• facebook
  • twitter
Wednesday, 30 October, 2024

মােদিতে মমতা নেই মুকুলের

কী ধরনের শব্দবন্ধে মুকুল রায়ের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনকে অভিহিত করা হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোরদার জল্পনা শুরু হয়ে যায় শুক্রবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে।

মুকুল রায় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (File Photo: IANS)

ঠিক কী ধরনের শব্দবন্ধে মুকুল রায়ের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনকে অভিহিত করা হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোরদার জল্পনা শুরু হয়ে যায় শুক্রবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। পদ্মে পাপড়ি ঝরছে, জোড়া ফুলে ফুটল মুকুল , বিজেপিতে মােহভঙ্গ মুকুল ঘরে ফিরল-এভাবে বাছাই করা শব্দবন্ধে মুকুলকে স্বাগত জানায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কর্মীরা।

৩ বছর ৯ মাস নেহাতই কম সময় নয়। এর মধ্যে মুকুল রায়কে অনেক অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছে। তার রাজনৈতিক জীবনে এসেছে অনেক চড়াই উতরাই। একটা সময় যিনি অনেক প্রতিকূল পরিবেশকে হেলায় অনুকুলে নিয়ে এসেছিলেন সেই মুকুল রায় যিনি এক সময়ের তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ডকে তাঁকেও দল ছাড়তে হয়।

তৃণমূলের সঙ্গে যখন মুকুলের দুরত্ব গজ, ইঞ্চি, ফুট ছাড়িয়ে কিলােমিটার হতে চলেছে তখনও নিজেকে তৈরি করছেন মুকুল আগামীর কথা ভেবে। বাঘের নখ উপড়ে দিতে পারি এমনও শব্দবন্ধে মুকুল রায়কে কটাক্ষ করে বলা হয়েছিল। পাল্টা দিয়েছিলেন মুকুল রায়ও।

তবে কখনই তৃণমূল সুপ্রিমাে তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে কটু কথা বলেননি তিনি। তৃণমূলে তিনি ছিলেন ক্রাইসিস ম্যানেজার। একটা সময় তাকে যখন তৃণমূল ছয় সাসপেন্ড করেছিল সেদিন তিনি নির্লিপ্ত ছিলেন। কারণ তৃণমূল গড়ার পিছনে তার অবদান কোনও অংশে কম নয়।

তবে শাসক দলের সঙ্গে তাঁর দুরত্বের সময় তৃণমূল সুপ্রিমাে বলেছিলেন, মুকুলকে বড় দায়িত্ব দিয়েছি। সেই বড় দায়িত্ব মুকুল রায় এই তিন বছর নয় মাসে পালন করলেন কিনা তা নিয়েও জল্পনা বাড়ছে। আসলে মুকুল রায় হলেন, সেই জাতের নেতা যাঁকে ঠিকমতাে করে কাজে লাগালে ভালাে ফল অবশ্যম্ভাবী। সেটা আর কেউ না জানুক তৃণমূল সুপ্রিমাের তা অজানা নয়।

কিন্তু সেই মুকুল যখন জোড়া ফুল ছেড়ে পদ্মে শােভিত হলেন তখন অনেকেই ভেবেছিলেন মুকুল ফুরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ফুরিয়ে যাওয়া তাে দূরের কথা ২০১৯ এর লােকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির ১৮ টি আসন পাওয়ার অন্যতম মূল কারিগর মুকুল রায় একথা প্রকাশ্যেই বলেছেন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।

কিন্তু সেই মুকুল রায় প্রায় চার বছর ধরে বিজেপিতে থাকলেও তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ টুকুও করা হয়নি। কিন্তু তার হাত ধরে বিজেপিতে আসা অনেকেই এখন সাংসদ। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে মুকুল রায়ের গুরুত্ব বৃদ্ধি হয়ে এমনটাই ভেবেছিলেন তার অনুগামীরা।

কিন্তু দিনের পর দিন যায় মুকুল রায়ের সেই অর্থে কোনও পদপ্রাপ্তি হয়নি।সবচেয়ে আশ্চর্যের বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে মুকুল রায়ের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে তাকে বিধানসভা নির্বাচনে লড়ার জন্য বলা হয়। মুকুলও সেই পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ। যিনি ভেবেছিলেন বাংলার বিধানসভা নির্বাচন পরিচালনা করবেন কিন্তু তাকে রীতিমতাে গুরুত্বহীন করে দেওয়া হয়।

তখন থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে মুকুল রায়ের বিজেপিতে গিয়ে কি লাভ হল? আসলে খারাপ সময় মাথা নিচু করে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়। সেই সহনশীলতা এবং ক্ষুরধার রাজনৈতিক বুদ্ধি মুকুল রায়কে জনপ্রিয় করে তুলেছে শুধু বাংলা নয় দেশের রাজনৈতিক মহলে। একটা সময় মুকুল রায় বলেছিলেন যুদ্ধক্ষেত্রে যদি মরতে হয় ব্রিগেডিয়ার মতাে মরব। সাধারণ সৈনিকের মতাে নয়।

তার প্রাক্তন দল তৃণমূল কংগ্রেসকে উদ্দেশ্য করে তিনি একথা বলেছিলেন। সাধারণত তিনি নীরব থাকাকে শ্রেয় মনে করেন। কিন্তু যদি তাকে উদ্দেশ্য করে কেউ কটাক্ষ ছুঁড়ে দেন তার পাল্টা তাঁকে কিছু বলতে হয়।

মুকুল রায় একদিন বলেছিলেন, এতদিন অন্যকে কৃষ্ণ সাজিয়েছি এবার নিজেকে একটু কৃষ্ণ সাজতে ইচ্ছে করছে। এই কথাগুলি নেহাতই কথার কথা নয়। আসলে তাঁর পারদর্শিতাই তাঁকে রাজ্য রাজনীতিতে চাণক্যের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে।

যে মুকুলকে একদিন ভাগ মুকুল ভাগ বলে বিজেপি অভিহিত করেছিল সেই মুকুলের সাথে এই কয়েক বছরে বিজেপির রসায়ন ঠিক জমল না। আসলে বিজেপি ধরে নিয়েছিল মুকুল কেউ নন বাংলায় ক্ষমতায় আসাটা বিজেপির সময়ের অপেক্ষা ছাড়া আর অন্য কিছু নয়।

সে কারণে বিজেপি ক্ষমতায় এলে কারা কারা মুখ্যমন্ত্রী হবেন তার জন্য তদ্বিরও শুরু হয়েছিল। রথ ভাবে আমি দেব, পথ ভাবে আমি, মুর্তি ভাবে আমি দেব হাসে অন্তর্যামী’ মুকুল রায় মনে মনে বােধহয় এটাই ভাবছিলেন।

আসলে বাংলার মন বুঝতে ব্যর্থ মােদি- অমিত শাহরা। ঠিক কি কারণে মুকুলের বুদ্ধিমত্তা এবং তার কৌশলকে বিজেপি কাজে লাগালাে না সেটাই বিস্ময়ের। কিন্তু তৃণমূল সুপ্রিমাে বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বলেছিলেন মুকুল ততটা খারাপ নন তার এই মন্তব্যের পিছনে রয়েছে রাজনীতির আলাে-ছায়া।

সেদিন এই মন্তব্যের মর্মার্থ কে কেমন ভাবে নিয়েছিল তা নিয়ে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কিন্তু মুকুল রায় সেই আগের মতােই নির্লিপ্ত। অনেক দিন পরে ফের তৃণমূল ভবনে ফিরলেন তিনি। অথচ এই সেই তৃণমূল ভবন যেখানে মুকুল রায় থাকা মানে দলীয় নেতা কর্মীদের ভিড় উপচে পড়া।

এদিন তৃণমূল ভবনে ঢােকার সময় মুকুল রায় নস্টালজিক হয়ে পড়েছিলেন। যদিও তিনি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছেন এদিন আবেগ সংযত রাখার। যদিও সেই চেষ্টা শেষ পর্যন্ত কিছুটা আলগা হয়ে যায়। তবে মুকুল রায় আগের থেকে এখন অনেক বেশি পরিণত ফলে তিনি এমন কিছু বলবেন না যা নিয়ে বিতর্ক হয়। বিজেপিতে ভালাে লাগছিল না সে কারণেই তিনি এই দল ত্যাগ করলেন।

এদিন স্পষ্ট ভাষায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুকুল রায় একথা বলেন। মুকুল রায় তার রাজনৈতিক জীবনের তৃতীয় ইনিংস শুর করলেন। নিশ্চয়ই আগামীর কথা ভেবে তৃণমূল সুপ্রিমাে তাঁকে বৃহত্তর এমন কোনও দায়িত্ব দেবেন যা আগামী দিনে তৃণমূল কংগ্রেসকে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে আরও বেশি করে বিকশিত করবে।

অনেকে বলছেন বিজেপির বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেবেন মুকুল। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন তার ছেলে শুভ্রাংশু। মুকুলকে রাজ্যসভায় পাঠাতে পারেন মমতা। এরকম অনেক প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে শাসক দলের অন্দরে।

কিন্তু মুকুল সেই আগের মতােই নিশ্চুপ কারণ এ রাজনৈতিক নেতা প্রায় একটা কথাই বলেন, ত্রিজে থাকলে রান আসবে। একদিন যে তৃণমূল মুকুলের প্রতি মমতা হারিয়ে ফেলেছিল বর্তমানে সময়ের সারণি বেয়ে সেই মুকুল বিজেপিতে তিন বছরের বেশি সময় প্রস্ফুটিত হয়ে দল ত্যাগ করার সময় বললেন বিজেপির প্রতি তার আর ভালাে লাগা নেই। তার মানে এই দাঁড়ায় মােদি-অমিত শাহের প্রতি মুকুলের আর মমতা নেই।