জুনিয়র ডাক্তারদের তিন দফা দাবি নিয়ে নবান্নে বৈঠক সারলেন মুখ্যসচিব

সোমবার কালীঘাটে বৈঠকের পর ফের নবান্নে রাজ্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তিন দফা দাবি জানিয়ে এই বৈঠকে অংশ নেন চিকিৎসকরা। বুধবার নবান্নে বৈঠকে যোগদান করতে যাওয়ার আগে সাংবাদিক বৈঠক করে এই দাবিগুলি জানান তাঁরা। তাঁরা সেখানে মুখ্যসচিবের কাছে তাঁদের দাবি পেশ করেন। এদিন কার্যবিবরণী লেখার জন্য কালীঘাটের মতো নবান্নের বৈঠকেও স্টেনোগ্রাফার নিয়ে যান জুনিয়র চিকিৎসকরা।

তাঁদের প্রথম দাবি হল, প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়র ডাক্তারদের আলাদা রেস্টরুম, আলাদা শৌচাগার, প্রতিটি রেস্ট রুমের সামনে সিসিটিভি, যথাযথ নিরাপত্তাকর্মী, প্রতিটি অন কল রুমে প্যানিক বাটন, প্রতিটি হাসপাতালের ফাঁড়িতে নির্দিষ্ট সংখ্যায় নারী পুলিশকর্মী নিয়োগ। হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজগুলিতে যৌন হেনস্থা প্রতিরোধে আইসিসি গঠন করা। এই সব দাবি পূরণের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে কলেজভিত্তিক টাস্ক ফোর্স গঠন করার দাবি জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।

দ্বিতীয় দাবি হল, একটি কেন্দ্রীয় ‘রেফারাল সিস্টেম’ গড়ে তোলা। যাতে প্রতিটি হাসপাতালে কোন বিভাগে কোন সময়ে ক’টি বেড খালি আছে, সেই তথ্য সকলে জানতে পারেন। এতে রোগীদের হয়রানি বন্ধ করা যাবে। নির্মূল হবে হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে গড়ে ওঠা দালালচক্র। এ ছাড়া তাঁদের দাবি, প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ, জেলা হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে যথাযথ কর্মী নিয়োগ করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক কর্মীর বদলে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ করতে হবে। সমস্ত স্তরের স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোকে ঢেলে সাজাতে হবে। রক্তপরীক্ষা থেকে শুরু করে অন্যান্য যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিকাঠামো যথাযথভাবে গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিত্ব-সহ টাস্ক ফোর্স গড়ার দাবি জানানো হয়েছে রাজ্যের মুখ্য সচিবের কাছে।


তৃতীয় দাবিটি হল, প্রতিটি কলেজে ভয়ের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গড়তে হবে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্যস্তরে বিশেষ কমিটি গড়তে হবে। এই কমিটিগুলিতে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিকে রাখতে হবে হবে।

প্রসঙ্গত বুধবার বৈঠকে বসতে চেয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে ইমেল পাঠিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের যে দাবিগুলি আগের বৈঠকে সমাধান হয়নি, তা নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়ে ইমেল পাঠানো হয়েছিল। বুধবার দুপুরে সেই মেলের জবাব আসে। নবান্নের সভাঘরে বৈঠক হওয়ার কথা জানিয়ে সন্ধ্যায় জুনিয়র ডাক্তারদের ডেকে পাঠান মুখ্যসচিব। সেইমতো তাঁরা নির্দিষ্ট সময়ে নবান্নে হাজির হয়ে মুখ্য সচিবের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘন্টা বৈঠক করেন।

আগেই আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মুখ্যসচিব জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন তিনি। সেই মর্মে ইমেল পাঠানো হয় জুনিয়র ডাক্তারদের। আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের পাঠানো ইমেলে মূলত দু’টি বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। এতদিন জুনিয়র ডাক্তাররা যে পাঁচ দফা দাবিতে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধরনা-অবস্থান করছেন, তার মধ্যে চার এবং পাঁচ নম্বর দাবি এখনও মেটেনি। মুখ্যসচিবের পাশাপাশি বৈঠকে রাজ্যের গড়া টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের থাকার কথাও উল্লেখ করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। মুখ্যসচিবের ইমেলে সন্ধ্যা ৬ টা ১৫ মিনিটে জুনিয়র ডাক্তারদের নবান্নে পৌঁছানোর কথা বলা হলেও তাঁরা প্রায় ১ ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছান।

উল্লেখ্য, জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষ থেকে বুধবারের ইমেলে বলা হয়, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। এ ছাড়াও রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভয়মুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে হবে। ‘থ্রেট কালচার’ বন্ধ করতে হবে রাজ্য সরকারকে।