ট্যাবের টাকা প্রদানে নতুন ভাবনা, লক্ষ্মীর ভান্ডারকে মডেল করার পরিকল্পনা নবান্নের

প্রতীকী চিত্র

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর ট্যাবের টাকা অন্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়ার পর চিন্তিত রাজ্য সরকার। টাকা প্রদানের যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল, তা মোটেই নিরাপদ নয়। এই টাকা প্রদানের উপায় নিয়ে নতুন ভাবনাচিন্তা শুরু করে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। এজন্য লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পকে মডেল হিসেবে বেছে নিতে চাইছে নবান্ন। কারণ এখনও পর্যন্ত লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে রাজ্যের মহিলাদের যে বিপুল টাকা মাসে মাসে দেওয়া হয়, সেই পদ্ধতিতে কোনও গলদ ধরা পড়েনি। সেজন্য নবান্ন বিভিন্ন দপ্তরকে পরামর্শ দিয়েছে, এবার থেকে রাজ্যের মানুষকে ট্যাব বা অন্য কোনও জনমুখী প্রকল্পে অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে যেন লক্ষ্মীর ভান্ডারের পদ্ধতিকে ‘আদর্শ’ হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্যাব কাণ্ড সামনে আসার পর মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ সোমবার নবান্নে শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে মুখ্য সচিব শিক্ষা দপ্তরকে এই পরামর্শ দিয়েছেন। আগামী বছরগুলিতে যাতে ট্যাব প্রকল্পে কোনও পড়ুয়া যাতে প্রতারিত না হয়, সেজন্য এই সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। বৈঠকে আধিকারিকদের স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, রাজ্য সরকারের প্রত্যেক প্রকল্পের টাকা প্রদানের ক্ষেত্রে ‘স্বচ্ছতা’ বজায় রাখতে চাই। কারণ, এই স্বচ্ছতার ওপর সরকারের ‘ভাবমূর্তি’ নির্ভর করে। অর্থ প্রদানে কোনও অনিয়ম হলেই সরকারের ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তি’ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সেজন্য শিক্ষা দপ্তরের প্রত্যেক আধিকারিককে এবিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এভাবে রাজ্য সরকারের অন্যান্য দপ্তরকেও সতর্ক করা হবে বলে সূত্রের খবর।

প্রসঙ্গত স্কুলে বৃত্তিমূলক কোর্স পড়ানোর জন্য একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের ট্যাব কেনার টাকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লকডাউনের সময় অনলাইনে পঠন-পাঠনের সুবিধার্থে এই প্রকল্পের কথা ভাবা হয়। এই প্রকল্পে টাকা দেওয়ার জন্য স্কুলগুলিকে অনলাইনে ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টালে ছাত্রছাত্রীদের নাম নথিভুক্ত করতে হয়। এছাড়া ‘তরুণের স্বপ্ন’ নামে আরও একটি পোর্টালেও নাম নথিভুক্ত করা যায়। সেখানে পড়ুয়াদের নাম, ব্যাঙ্কের নাম, শাখা, আইএফএসসি ও অ্যাকাউন্ট নম্বর আপলোড করতে হয়। এছাড়া আধার কার্ডের নম্বর দেওয়ারও অপশন রাখা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ছাত্রছাত্রীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার সংযোগ নেই। যার ফলে এই টাকা প্রতারণার একটা সুযোগ থেকে যাচ্ছে।


অপরদিকে লক্ষ্মীর ভান্ডারের ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রাপকের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে গুরুত্ব সহকারে আধার সংযুক্তিকরণ করা হয়েছে। ফলে এই প্রকল্পে ২০২১ সাল থেকে প্রায় তিন বছর ধরে বিপুল সংখ্যক মহিলাকে অর্থ প্রদান করা হলেও কোনও প্রতারণার ঘটনা ঘটেনি। এই মুহূর্তে রাজ্যে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে প্রায় দুই লক্ষের বেশি মহিলাকে মাসে মাসে টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সেজন্য ট্যাব সহ যেকোনও জনকল্যাণমুখী প্রকল্পেই অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে লক্ষ্মীর ভান্ডারকে আদর্শ প্রকল্প হিসেবে বেছে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন নবান্নের শীর্ষ আধিকারিকরা।

উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত ট্যাব কাণ্ডে কলকাতা বাদে বাকি জেলাগুলিতে মোট ৫৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তাতে গ্রেপ্তার হয়েছে মোট আট জন। ঝাড়গ্রামে ১০টি অভিযোগ করা হয়েছে। যা অন্যান্য জেলাগুলির তুলনায় অভিযোগের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। সেইসঙ্গে এ পর্যন্ত কলকাতা বাদে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ৭৮১ জন পড়ুয়া প্রতারিত হয়েছে। আবার কলকাতা পুলিশের অধীনে প্রতারিত হয়েছে ১০৭ জন ছাত্র ছাত্রী। কলকাতায় এ পর্যন্ত মোট ১০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। যার ভিত্তিতে এখনও পর্যন্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।