এতদিন পর্যন্ত ঢাকীরা লােকপ্রসার শিল্পী হিসেবে ভাতা পেলেও, তা পেতেন না পুজোর পুরােহিতরা। তবে একুশের বিধানসভা ভােটের ঢাকে কাঠি পড়তে না পড়তেই শিকে ছিড়ল পুরােহিতদের ভাগ্যেও। এবার থেকে পুরােহিতরাও প্রতি মাসে হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। একই সঙ্গে তাদের মাথা গোঁজার ঠাইও মিলবে বাংলার বাড়ি প্রকল্পে।
ইতিমধ্যেই প্রায় আট হাজার পুরােহিতের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পুজোর মাস থেকেই যাতে পুরােহিতরা ভাতা পান, সেজন্য সােমবার রাজ্যের মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা ভােটের আগে পুরােহিতদের জন্য দরাজহত হয়ে এবার মাস্টারস্ট্রোক দিলেন মমতা। যদিও এই পুরােহিতভাতা নিয়ে বিজেপি নেতা রাহুল সিন্হার কটাক্ষ। এতাে মরণকালে হরিনাম। আয়ু তাে মােটে ছয় মাস। এতদিন পুরােহিতদের কথা মনে পড়েনি। এখন বিদায়কালে দরাজ হয়ে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সােমবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্যে সনাতন ব্রাহ্মণদের মাসে হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। কতজন পুরােহিত আছেন সেকথা জানা নেই। তাদের আর্থিক অবস্থা কীরকম, সেই তথ্যও এখনও সম্পূর্ণভাবে পাওয়া যায়নি। তবে এখনও পর্যন্ত আট হাজার জনের মতাে দুস্থ সনাতন ব্রাহ্মণদের তালিকা তৈরি হয়েছে আবেদনের ভিত্তিতে। যাদের বাংলার বাড়ি প্রকল্পে বিনামূল্যে বাড়ি দেওয়া হবে।
এদিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এর আগে সনাতন ব্রাহ্মণদের জন্য আকাদেমি গড়তে কোলাঘাটে জমি দিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যে অনেক দুস্থ পুরােহিত আছেন। তাঁদের জন্য মাসে হাজার টাকা করে ভাতা এবং রাজ্য সরকারের গৃহনির্মাণ প্রকল্পে (বাংলার বাড়ি) বিনামূল্যে বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত রাজ্যে ইমাম-মােয়াজ্জেম ভাতা চালু থাকলেও পুরােহিতদের জন্য কেন সেই সুবিধে দেওয়া হবে না, তা নিয়ে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে তােষণের রাজনীতির অভিযােগ করে এসেছে বিরােধীরা। তৃণমূল সরকারকে হিন্দু বিরােধী বলে প্রতিপন্ন করতে চায় বিজেপি। বিশেষ করে সম্প্রতি অযােধ্যায় ভূমিপুজোর দিন রাজ্যে লকডাউন ডাকার ইস্যু নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হিন্দুত্ব বিরােধী’ ইমেজকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করছে রাজ্য বিজেপি। কিন্তু সােমবার পুরােহিতভাতা দিয়ে মমতার ঘােষণা একটা মাস্টারস্ট্রোক হয়ে উঠল।
তবে মমতা এদিন শুধু পুরােহিতভাতার কথা বলেই ক্ষান্ত থাকেননি মমতা। একই সঙ্গে মমতার ঘােষণা, রাজ্যে সনাতনী ধর্মের তীর্থস্থান তৈরি করা হবে। জীর্ণ মন্দিরগুলি সংস্কার করা হবে। বিষ্ণুপুর মিউজিয়ামে থাকা সংস্কৃত নথি ডিজিটাল ফরম্যাটে পুনরুদ্ধার করা হবে। তালপাতা কিংবা তুলোটে কাগজের ওপর লেখা লুপ্তপ্রায় পুঁথিগুলি নতুন জীবন পাবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পদক্ষেপকে কটাক্ষ করে বিজেপি কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিন্হা বলেন, জয় শ্রীরাম নিয়ে যিনি রেগে যেতেন, তিনিই এখন রামায়ণ, মহাভারত, বৈষ্ণব পদাবলী নিয়ে মেতে উঠেছেন। পুরােহিতভাতা থেকে শুরু করে মন্দির সংস্কার ইত্যাদি পদক্ষেপকে মমতার হিন্দুত্বের ঢাক পেটানাে হিসেবেই দেখছেন মমতা। যা বিধানসভা নির্বাচনেই ফেঁসে যাবে বলে মনে করছেন রাহুল সিন্হা।