রেষারেষির ফলে ক্রমাগত বাড়তে থাকা পথ দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কড়া সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে রাজ্য সরকার। ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ মেনে গাড়ি না চালালে মিলবে কঠোর সাজা। এমনকী, খুনের মামলা পর্যন্ত দায়ের করা হবে ঘাতক বাসচালকদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বাস দুর্ঘটনায় একটি বাচ্চার মৃত্যুর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এমনটাই জানালেন রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী।
গত মঙ্গলবার সল্টলেক থেকে মায়ের সঙ্গে স্কুটিতে যাওয়ার পথে দুটো বাসের রেষারেষির জেরে রাস্তায় ছিটকে পড়ে চতুর্থ শ্রেণির দুই ছাত্র। ২১৫ নং রুটের একটি বাস পিষে দেয় আয়ুষ পাইক বলে একজন ছাত্রকে। গুরুতর আহত হয় আরেকজন। এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে আয়ুষকে মৃত ঘোষণা করা হয়। অপরজন বর্তমানে চিকিৎসাধীন।
এই ঘটনা কানে যেতেই দার্জিলিঙ থেকে মুখ্যমন্ত্রী যোগাযোগ করেন পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর সঙ্গে। দুর্ঘটনা কমাতে একটি জরুরি উচ্চস্তরীয় বৈঠক ডাকা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্নেহাশিস জানান, ১৪ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার এই বৈঠক ডাকা হবে। বৈঠকে থাকবেন নগরোন্নয়ন মন্ত্রী, পরিবহণ মন্ত্রী, রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতা পুলিশের কমিশনার। এছাড়াও উপস্থিত থাকবেন সরকারি পরিবহন নিগম, সরকারি ও বেসরকারি বাস ইউনিয়ন, অটো ইউনিয়ন, ট্রাক ইউনিয়নের কর্তারা। ডাকা হতে পারে বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারদেরকেও।
স্নেহাশিস জানান, ‘রাজ্যের সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ কর্মসূচি চলছে। তা আরও দৃঢ় করতে হবে। কলকাতা গোটা ভারতবর্ষে দুর্ঘটনাবিহীন শহরের মধ্যে ১ নম্বরে রয়েছে। রাজ্য রয়েছে ১১ নম্বরে। কিন্তু এতেও আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা চাই সম্পূর্ণ দুর্ঘটনাবিহীন বাংলা। আসন্ন বৈঠকেই রেষারেষির বিরুদ্ধে কড়া আইন আনতে চলেছে রাজ্য। ঘাতক বাসচালকের বিরুদ্ধে খুনের মামলার রুজু করা হবে। সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভের নিয়ম যারা মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে কড়া আইন আনবে পরিবহণ দফতর।’
এই প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানান, ‘যদি ২ জন চালক ঠিক করেন রেষারেষি করবেন, বা কোনও একজন চালক যদি ঠিক করে নেন ওভারটেক করবেন, সেখানে পুলিশের পক্ষে সেই বাসকে থামানো অসম্ভব। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ-বিষয়ে কর্তব্যরত পুলিশের বক্তব্য শুনতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সল্টলেকের ঘটনায় উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডাকার। পরিবহণ মন্ত্রীর নেতৃত্বে সেই বৈঠক হবে। সেখানে রাজ্য পুলিশের প্রধান থাকবেন, পরিবহণ দফতরের আধিকারিকরাও থাকবেন বৈঠকে।’ মনে করা হচ্ছে, রাজ্য পথ দুর্ঘটনা কমাতে এবং যান চলাচলের দৌরাত্ম্য এড়াতে শীঘ্রই কঠোর আইন আনতে চলেছে। বিধানসভার এই শীতকালীন অধিবেশনেই এই ব্যাপারে বিল পাশ করানো হবে কিনা, সেই নিয়েও জল্পনা হচ্ছে।