আজ সকালের মধ্যেই স্থলভাগে আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। তার আগে বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘দানা’র উপর নজর রাখতে বৃহস্পতিবার রাতে তিনি নবান্নেই থাকবেন বলে জানান মমতা। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার আগে সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়টি তুলে ধরার সময় জনগণকে গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সাংবাদিক বৈঠকে এদিন মমতা জানিয়েছেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় রাজ্যে ৮৫১টি ক্যাম্প চালানো হচ্ছে। উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় আমফান ও ইয়াশ আছড়ে পড়ার আগেও এভাবেই মানুষকে সতর্ক করতে দেখা গিয়েছিল মমতাকে। সর্বক্ষণ নজর রেখেছিলেন পরিস্থিতির উপর। এবার ‘দানা’ মোকাবিলাতেও তাঁর তৎপরতা লক্ষ্য করা গেল। সারারাত জেগে নবান্ন থেকে তিনি গোটা রাজ্যের উপর নজরদারি চালাবেন।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে এমন জায়গা থেকে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪১ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সকলে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে রাজি হননি। বৃহস্পতিবার দুপুরে মমতা জানান, এখনও পর্যন্ত ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৭ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় ৮৫১টি ক্যাম্প চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি ত্রাণ শিবিরগুলিতে ৮৩ হাজার ৫৮৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমরা উপকূলবর্তী অনেকগুলি এলাকায় রিলিফ সেন্টার করে দিয়েছিলাম। সেগুলিতে মানুষ আশ্রয় নিচ্ছেন। পাশাপাশি আশপাশের বিভিন্ন স্কুল ও নিরাপদ কিছু স্থানেও আশ্রয় নেন।’
মমতা জানিয়েছেন, সারাক্ষণ নবান্নে হেল্পলাইন নম্বর চালু থাকবে। পাশাপাশি জেলাগুলিতেও হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। নিজেদের জেলা ও ব্লকে বৃহস্পতিবার রাতে নজরদারি চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। ঘূর্ণিঝড়ের সার্বিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে বৃহস্পতিবার মমতার সঙ্গে নবান্নে থাকবেন আরও অনেক আধিকারিক। সকলের জন্য জল, খাবার সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবন হল সবচেয়ে দামী। মানুষের জীবন রক্ষা করতে হবে। স্কুলগুলি ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে সেই কারণেই। আমি আজ রাতে নবান্নেই থাকব। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের সকলে কাজ করবেন।’ তিনি জানান, মুখ্যসচিব রাতে বাড়ি থেকে পরিস্থিতির উপর নজর রাখবেন। শুক্রবার সকালে নবান্নে চলে আসবেন মনোজ পন্থ।
ঘূর্ণিঝড় নিয়ে গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সকলকে সতর্ক থাকার কথাও বলেছেন তিনি। ওড়িশাতে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। কিন্তু এর প্রভাব পড়বে পশ্চিমবঙ্গেও। এদিন এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দেন মমতা। যে কোনও সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব রাজ্যে পড়তে পারে। তাই আধিকারিকদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ভোর ৪টের সময় ল্যান্ডফল হলেও তা মোকাবিলা করতে আধিকারিকরা যেন তৈরি থাকেন। তিনি এদিন আরও জানান, কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থা আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। তবে জেলায় বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণ কাজ চলছে। এই কারণে নিকাশি ব্যবস্থা একাধিক এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিষয়টির উপর নজর রাখার পরমর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
নবান্নের হেল্পলাইন নম্বরটি হল (০৩৩) ২২১৪৩৫২৬ এবং ১০৭০। হেল্পলাইন নম্বর দিয়ে সেখানে অহেতুক ফোন না করার অনুরোধ জানিয়েছেন মমতা। শুধুমাত্র সঠিক কোনও তথ্য দিতেই এই নম্বরে ফোন করতে পারবেন জনগণ। সকলের কাছ থেকে সহযোগিতা আশা করেছেন তিনি। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভুল কোনও তথ্য যাচাই করার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘এটি মানুষের জীবন বাঁচানোর খেলা। প্যানিক করবেন না। তবে সতর্ক থাকুন।’ পাশাপাশি সমুদ্রে কাছাকাছি এলাকায় ঘুরতে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। তাঁর অনুরোধ, পুলিশ ও প্রশাসনের কথা মেনে চলুন। মৎস্যজীবীদেরও সতর্ক করেছেন তিনি।
ফের এদিন ডিভিসির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘ডিভিসি আবার ২৪ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে। ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলে আবার ছাড়বে। বাংলাটা যেন ওদের জল হজম করার একটা জায়গায় পরিণত হয়ে গিয়েছে। তার থেকে যদি ডিভিসি ঠিক ভাবে খনন করে পলি পরিস্কার করে, তা হলে ওরা আরও ৪ লক্ষ কিউসেক জল বেশি রাখতে পারে।’