বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে এনআইএ পশ্চিমবঙ্গের বারোটি স্থানের নাম পেয়েছে। সেই তালিকায় কলকাতাও আছে। এর ভিত্তিতেই এই অভিযান চলছে। জানা গেছে, শিপ্রা ও সুদীপ্তা এক সময় আসানসোলে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন। প্রায় পাঁচ বছর আগে শিপ্রা আসানসোল ছেড়ে পানিহাটির পল্লীশ্রী এলাকায় তার নিজস্ব বাড়িতে থাকতে শুরু করেন।

স্থানীয়দের মতে, এই দুই নারী বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন এবং কয়লাখনি শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করতেন। ‘মজদুর অধিকার’ নামক একটি সংগঠনও তারা পরিচালনা করতেন। অভিযোগ রয়েছে, ছত্তীসগড়ের মাওবাদীদের সাথে সুদীপ্তা ও শিপ্রার যোগাযোগ ছিল, যার ফলে এই অভিযান চালানো হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে জানুয়ারী মাসে মাওবাদী সেন্ট্রাল কমিটির মেম্বারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁর নাম সব্যসাচী গোস্বামী। অস্ত্রসহ পুরুলিয়া ডিস্ট্রিক পুলিস তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এবার সেই মাওবাদী চক্রের সন্দেহে রাজ্যজুড়ে তল্লাশি অভিযান এনআইএর।