আমার হৃদয় চূর্ণ হয়েছে: মমতা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: SNS)

রাজনৈতিক দিক থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুই গ্রাম পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসার কথা ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই, মুখ্যমন্ত্রী এখানে এসে কী বার্তা দেবেন, তা নিয়ে যেমন কৌতূহল ছিলো তেমনি, তিনি মৃত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি এবং আর্থিক সাহায্য দেবেন বলে, অনেকেই অনুমান করেছিলেন।

তবে, অনেকের মধ্যে এই প্রশ্নটাও ছিলো যে, মঙ্গলবার ২২ মার্চ রাত্রি ৮ টা ৩৫ মিনিটে রামপুরহাটে বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান তৃণমূল কংগ্রেসের শেখ ভাদুকে বোমা মেরে খুনের ঘটনার পরে ওই রাত্রেই শেখ ভাদুর অনুগামীরা গ্রামে তাণ্ডব চালিয়ে বহু মানুষকে ঘরের মধ্যে ভরে নৃশংসভাবে বাইরে থেকে শিকল বন্ধ করে পুড়িয়ে মারে।

সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা ৮ জন বলা হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় গ্রামের দশটি বাড়ি। অনেক পরিবার গ্রাম ছেড়ে চলেও যায় আতঙ্কের কারণে। আর এই ঘটনার জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি।


সর্ব ভারতীয় ক্ষেত্রেও এই ঘটনার প্রভাব পড়ে। এরপরই বগটুই গ্রামের পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে তিনি বৃহস্পতিবার ২৪ মার্চ বগটুই গ্রামে আসছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই ঘোষণা করেন। তারপর থেকে প্রশাসনিক তৎপরতাও শুরু হয়ে যায়।

ঘটনার জেরে জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী কর্তব্যে গাফিলতির কারণে আগেই রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সায়ন আহমেদকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেন। ক্লোজ করে রামপুরহাট থানার আইসি ত্রিদীপ প্রামাণিককে।

বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেলিকপ্টারে এসে সোজা চলে যান বগটুই গ্রামে। সেখানে পৌঁছে তিনি গ্রামের অনেকের সাথেই কথা বলেন। যাঁরা গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তাঁদের গ্রামে ফিরিয়েও আনা হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

তারপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে। আধুনিক বাংলায় এতো বব্বর কিছু ঘটতে পারে, আমি কখনও বিশ্বাস করি না মা ও শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। আপনার পরিবারের সদস্যরা মারা গিয়েছে।

কিন্তু আমার হৃদয় চূর্ণ হয়েছে। এখানকার এসডিপিও, আইসি, ডিআইবি তাঁদের দায়িত্ব পালন না করায় তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

যাঁদের ক্লোজ করা হয়েছিলো তাঁদের সাসপেণ্ড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা পরিস্থিতির কথা জেনেও ব্যবস্থা নেয়নি, তাঁদের শাস্তি চাই। এমন শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক, যাতে অন্যরা এই কাজ করতে সাহস না পায়।

তিনি নিহতদের পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি দেওয়ারও কথা ঘোষণা করেন। জানান, এঁরা প্রথম এক বছর মাসে ১০ হাজার টাকা করে পাবেন এবং পরে গ্রুপ-ডি পদে স্থায়ী চাকরি পাবেন।

তিনি মৃতদের পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকা, পুড়ে যাওয়া বাড়ি পুনর্নির্মাণের জন্য ২ লক্ষ টাকা, আহতদের চিকিৎসার জন্য ১ লক্ষ টাকা ও সামান্য আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্যও করেন।

মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে কলকাতা ফিরে যাওয়ার আগে ঘটনায় মূল অভিযুক্ত রামপুরহাট-১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি আনারুল হোসেনকে আত্মসমর্পণ করার কথা বলেন।

সেইসাথে তিনি জানিয়ে দেন যে, আনারুল ইসলাম আত্মসমর্পণ না করলে তাঁকে যে কোনওভাবেই হোক গ্রেফতার করতে হবে বলে ডিজি মনোজ মালব্যকে নির্দেশ দেন।

আর এর কিছুক্ষণ পরেই জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী আনারুল হোসেনকে তারাপীঠের একটি হোটেলের সামনে থেকে গ্রেফতার করেন।