ঘূর্ণীঝড়ের মোকাবিলায় প্রস্তুত নবান্ন

কলকাতা, ২৫ মে –  বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত গভীর নিম্নচাপ শনিবারই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। রবিবার তা আছড়ে পড়বে স্থলভাগে। আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, বাংলাদেশের খেপুপাড়া এবং সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপের উপকূলে সর্বশক্তি নিয়ে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণীঝড় রেমাল। সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার। ঘূণিঝড়ের ধাক্কা সামলাতে ইতিমধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে রাজ্য প্রশাসন। শুক্রবার নবান্নে রেমাল মেকাবিলায় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক বসে। নবান্নে ইতিমধ্যেই চালু করা হয়েছে বিশেষ কন্ট্রোল রুম । কন্ট্রোল রুমের নম্বর ১০৭০ এবং (০৩৩) ২২১৪ ৩৫৩৫। রাজ্যের প্রতিটি জেলায় কন্ট্রোল রুম চালু করেছেন জেলাশাসকেরাও । শুরু হয়েছে মাইকিং, ফিরিয়ে আনা হচ্ছে মতস্যজীবীদের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, ‘ঘূর্ণীঝড় আসতে পারে । যারা সমুদ্রে মাছ ধরতে যান তাঁদের বারণ করা হয়েছে। প্রশাসন ঠিক সময় মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় বার্তা পৌঁছে দেবে। ‘

কলকাতায় ওই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কতটা পড়বে, তা আগাম বোঝা না গেলেও সম্ভাব্য বিপর্যয়ের মোকাবিলায় লালবাজারে খোলা হয়েছে ‘ইন্টিগ্রেটেড কন্ট্রোল রুম’। সেখানে পুলিশ ছাড়াও থাকছেন দমকল, পুরসভা, পূর্ত দফতর, কেএমডিএ, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর, সিইএসসি এবং এনডিআরএফের প্রতিনিধিরা। সরকারি বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয় রাখতেই কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ওই কন্ট্রোল রুম কাজ শুরু করেছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।

লালবাজারের কর্তারা জানিয়েছেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, ঝড়ের প্রভাবে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় প্রচুর গাছ উপড়ে পড়ে। পুরনো, জীর্ণ বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনাও ঘটে। ঝড়ের তীব্রতায় তেমন কিছু ঘটলে যাতে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায়, তার জন্যই ওই কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে । পুলিশ আধিকারিকদের আশা, প্রতিটি দফতরের প্রতিনিধিরা সেখানে উপস্থিত থাকায় দ্রুত উদ্ধারকাজ চালাতে কোনও রকম সমস্যা হবে না।  এর পাশাপাশি, সেনাবাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। প্রয়োজনে উদ্ধারকাজে সেনার সাহায্য চাওয়া হতে পারে।
 
লালবাজারের তরফে প্রতিটি থানা এবং ট্র্যাফিক গার্ডকে রেমাল নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে । ট্র্যাফিক গার্ডগুলিকে বিপর্যয় মোকাবিলায় বিশেষ দল তৈরি রাখতে বলা হয়েছে ।  লালবাজারের তরফে থানাগুলিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার পাশাপাশি  ঝড়ে বিদ্যুৎ-বিপর্যয় ঘটলে জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে।

লালবাজার সুত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ঝড়ের মোকাবিলায় কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১৫টি দল তৈরি করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের ১০টি ডিভিশনে একটি করে দল রয়েছে। লালবাজারে এবং পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে থাকছে দু’টি দল। প্রতিটি দলে ৭ জন করে সদস্য থাকছেন। তাঁদের সঙ্গে থাকছে গাছ কাটার করাত-সহ প্রয়োজনীয় সব রকম জিনিস।


কলকাতা শহরের বিপজ্জনক বাড়িগুলির বাসিন্দাদের  সরানোর প্রয়োজন আছে কি না, তা নিয়ে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। প্রতিটি থানাকে স্থানীয় পুরপ্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি, সিইএসসি-র আঞ্চলিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আগে থেকেই যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে, যাতে ঝড়ের পরবর্তী অবস্থা তাঁদের সাহায্য নিয়ে দ্রুত সামলানো যায়।

 
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বাংলা থেকে একাধিক ট্রেন বাতিল করেছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, শনিবার থেকেই দক্ষিণবঙ্গে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। এরপর রবিবার এবং সোমবার বাড়বে দুর্যোগের দাপট। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ঘণ্টায় ৮০-৯০ কিলোমিটার বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া। তাই ওই দু’দিন কয়েকটি ট্রেন বাতিল বাতিল কিংবা যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।