পুজো বয়কট-বিতর্কের আবহে ‘জাঁকজমকপূর্ণ’  দুর্গোৎসবের চ্যালেঞ্জ নারায়ণ এবং রথীনের

‘গত বছরের থেকেও এবার জেলার দুর্গাপুজোর উৎসব হবে জাঁকজমকপূর্ণ’, পুজো বয়কট-বিতর্কের আবহে ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’ ছুঁড়ে দিলেন অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী। তুলনামূলক ছোটো পুজোগুলিকেও সাহায্য করার বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনকে আর্জি রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের। আরজি কর কাণ্ডের জেরে দূর্গাপুজোয় সামান্য হলেও ভাটা পড়েছে। কমেছে পুজো-কেন্দ্রিক উত্তেজনা, প্রতিমা শিল্পীদের ঠোঁটে নেই স্বস্তির হাসি, পুজোর বাজার থেকেও যেন উধাও হয়েছে পুজোর গন্ধ। এই পরিস্থিতিতে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ঢাকি থেকে বেলুনওয়ালার, যাঁদের পকেটে অর্থের জোয়ার আসে কেবল উৎসবকে কেন্দ্র করেই। অত্যন্ত দূরদৃষ্টির সঙ্গেই সকল দিক বিচার করে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ‘এবার উৎসবে ফিরুন’।

মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের নেতিবাচক ব্যাখ্যা দিয়ে পাল্টা বিরোধী শিবির দাবি করেছিল, আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে চলতি বছরের পুজো বয়কট করা হবে। পাশাপাশি উৎসবে সামিল না হওয়ারও সুর শোনা গিয়েছিল আন্দোলনকারীদের একাংশের মুখে। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে ন্যায় বিচারের দাবি তো চলবেই কিন্তু তার জেরে থেমে যাবে না সমাজের হতদরিদ্র মানুষের জীবন। এই বার্তা দিয়েই ‘জাঁকজমকপূর্ণ’ দুর্গোৎসবের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন নারায়ণ। সেই সঙ্গে ছোটো পুজোগুলির পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিলেন রথীন। সোমবার মধ্যমগ্রাম নজরুল মঞ্চে বারাসত পুলিশ জেলার পক্ষ থেকে আয়োজিত পুজো সমন্বয় বৈঠকে যোগ দিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে নারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘ধর্ম যারা মানেন না, তাঁরা তিলোত্তমার দোহাই দিয়ে উৎসবে সামিল হবেন না বলে জানিয়েছিলেন। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, গত বছরের থেকেও এবার জেলার দুর্গাপুজোর উৎসবে বেশি জাঁকজমক হবে।’

এখানেই শেষ নয়, জেলার পুজো কমিটিগুলিকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে বিধায়ক বলেন, ‘পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, গত বছর যেখানে খিচুড়ি ভোগ দেওয়া হয়নি, এবার সেখানে ভোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যেখানে বাউল গানের আয়োজন করা হয়নি, সেখানে একদিন হলেও বাউল গানের ব্যবস্থা করতে হবে। তার জন্য জেলা পরিষদের সভাধিপতি হিসাবে আমার কিছু করার থাকলে, পুজো কমিটির কাছে অনুরোধ আমাকে বলবেন, আমি সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘আমরাও বাংলার বুকে প্রমাণ করতে চাই, আমরা উৎসবে আছি। কারণ দুর্গাপুজো বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব।’


রথীন ঘোষ বলেন, ‘জেলায় বহু ছোট পুজো কমিটি আছে, যারা সরকারি অনুদান পায় না। আমি পুলিশ-প্রশাসনকে বলব একেবারে ছোট পুজোগুলিকে যদি পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু সহায়তা করা যায়। এই উৎসব লক্ষাধিক মানুষের অন্নের জোগান দেয়, শতসহস্র হতদরিদ্র শিশুদের মুখে হাসি ফোটায়। তাই কোনওভাবেই উৎসব ভুলে সমাজের এক শ্রেণীর মানুষকে কোনঠাসা করে দিতে পারিনা আমরা’।

উল্লেখ্য, এদিন মধ্যমগ্রাম থেকে বারাসত, হাবরা থেকে গোবরডাঙ্গা পর্যন্ত পুজো উদ্যোক্তাদের নিয়ে সমন্বয় বৈঠক করে বারাসত জেলা পুলিশ। বৈঠকে নারায়ণ গোস্বামী এবং রথীন ঘোষ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী, বারাসত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্পর্শ নীলাঙ্গী সহ দমকল, পুলিশ, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য এবং পূর্ত দপ্তরের আধিকারিকগণ। এদিন পুজো গাইড ম্যাপ উদ্বোধন করে পুজোর দিনে পুজো উদ্যোক্তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে বিশেষ বার্তা দেন প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়া এবং শরদ কুমার দ্বিবেদী।